শিক্ষক আছেন। রয়েছে পড়ুয়ারাও। স্কুলে পঠনপাঠনও নিয়মিত। কিন্তু স্কুলের ভগ্নদশায় উদ্বিগ্ন শিক্ষক থেকে পড়ুয়ারা। দাবি, যে কোনও সময়ে মাথায় ছাদ ভেঙে পড়তে পারে, এই আশঙ্কায় অধিকাংশ দিন স্কুল বসে গাছতলাতেই।
ইসিএলের বনজেমাহারি কোলিয়ারি আবাসন এলাকায় ওই স্কুলটি ইসিএলের স্থানীয় শ্রমিক-কর্মীদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য তৈরি হয়। স্কুলটি ইসিএলের আর্থিক অনুদানে চলে স্কুলটি। স্কুলের দু’জন শিক্ষককে মাসিক পাঁচ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদানও দেন ইসিএল কর্তৃপক্ষ। স্কুলের প্রধান শিক্ষক লক্ষ্মিকান্ত প্রসাদ জানান, অন্তত ১৭৬ জন পড়ুয়া রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ শেষ করে এখানকার ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন সরকার অনুমোদিত স্কুলে প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারে।
লক্ষ্মীকান্তবাবুর দাবি, “প্রায় চল্লিশ বছর ধরে স্কুলটি চলছে। স্কুল শুরুর সময়ে যে ভবনটি কর্তৃপক্ষ বানিয়েছিলেন এখনও সেখানেই পঠন-পাঠন হয়। ভবনটি দশা এখন এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছে যে ভয়ে ছাত্রছাত্রীরা সেখানে বসতে চায় না।” তিনি দাবি করেন, অনেক বার ইসিএল কর্তৃপক্ষের কাছে ভবনটি সংস্কার করার আবেদন জানানো হয়েছে। কোনও লাভ হয়নি। |
আইএনটিটিইউসি-র তরফে স্কুলের ভবন সংস্কারের দাবি জানিয়ে সালানপুর এরিয়া কার্যালয়ে বিক্ষোভও দেখানো হয়। স্থানীয় বিধায়কের কাছেও তাঁরা এ বিষয়ে উদ্যোগী হওয়ার আবেদন জানিয়েছে তারা। আইএনটিটিইউসির নেতা পাপ্পু উপাধ্যায় দাবি করেন, তাঁদের আন্দোলনের পরেই এরিয়ার আধিকারিক পর্যায়ে একাধিক রদবদল হয়েছে। ফলে মাঝপথে থমকে গিয়েছে আন্দোলন। তাঁরা আবার স্কুল ভবনটি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামবেন।
সম্প্রতি ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, স্কুল ভবনের বাইরে বসে পড়াশোনা করছে ছাত্রছাত্রীরা। ভবনটির ছাদ থেকে খসে পড়ছে পলেস্তরা। দেওয়াল বেয়ে গজিয়ে উঠেছে আগাছা। স্যাঁতসেঁতে দেওয়াল দেখে মনে হয়, তা যে কোনও সময় ভেঙে পড়বে। মেঝের পলেস্তরা উঠে গিয়ে মাটি বেরিয়ে পড়েছে। গ্রীষ্মের চড়া রোদ ও বৃষ্টি উপেক্ষা না করা গেলে ভবনে বসেই পাঠ নিতে বাধ্য হয় পড়ুয়ারা। চতুর্থ শ্রেণির দিব্য প্রসাদ বলে, “ছাদ ও দেওয়ালের সিমেন্ট বালি মাঝেমধ্যেই গায়ে-মাথায় এসে পড়ে।” তৃতীয় শ্রেণির চন্দা কুমারীর কথায়, “মেঝেতে পলেস্তরা নেই। ভিজে মাটিতে চট বিছিয়ে আমরা পড়াশোনা করি।”
স্কুল ভবনটির ভগ্নদশায় চিন্তিত অভিভাবকেরাও। বনজেমাহারি কোলিয়ারির শ্রমিক সীতারাম রজকের দাবি, “এই তল্লাটে আর কোনও স্কুল নেই। প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে একটি সরকার অনুমোদিত প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। কিন্তু আবাসনে বসবাসকারী শ্রমিক-কর্মীরা অত দূরের স্কুলে ছেলেমেয়েদের পাঠাতে সাহস পান না। বাধ্য হয়ে ওই স্কুলেই পাঠাতে হয়।” অভিভাবকদের দাবি, যৌথভাবে বহু বার স্কুলটি সংস্কারের আবেদন জানানো হয়েছে। কোনও লাভ হয়নি। বিষয়টি স্থানীয় বিধায়ককেও জানিয়েছেন বলে দাবি করেন তাঁরা।”
স্কুল ভবনটির এই দুর্দশার কথা জানেন বারাবনির বিধায়ক বিধান উপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমি ইসিএল কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলব। ওঁরা সংস্কার না করলে আমি বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের টাকায় সংস্কার করব।”
ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। ওই এলাকার বিধায়কের মাধ্যমে সঠিক পদ্ধতিতে আবেদন এলে সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আর্থিক সহায়তা করা হবে।” |