কেবল মেয়েদের জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় হবে রাজ্যে। সেটি হবে ডায়মন্ড হারবারে। বুধবার শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই এই পরিকল্পনার কথা জানান। সেই সঙ্গে গত ১৪ মাসে শিক্ষা ক্ষেত্রে তাঁর সরকার কত কাজ করেছে, তার খতিয়ানও দেন তিনি। কাজের তালিকায় রয়েছে তিনটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গড়া, শিক্ষকদের মাসপয়লা বেতনের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। রয়েছে অলচিকি পাঠ্যক্রম তৈরি, প্রথম-তৃতীয়-পঞ্চম শ্রেণির জন্য নতুন বই প্রকাশ প্রভৃতিও।
ক্ষমতায় আসার পরে এ বারেই প্রথম শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মমতা। উপনির্বাচনের জন্য গত বছরের অনুষ্ঠানে তিনি ছিলেন না। বুধবারের অনুষ্ঠানে ১০০ জন শিক্ষককে সংবর্ধনা দিয়েছে রাজ্য সরকার। তাঁদের প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে সরকারের তরফে। সংবর্ধিত শিক্ষকদের উদ্দেশে মমতা
এ দিন বলেন, “রাজ্য সরকারের সংবর্ধনায় আপনারা কতটা সম্মানিত হলেন, জানি না। তবে আমরা এতে সম্মানিত বোধ করছি।” শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধার প্রতিফলন ঘটেছে মমতার ফেসবুক-জবানিতেও। তিনি লিখেছেন, “শিক্ষক দিবসে আমাদের এই সঙ্কল্প নেওয়া দরকার যে, আমরা শিক্ষার মূল সত্তার বিকাশ ঘটাব। শিক্ষকসমাজকে ছাড়া আমাদের অস্তিত্ব অসম্ভব। আমরা যেন তাঁদের প্রতি বিশ্বাস ও গভীর শ্রদ্ধা বজায় রাখি।” |
মুখ্যমন্ত্রী জানান, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের আংশিক সময়ের শিক্ষকদের বাড়তি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া, মাধ্যমিক ও শিশু শিক্ষা কেন্দ্রকে পঞ্চায়েত থেকে স্কুলশিক্ষা দফতরের অধীনে আনার মতো এক গুচ্ছ কাজ করেছে তাঁর সরকার। বিগত বাম সরকারকে কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বিগত ৩৫ বছরে রাজ্যে মাত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়া হয়েছে। আর আমরা এসে ইতিমধ্যেই তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ফেলেছি। ডায়মন্ড হারবারে শুধু মেয়েদের জন্যই একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার কথা ভাবা হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনাও করেছি।”
মমতা এ দিন প্রথম, তৃতীয় ও পঞ্চম শ্রেণির নতুন পাঠ্যবই প্রকাশ করেন। আগামী বছর দ্বিতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণির নতুন পাঠ্যবই প্রকাশ করা হবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। ক্ষমতায় আসার পরে নতুন সরকার যে-পাঠ্যক্রম উপদেষ্টা কমিটি তৈরি করেছিল, সেই কমিটিই এই বইগুলি প্রস্তুত করেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “প্রথম শ্রেণিতে একটিই বই পড়বে ছাত্রছাত্রীরা। এতে পাঠ্যক্রমের বোঝা চাপবে না। অথচ শিশুরা সবই শিখতে পারবে।”
নিজের বক্তব্যে এ দিন বারে বারেই ছাত্রছাত্রীদের চাপ কমানোর কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। শিশুকে সব দিকে দক্ষ করে তোলার প্রবণতার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “প্রথম শ্রেণির একটা বাচ্চাকে আমরা জোর করে বড় মানুষ করে তুলছি। নাচগান, ছবি আঁকা, সাঁতার সবই একসঙ্গে শেখানো হচ্ছে তাকে। অত ছোট একটা বাচ্চা এত চাপ কী করে নেবে!”
মুখ্যমন্ত্রীর সুরে শিক্ষামন্ত্রীও এ দিন তাঁদের ‘সাফল্য’-এর খতিয়ান দিয়েছেন। ব্রাত্যবাবু বলেন, “যে-ক’টি প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রী তার সবই পূরণ করেছেন। শিক্ষকদের মাসপয়লা বেতন তো বটেই। যে-পঞ্চাশ হাজার শিক্ষকের পেনশন নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে, তাঁদের সমস্যাও দ্রুত মিটে যাবে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা একটি মনিটরিং কমিটি তৈরি করে বিষয়টির উপরে নজর রখছি।” শিক্ষা ক্ষেত্রে ‘ই-গভর্ন্যান্স’ চালু করার পরিকল্পনা আছে বলেও জানান ব্রাত্যবাবু।
এ দিন সরকারি অনুষ্ঠান বয়কট করে বিক্ষোভ-সমাবেশ, আইন-অমান্য করে কিছু শিক্ষক সংগঠন। তাদের কেউ কেউ মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে। ওই সব সংগঠনের মধ্যে রয়েছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের আংশিক সময়ের শিক্ষক সংগঠন, স্কুলের পার্শ্বশিক্ষকদের সংগঠন, প্রাথমিক শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি’ ইত্যাদি। সব শিক্ষকের জন্য মাসপয়লা বেতন, অবসরের পরের মাসেই পেনশন, বোনাস, বেতনক্রম পুনর্বিন্যাস ইত্যাদি দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়েছিল তারা।
প্রদেশ কংগ্রেস আলাদা ভাবে শিক্ষক দিবস পালন করে। মৌলালি যুব কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, পরমাণুবিজ্ঞানী বিকাশ সিংহ, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দাদা শিক্ষাবিদ পীযূষ মুখোপাধ্যায় প্রমুখকে কংগ্রেসের তরফে সংবর্ধনা জানানো হয়। |