দু’বছর আগে কেন্দ্রীয় সরকার তাদের তিনটি চটকলের পুনরুজ্জীবনে ১২০০ কোটি টাকার ‘প্যাকেজ’ দিয়েছে। তার মধ্যে দু’টি চটকল রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। বৃহস্পতিবার সেই দু’টি চটকলেরই ‘রুগ্ণতা কাটাতে’ রাজ্য সরকার মোট ৪৫ কোটি টাকার ‘প্যাকেজ’ ঘোষণা করেছে। এই নিয়ে শিল্প ও শ্রমিকমহলে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
এ দিন মহাকরণে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, খড়দহ জুটমিল ও কিনিসন জুটমিল ১৯৯৩ সাল থেকে বন্ধ। মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রাজ্যের ‘রিলিফ আন্ডারটেকিং আইন’ অনুসারে পুনরুজ্জীবনের জন্য খড়দহ জুটমিলকে ২৭ কোটি এবং কিনিসন জুটমিলকে ১৮ কোটি টাকা দেওয়া হবে। পরে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানান, এই আর্থিক সাহায্য পেয়ে চটকল দু’টি ছ’মাসের মধ্যে রুগ্ণতা কাটিয়ে উঠবে বলে আশা করছে সরকার।
এই খবর জানাজানি হতেই রাজ্যের চটশিল্পে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে। বিরোধী নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, বিভিন্ন বাম ও অ-বাম শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্ব এবং শিল্পপতিরা নানান প্রশ্ন তোলেন। সূর্যবাবুর প্রশ্ন, “রুগ্ণতা কাটানোর জন্য কারখানাকে ৪৫ কোটি, আর এক জন ধর্ষিতাকে ৩০ হাজার টাকা দিচ্ছে রাজ্য সরকার। কী ভাবে?” তিনি আরও বলেন, “কী ভাবে কারখানাকে টাকা দেওয়া হবে, কী শর্তে দেওয়া হবে কিছুই জানানো হয়নি। গোটা ব্যাপারটাই খুব অস্বচ্ছ।”
আইএনটিইউসি, সিটু, এআইটিইউসি, বিএমএস-সহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের প্রশ্ন, কেন্দ্রীয় চটকলকে রাজ্য সরকার আর্থিক সাহায্য দেবে কী ভাবে? এআইটিইউসি-র দেবাশিস দত্ত প্রশ্ন করেন, “রিলিফ আন্ডারটেকিংয়ের জন্য কোনও কারখানা বা বাণিজ্যিক সংস্থার কর্তৃপক্ষ আবেদন জানালে তবেই বিচার-বিবেচনার পরে রাজ্য সরকার এই সুবিধা দেয়। ওই দু’টি চটকল কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রকের অধীন। ওই মন্ত্রক কি রাজ্য সরকারের কাছে আর্থিক সাহায্য চেয়েছিল?” আইএনটিইউসি-র গণেশ সরকারও বিভ্রান্ত। তিনি বলেন, “রাজ্যের টাকা কেন্দ্র কী ভাবে নেবে, আমার মাথায় ঢুকছে না। মুখ্যমন্ত্রী যদি বুঝিয়ে বলেন কী ভাবে কোন পদ্ধতিতে কাকে টাকাটা দেবেন, তা হলে শ্রমিকেরা বুঝতে পারে।”
২০১০ সালের ১৯ মার্চ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেয়, ন্যাশনাল জুট ম্যানুফ্যাকচার কর্পোরেশন বা এনজেএমসি-র বন্ধ ছ’টি চটকলের মধ্যে তিনটির পুনরুজ্জীবন ঘটানো হবে। তার মধ্যে আরবিএইচএম জুটমিল বিহারের কাটিহারে এবং বাকি দু’টি চটকল পশ্চিমবঙ্গে। ছ’টি চটকলের মোট ১৭ হাজার কর্মীকে স্বেচ্ছাবসর দেওয়ার জন্য বস্ত্র মন্ত্রক ১০৬৭ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা খরচ করে। এ ছাড়া তিনটি চটকলের পুনরুজ্জীবনের জন্য মোট ১২০০ কোটি টাকার প্যাকেজ দেওয়া হয়। অর্থাৎ গড়ে প্রতিটি চটকল ৪০০ কোটি টাকা পেয়েছে বলে কলকাতায় জুট কমিশনারের দফতর সূত্রের খবর।
এ রাজ্যের দু’টি চটকলে জুট কমিশনারের দফতরের পক্ষ থেকে জুট কর্পোরেশনের উপদেষ্টা রমেশচন্দ্র তিওয়ারিকে বিশেষ অফিসার হিসেবে বসানো হয়েছে সেই ২০১০ সালেই। এত সবের পরে কোন যুক্তিতে রাজ্য সরকার ওই দু’টি চটকলকে টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল, সংশ্লিষ্ট কেউই তা বুঝতে পারছেন না।
কী বলছে রাজ্য সরকার? রাজ্যের যুক্তি, ওই চটকলগুলিকে বিআইএফআর থেকে উদ্ধার করেছে কেন্দ্রীয় সরকারই। তার পরে কেন্দ্রের তরফে রাজ্যকে অনুরোধ করা হয়, এগুলির পুনরুজ্জীবনে তারা যেন সহায়তা করে। সেই অনুরোধ অনুসারেই এই সহযোগিতা করা হচ্ছে। |