কেঁচো খুড়তে গিয়ে কেউটে ধরে ফেলল পুলিশ।
কসবার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে দু’কোটি টাকার জালিয়াতির অভিযোগ পেয়েছিল পুলিশ। সেই ঘটনায় নজরদারি চালাতে গিয়ে চার কোটি টাকার ব্যাঙ্ক জালিয়াতি আটকে দিলেন গোয়েন্দারা। গ্রেফতার করা হয়েছে এক চিকিৎসক-সহ চার জনকে। ধৃত চিকিৎসক কসবার ঘটনাতেও মূল অভিযুক্ত।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ জানান, অভিযুক্ত চিকিৎসকের নাম সৌমাভ দাশগুপ্ত। বাড়ি সোনারপুরের সুভাষগ্রামে। তিনি বিভিন্ন হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত। ধৃত অন্য তিন জন উৎপল রায়, মোহনলাল অগ্রবাল ও সুরজিৎ আদিত্য। উৎপল ও মোহন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। সৌমাভ ও উৎপলকে এ দিন আদালতে তোলা হয়। তাঁদের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হাজতে রাখাক নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
পুলিশি সূত্রের খবর, উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুরে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের জন্য ডাক্তারি সরঞ্জাম কেনা হবে, এই কারণ দেখিয়ে লায়ন্স রেঞ্জের পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে পাঁচ কোটি টাকা ঋণের আবেদন জানান সৌমাভ। আবেদনপত্রে নিজেকে তিনি সমীর দাশগুপ্ত বলে পরিচয় দিয়েছিলেন।
২৪ অগস্ট ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষ চার কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করেন। টাকা পাঠানো হয় সল্টলেকের বিডি ব্লকের একটি সংস্থার দু’টি অ্যকাউন্টে (একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আলিপুর শাখায়, অন্যটি একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের সল্টলেক শাখায়)। ওই দিনই ‘নেট ব্যাঙ্কিং’-এর সাহায্যে ওই টাকা পাঁচটি ব্যাঙ্কের অন্তত ১০টি অ্যাকাউন্টে সরিয়ে ফেলা হয়। চার কোটি টাকার মধ্যে প্রায় এক কোটি টাকা যায় শেক্সপিয়র সরণির একটি ব্যাঙ্কের শাখায়। সেখান থেকে ২২ লক্ষ টাকা পাঠানো হয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কসবা শাখার একটি অ্যাকাউন্টে। সেটির উপরেই নজরদারি চালাচ্ছিল লালবাজারের ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখা।
লালবাজারের অফিসারেরা বলছেন, ব্যাঙ্কের যে-অ্যাকাউন্ট নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, সেখানে টাকা এল কোথা থেকে, সেই সূত্র ধরে খোঁজখবর শুরু হয়। একের পর এক অ্যাকাউন্ট হাতড়ে শেষে ঋণের জন্য আবেদনকারী সমীর দাশগুপ্তের খোঁজ মেলে। তার পরেই তাজ্জব বনে যান গোয়েন্দারা। দেখা যায়, কসবার ব্যাঙ্ক জালিয়াতিতে অভিযুক্ত সৌমাভ এবং লায়ন্স রেঞ্জের সমীর দাশগুপ্ত একই লোক! তাঁর কয়েক জন শাগরেদেরও খোঁজ পায় পুলিশ। সঙ্গে সঙ্গে ওই চার কোটি টাকা যে-সব অ্যাকাউন্টে গিয়েছিল, সেগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু তার আগেই প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা তুলে নেওয়া হয়। পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে মনোহরপুকুর থেকে গ্রেফতার করা হয় সৌমাভকে। গভীর রাতে উৎপল রায়কে পাকড়াও করা হয় বিধাননগরে। এ দিন সকালে ধরা পড়েন বাকি দু’জন। সুরজিতের সংস্থা থেকেই সরঞ্জাম কেনা হবে বলে জালিয়াতির ছক কষেছিলেন সৌমাভ। |