রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গে গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন প্রকল্পের কাজ করছে এনটিপিসি, এনএইচপিসি-র মতো কিছু কেন্দ্রীয় সংস্থা। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই ওই সব সংস্থা সময়মতো গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পারছে না বলে অভিযোগ। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় সংস্থার বদলে রাজ্য সরকার নিজেরাই গ্রামীণ বিদ্যুদয়নের কাজ করতে চায় বলে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে চিঠি লিখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মহাকরণ সূত্রের খবর, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে এ বিষয়ে রাজ্যকে সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হয়েছে।
রাজ্যের এক বিদ্যুৎকর্তা জানান, গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কাজ মুখ্যমন্ত্রীর অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি কয়েকটি জেলায় ওই কাজ করছে খুবই ঢিমে তালে। কর্তাটি বলেন, ‘‘বারবার তাগাদা দিয়েও বিশেষ লাভ হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী তাই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে ওই জেলাগুলিতে বিদ্যুদয়নের দায়িত্ব রাজ্যের হাতেই নিতে চেয়েছিলেন।”
বিদ্যুৎ দফতর সম্প্রতি গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে সবিস্তার রিপোর্ট পাঠায় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। তাতে জানানো হয়, ২০১১-’১২ গত আর্থিক বছরে গ্রামাঞ্চলে ১৮ লক্ষেরও বেশি পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবার ১০ লক্ষ এবং এপিএল পরিবার আট লক্ষ। চলতি আর্থিক বছরেও (২০১২-’১৩) বিপিএল-এপিএল মিলিয়ে সমসংখ্যক পরিবারকে বিদ্যুৎ দেওয়া হবে বলে রিপোর্টে জানানো হয়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারেন, কিছু কিছু জেলায় বিদ্যুদয়ন প্রকল্পের কাজ ভাল ভাবে চললেও কয়েকটি জেলায় কাজ একেবারেই এগোচ্ছে না। তিনি চিঠি লেখেন প্রধানমন্ত্রীকে। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ দফতরকে নির্দেশ দেন, পিছিয়ে থাকা জেলাগুলিতে বিদ্যুদয়ন প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে।
কেন্দ্রীয় সংস্থা মূলত পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর দিনাজপুর, পুরুলিয়া ও মুর্শিদাবাদে গ্রামীণ বিদ্যুদয়নের কাজ করছে। তার মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরে কাজের অগ্রগতি ভালই। কিন্তু বাকি তিন জেলায় ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ কাজ বাকি। বিদ্যুৎকর্তারা দেখেছেন, কোনও গ্রামের কাছাকাছি বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতা হয়ে গেলেও পরের কাজ এগোয়নি। কোথাও বা গ্রামের ধারেকাছেই বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। অথচ রাজ্য সরকার ঠিক করছে, ২০১৪ সালের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে। এই অবস্থায় ওই তিন জেলায় কেন্দ্রীয় সংস্থার বদলে বণ্টন সংস্থাই বাড়ি বাড়ি বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কাজ করবে বলে বিদ্যুৎ দফতর সূত্রের খবর।
কেন্দ্রের রাজীব গাঁধী গ্রামীণ বিদ্যুৎ যোজনা প্রকল্পের আওতায় পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশ জুড়ে গ্রামীণ বিদ্যুদয়নের যে-কাজ চলছে, তাতে ৯০ শতাংশ অর্থ অনুদান হিসেবে দিচ্ছে কেন্দ্র। বাকি ১০ শতাংশ অর্থ স্বল্প সুদে ঋণ হিসেবে রাজ্যগুলিকে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সংস্থা ‘রুরাল ইলেকট্রিফিকেশন কর্পোরেশন’। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অনুমোদন পাওয়ার পরে রাজ্য ঠিক করেছে, ওই জেলাগুলিতে যেখানে কাজ এগিয়েও থমকে রয়েছে, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির উপরে চাপ দিয়ে চলতি পর্বের সেই কাজ শেষ করানো হবে। পরবর্তী পর্বের কাজ বণ্টন সংস্থা নিজেরাই করবে। এর জন্য যা খরচ হবে, সেটা ‘ব্যাকওয়ার্ড রিজিয়ন গ্রান্ট ফান্ড’ (বিআরজিএফ) বা অনুন্নত এলাকা অনুদান তহবিল থেকেই বরাদ্দ করা হবে। কারণ রাজ্য কাজটা করলে রাজীব গাঁধী গ্রামীণ বিদ্যুৎ যোজনা প্রকল্প থেকে অনুদান পাওয়া যাবে না।তা হলে কি রাজ্যের ঘাড়ে বাড়তি আর্থিক বোঝা চাপবে না? বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্তা বলেন, “আসলে এটা অনেকটা গঙ্গাজলে গঙ্গাপুজো করার মতো। কারণ, বিআরজিএফের টাকাও কেন্দ্রীয় অনুদান। গ্রামীণ বিদ্যুদয়নের কাজ দ্রুত শেষ করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।” |