অবরোধ-উত্তেজনা বালুরঘাটে
পুলিশ লাইন থেকে উদ্ধার কিশোরীর ক্ষতবিক্ষত দেহ
ক কিশোরীর ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হল বালুরঘাটে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পুলিশ লাইনের ভিতর থেকে। রূপা সোরেন (১৩) নামে আদিবাসী ওই কিশোরী স্থানীয় তারণচন্দ্র হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। সেই তার পরিবারের প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। খুব দরিদ্র পরিবারের সন্তান ওই কিশোরী সকালে পুলিশ লাইনের ভিতর থেকে পাতা কুড়োতে যেত। রূপার বাড়ির লোকের দাবি, বুধবার সকালেও সেখানেই গিয়েছিল সে। দুপুরে তার দেহ মেলে।
তারপর থেকেই শহরে তা নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায়। শহরের বাসিন্দাদের বক্তব্য, কী করে ওই কিশোরী মারা গেল, তা পুলিশ লুকোনোর চেষ্টা করছে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জ্যাকলিন দর্জি বলেন, “সম্ভবত বাইরে থেকে খুন করে ওই কিশোরীর দেহ পাঁচিল টপকে ভিতরে ফেলা হয়।” কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা সে কথা মানতে চাননি। রূপার মা রেণুকা সোরেন বলেন, “পুলিশ লাইনের পাঁচিল বেশ উঁচু। রাতে বন্ধ থাকে সব গেট। বাইরের লোক খুন করে পাঁচিলের উপর দিয়ে দেহ ফেলবে কী করে? তা ছাড়া ওর মুখে ইট চাপা দেওয়া ছিল। সেটাও সেক্ষেত্রে সম্ভব নয়। তাই বাইরের লোক হতে পারে না। পুলিশ লাইনের মধ্যেই আমার মেয়ের উপরে অত্যাচার করে খুন করা হয়েছে।”
বালুরঘাট পুলিশ লাইনের সামনের রাস্তায় বিক্ষোভ। ছবি: অমিত মোহান্ত।
ওই কিশোরীর মৃত্যুতে পুলিশকেই দায়ী করে দুপুর থেকেই পুলিশ লাইনের সামনে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে ইট-ঢিল ছুড়তে থাকে ক্ষিপ্ত জনতা। তাতে এনবিএসটিসির এক চালকের মাথা ফেটে যায়। তখন ঘটনাস্থলে গিয়ে বালুরঘাট থানার আইসি মনোজ চক্রবর্তী ‘একজনকে ধরা হয়েছে’ বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু, প্রকৃত দোষীদের আড়াল করতে তিনি ‘মিথ্যা’ বলছেন অভিযোগে মনোজবাবুকে ধরে বেধড়ক কিল-চড়-ঘুঁসি মারে জনতা। বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারপার্সন তথা আরএসপি নেত্রী সুচেতা বিশ্বাস গিয়ে আইসিকে উদ্ধার করে অন্যত্র সরিয়ে দেন। এর পরেই আইসি ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যান। রাত পর্যন্ত এলাকায় বিক্ষোভ-অবরোধ চলছে। রাত পৌনে ৯টা নাগাদ পুলিশ লাঠি চালালে অবরোধকারীদের অন্তত ৩০ জন জখম হয়েছেন। তবুও পরিস্থিতি পুরোপুরি আয়ত্তে আসেনি। দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা পরিষদের সভাধিপতি সিপিএমের মাগদালিনা মুর্মু বলেন, “যে ভাবে দেহটি পড়েছিল, তাতে তা বাইরে থেকে ছুড়ে ফেলা হয়েছে, এমন হতেই পারে না।” ওই এলাকার কাউন্সিলর আরএসপির সুপ্তা বর্মনের প্রশ্ন, “পুলিশ লাইন লাগোয়া এলাকাতেই জেলা জজ, পুলিশ সুপার এবং জেলাশাসকের বাংলো। তাই সবসময় পুলিশ পাহারা থাকে। তাই ওই কিশোরীকে খুন করে দেহটি ভিতরে ফেলার মতো দুঃসাহস দুষ্কৃতীরা দেখাবে বলে বিশ্বাস করা যায় না।” মহিলা কংগ্রেসের জেলা সভানেত্রী মাধবী গুহ জানান, তাঁরা নিরপেক্ষ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির দাবিতে লাগাতার আন্দোলন করবেন। তৃণমূলের শহর সভাপতি অসিত রায়ের কথায়, “ঘটনায় প্রকৃত দোষীকে গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে।” তাঁর অভিযোগ, পুলিশকে তদন্ত করতে না দিয়ে বিক্ষোভ-অবরোধের নামে রাজনীতি করা হচ্ছে।
রুপার বাবা ইশপ সোরেন পেশায় রিকশাচালক। রেণুকাদেবী জানান, এই দিন সকাল ৯টা নাগাদ পুলিশ লাইনে গিয়ে মেয়ে দুপুর পর্যন্ত না-ফেরায় তিনি স্বামীকে নিয়ে থানায় গিয়েছিলেন। রেণুকা দেবী বলেন, “থানায় মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার ডায়েরি নিতে চায়নি। পুলিশ অফিসার আমাদের জানিয়ে দেন, ছবি না-থাকলে নেওয়া যাবে না। আমরা পুলিশ লাইনে একটু খোঁজাখুঁজি করতে বলেছিলাম। সে কথা পাত্তা না-দিয়ে, আমাদের পরের দিন যেতে বলেন ওই অফিসার।”
এরপরে দুপুরে কয়েকজন পাতাকুড়ানি পুলিশ লাইনের মধ্যে চালকদের ব্যারাকের পিছনের দিকে একটি নির্জন গলি মতো এলাকায় কলাপাতার উপরে একটি মেয়ের দেহ দেখতে পান। তাঁদের কাছ থেকে খবর পেয়ে লোকজন ছুটে যান। দেখা যায়, কাছেই পাতা কুড়োনোর বস্তা পড়ে রয়েছে। একটি বড় কলাপাতার উপরে পড়ে রূপার দেহ। সুচেতাদেবী বলেন, “তখন দেখা যায় রূপার মুখটা থ্যাঁতলানো। মুখের উপরে কয়েকটি ইট দেওয়া রয়েছে। চোখের অনেকটাই পিঁপড়ে খুবলে নিয়েছে।”
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জ্যাকলিন বলেন, “অভিযোগ পেয়েই ধর্ষণ ও খুনের মামলা করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পরে অনেক কিছুই স্পষ্ট হবে।” কিন্তু পুলিশ নিখোঁজ ডায়েরি নেয়নি কেন? রেণুকাদেবীদের কথা মতো পুলিশ লাইনে রূপার খোঁজই বা করা হল না কেন? জ্যাকলিন বলেন, “যতদূর জানি, নিখোঁজের ছবি আনার জন্য থানা থেকে বলা হয়েছিল। পরে মিসিং ডায়েরি করে সব থানাকে বার্তা পাঠানো হয়। তবুও বিশদে খোঁজ নেওয়া হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.