|
|
|
|
বৃষ্টি নামতেই শুরু ধান বোনা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
এতদিন শ্রাবণ-ভাদ্রে বৃষ্টি নামলেই বন্যার আশঙ্কায় ভুগতেন পশ্চিম মেদিনীপুরের মানুষ। রোয়া ধান বন্যার জলে ডুবে নষ্ট হত প্রায় ফি বছর। কিন্তু এ বার সে ছবি বদলেছে। এখন বরং এই উলট-পুরাণেই হাসি ফুটেছে চাষির মুখে। সোমবার রাত থেকে তাই বৃষ্টি শুরু হতেই জেলায় জোর কদমে শুরু হয়েছে আমন ধান বোনা। কৃষি বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, ধান রোয়ার স্বাভাবিক সময় পেরিয়েছে, দেরিতে ধান বুনলে ফসল পুরো পুষ্ট হবে না। কিন্তু সাধারণ চাষি যে বৃষ্টির জন্য এতদিন হাহুতাশ করছিলেন, এখন তা মুঠোয় পেয়ে জোরকদমে কাজ শুরু করেছেন।
পশ্চিম মেদিনীপুরের সহ-কৃষি অধিকর্তা (তথ্য ) দুলাল দাস অধিকারী বলেন, “সময় পেরিয়ে গেলেও জেলায় এখনও আমন ধান রোয়ার কাজ চলছে। সোমবার রাত থেকে জেলা জুড়েই যে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি শুরু হয়েছে তাতে মাঠে জল জমেছে। ফলে ধান বুনতে শুরু করেছেন চাষি।” এখন প্রশ্ন, দেরিতে রোয়া হলে চাষিরা স্বাভাবিক ধান কী পাবেন? দুলাল বাবু বলেন, “ফলনে প্রভাব পড়বেই। কেননা দেরিতে ধান রোয়া হলে শিস ছোট হয়, ধান ঠিক পুষ্ট হয় না ফলে উৎপাদনও কমবে। তবে কিছুটা হলেও তো ফসল পাওয়া যাবে।”
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, গত বছর ৩১ অগস্ট পযর্ন্ত জেলায় বৃষ্টি হয়েছিল ১১৩৫.৬ মিলিমিটার। এ বার হয়েছে ৮৭৮ মিলিমিটার। এখনও জেলায় প্রায় ২৩ শতাংশ বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই গত বছর আউস এবং আমন ধান যে পরিমাণ চাষ হয়েছিল, এ বছর তা অনেকটাই কমেছে। কৃষি দফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ৫৫ হাজার ৫১৭ হেক্টর জমিতে আউস ধান চাষ হয়েছিল। আমন হয়েছিল ৫ লক্ষ ৫২৫ হেক্টর জমিতে। কিন্তু এ বছর বৃষ্টির ঘাটতিতে ৪৩ হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমিতে আউস ধান চাষ হয়েছে। আর আমন চাষ হয়েছে ৩ লক্ষ ৭৯ হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমিতে।
তবে ঘাটতি মেটাতে আউস না হলেও বৃষ্টি শুরু হতেই পুরোদমে আমন রোয়া চলছে। আমনের সময় পেরিয়ে গেলেও বীজতলা তৈরি থাকায় চাষিরা তা লাগিয়ে দিচ্ছেন। আশা, কিছুটা হলেও ফলনের পরিমান বাড়বে। যদিও উপ-কৃষি অধিকর্তা তপন ভুঁইয়া বলেন, “জেলায় বিকল্প চাষের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে ভুট্টা, মুগ, কলাই, তিল প্রভৃতি চাষে জোর দেওয়া হচ্ছে এ বার। চাষিরা যাতে এই চাষে উৎসাহ পান, তার জন্য দফতরের কর্মীরা চাষিদের পরামর্শও দেবেন।”
তবে দেরিতে হলেও বৃষ্টি হওয়ায় জেলার চাষিরা খুশি। কৃষি দফতর সূত্রে খবর, খামখেয়ালি বৃষ্টি হওয়ায় যে সব জমিতে ধান লাগানো হয়েছিল, সেখানে প্রচুর ঘাস জন্মেছিল। বেড়েছিল পোকামাকড়ের উপদ্রবও। কিন্তু এই ভারি বৃষ্টিতে পোকামাকড়ও অনেক কমে যাবে বলে জানা গিয়েছে। কমবে জমিতে জলের ঘাটতিও।
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্যান্য বছর এই সময় জেলায় বন্যা-কবলিত এলাকা বলে চিহ্নিত হয়ে যায় পুরো ঘাটাল, সবং, নারায়ণগড়, ডেবরা, চন্দ্রকোণা, কেশপুর-সহ বেশ কিছু ব্লকের কিছু এলাকা। বন্যায় ধানজমিতে জল জমে যাওয়ায় একরের পর একর ধান নষ্টও হয়ে যায়। কিন্তু এ বার জেলার অনান্য জনপদের মতো এই এলাকাগুলিতেও মাঠে ট্রাক্টর চলছে। ধান রোয়ার জন্য তৈরি করা হচ্ছে মাঠ। তাই একটু বেশি ফলনের আশায় বুক বেঁধেছে জেলার হাজার হাজার কৃষি পরিবার। এখন অপেক্ষা শুধু ‘সবুরে মেওয়া ফলা’র। |
|
|
|
|
|