মাত্র ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে বিদেশি প্রধানমন্ত্রীর আসা-যাওয়া, একটি বিদেশি বিমানের জরুরি অবতরণ এবং প্রধান রানওয়েতে গর্ত। হিমশিম খেলেন নিরাপত্তারক্ষী এবং বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষ। এই তিন কারণে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত প্রায় নাভিশ্বাস উঠে যাওয়ার জোগাড় হয়েছিল তাঁদের। বিকেলে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। কৈখালি থেকে যানজটের ফলে বেশ কিছু যাত্রী উড়ান ধরতে পারেননি। এমনকী পাইলট, বিমানসেবিকারাও দেরি করে পৌঁছেছেন।
সকাল ১০টা নাগাদ ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লিয়ন চেন জিগমি থিনলে দলবল নিয়ে পারো থেকে ড্রুক সংস্থার বিমানে কলকাতায় এসে নামেন। তখনও সব ঠিকঠাকই ছিল। দুপুর ১২টার একটু পরে ইনডিগোর উড়ানে অন্য যাত্রীদের সঙ্গেই ভুবনেশ্বর যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। প্রধানমন্ত্রী কলকাতায় নেমে বিমানবন্দরেই অপেক্ষা করতে থাকেন। আঁটোসাঁটো নিরাপত্তায়।
সাড়ে ১০টা নাগাদ আচমকাই দেখা যায়, প্রধান রানওয়েতে ছোট একটি গর্ত! ওই অবস্থায় বিমানের ওঠানামা করা রীতিমতো ঝুঁকির। তাই বন্ধ করে দেওয়া হয় সেই রানওয়ে। দ্বিতীয় রানওয়ে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে নিয়ে তুলনায় ছোট রানওয়ে দিয়ে ওঠানামা করাটা প্রোটোকল-বিরোধী। সওয়া ১২টায় থিনলে-র ওড়ার কথা। তার আগেই তাই সারিয়ে ফেলতে হবে রানওয়ে। যুদ্ধকালীন প্রস্তুতিতে শুরু হয়ে যায় গর্ত সারানোর কাজ।
ইরানের মহান এয়ারলাইন্সের যে-উড়ান নিয়মিত ব্যাঙ্কক থেকে তেহরান যায়, সেটি প্রতিদিনই কলকাতায় নামে তেল ভরতে। এ দিনও তার নামার কথা ছিল। কিন্তু কলকাতা থেকে সেই বিমান যখন ৫৫ মাইল দক্ষিণে, তখন পাইলট বিমানবন্দরকে জানান, তেল ফুরিয়ে এসেছে। তাঁকে জরুরি অবতরণ করার অনুমতি দেওয়া হোক। তখনও দ্বিতীয় রানওয়ে থেকে বিমান ওঠানামা করছে। তুলনায় ছোট সেই রানওয়েতে কী ভাবে মহানের বিমানের জরুরি অবতরণের ব্যবস্থা হবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান বিমানবন্দরের অফিসারেরা। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, ১২টা ৫ মিনিটে প্রধান রানওয়ে ফের চালু করার পরে সওয়া ১২টায় ২১৪ জন যাত্রী নিয়ে সেখানেই নির্বিঘ্নে নামে ওই বিমান। সওয়া ১২টার পরিবর্তে সাড়ে ১২টা নাগাদ ভুটানের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ওই রানওয়ে থেকেই ইনডিগোর বিমান ভুবনেশ্বর উড়ে যায়।
বিকেল পৌনে ৫টায় শুরু হয় ব্যাপক যানজট। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন, ভিআইপি রোড থেকে বারাসতমুখী গাড়িগুলি সন্ধ্যায় আর বিমানবন্দরের ভিতরের রাস্তা ব্যবহার করতে পারবে না। কিন্তু ঘোষণাই সার। কাজের কাজ কিছু হয়নি। পুলিশি সূত্রের খবর, বিরাটি পর্যন্ত যশোহর রোডের অবস্থা এতই খারাপ যে, গাড়ির গতি অনেক কমে গিয়েছে। ফলে আটকে পড়ছে গাড়ি। ভিআইপি রোডের মুখ থেকে বিমানবন্দরে পৌঁছতে সময় লাগছে এক ঘণ্টারও বেশি!
সন্ধ্যায় কলকাতা থেকে চেন্নাই যাওয়ার কথা ছিল অনির্বাণ বসুর। তিনি উড়ালপুল থেকেই যানজটে আটকে যান। সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটের উড়ান ধরতে তিনি বিমানবন্দরে পৌঁছন ৫টা ১৫ মিনিটে। চেন্নাইয়ে পৌঁছে তিনি বলেন, “কৈখালিতেই ৪০ মিনিট আটকে ছিলাম। বাধ্য হয়ে ব্যাগ নিয়ে নেমে কৈখালি থেকে হেঁটে বিমানবন্দরে পৌঁছই।” তিনি জানান, বিমানে ওঠার পরেও বেশ কিছু ক্ষণ বসে থাকতে হয়। কারণ, সেই বিমানের পাইলটও সময়মতো পৌঁছতে পারেননি! |