কলেজে যাতায়াত করা একরকম ‘বিভীষিকা’ হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাঁর কাছে।
কলেজ থেকে ফেরার সময়ে বাস থেকে নামলেই মোলাকাৎ হত তাদের সঙ্গে। দল বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকত তারা। টিপ্পনিটা শুরু হত বাস স্ট্যান্ড থেকেই। পাড়ার গলির মুখ পর্যন্ত চলত তাদের উত্যক্ত করা। কলেজ যাওয়ার সময় প্রায় রোজই এক কটূক্তি মাথায় করে বাস ধরতে যেতে হত তাকে।
সব কিছুই একটা সীমা থাকে। বুধবার বিকেলে সেটাই ভেঙে গিয়েছিল কৃষ্ণনগর সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বষের্র ওই ছাত্রীর। এ দিন বিকেলে বাস থেকে নামার পরেই সৌরভ দাস নামে ওই ‘বীরপুঙ্গব’ তার সাঙ্গোপাঙ্গদের নিয়ে শুরু করেছিল নিয়ম মাফিক বজ্জাতি। বৃষ্টি পড়ছিল। ছাতা মাথায় নিশ্চুপে অন্যান্যদিনের মতোই হেঁটে যাচ্ছিল সে। কিন্তু মৌনতাকে দুর্বলতা ভেবেছিল ওই ইভ-টিজাররা। এ দিন তাই মেয়েটির গা ঘেঁষে সাইকেল চালাতে চালাতে ‘তীব্র অশ্লীল এক মন্তব্য’ করে ছেলেটি। নিজেকে আর সামলে রাখতে পারেনি ছাত্রীটি। সপাটে চড় কষিয়ে দেয় সৌরভ নামে ওই যুবকের গালে।
মেয়েটি বলে, “দিনের পর দিন চলছিল এই ঘটনা। কত দিন এড়িয়ে থাকা যায়। না শোনার ভান করে কত দিন চলা যায় বলুন তো?” পুলিশের কাছে ওই ছাত্রী জানায়, ওই যুবকদের এড়িয়ে চলতে অনেক দিন তাঁকে ঘুর পথেও বাস ধরতে যেতে হয়েছে। তিনি বলেন, “এ দিন বাস থেকে নামার পরেই আমার গায়ের কাছে সাইকেল নিয়ে এসে তীব্র অস্লীল এক মন্তব্য করে ওই ছেলেটি। আমি বলি, “আমাকে বললেন,’ উত্তর না দিয়ে ওরা অসভ্যতামি করতেই থাকে। নিজেকে আর সামলে রাখতে পারিনি। চড় কষিয়ে দিই।”
প্রথমে থতমত খেয়ে গেলেও এ বার নিজের ‘পৌরুষ’ দেখাতে সাইকেল থেকে সিনেমার নায়কের মতো নেমে আসে সে। তারপর মেয়েটিক ছাতা কেড়ে নিয়ে চেপে ধরে তাঁর চুলের মুঠি। পাল্টা চড় কষায় তাঁর গালে। বারাসত কিংবা বীজপুরের ঘটনার মতোই পরিস্থিতি ক্রমেই ঘোরাল হয়ে উঠত হয়তো এ দিনও। এই সময়ে আশপাশের দোকান থেকে হই হই করে তেড়ে আসেন লোকজন। দু-এক জন মহিলাও চিৎকার করতে থাকেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। ভড়কে যায় ওই যুবকেরা। পালাতে তাকে তারা। জনতা তাড়া করে তাদের। তবে ধরা যায়নি কাউকেই। স্থানীয়ি বাসিন্দারা জানান, নিছকই পাড়ার বখাটে ছেলে সৌরভ। সম্প্রতি তার বাড় বেড়েছিল বড্ড।
ছাত্রীটি এরপরেই ওই যুবকের নামে কৃষ্ণনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অন্তত এ ক্ষেত্রে দায় এড়ায়নি পুলিশ। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেফতার করা হয় তাকে। তার দুই সঙ্গীরও খোঁজ চলেছে বলে জানান জেলা পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র। |