ও তোমাদেরই লোক এই কথা বলেই ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে দরাজ সার্টিফিকেট দিলেন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা।
ভোটারদের আশ্বস্ত করে মিশেল এ ভাবেই পৌঁছতে চাইলেন তাঁদের কাছে। রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী মিট রোমনির নাম এক বারও উচ্চারণ না করে ফার্স্ট লেডি বললেন শুধু ওবামাকে নিয়েই। মনে করিয়ে দিলেন, ‘আমেরিকান ড্রিম’ বারাকের অচেনা নয়। কারণ ও ওই স্বপ্নেই বাঁচে।”
গত মাসেই আইওয়ার ড্যাভেনপোর্টে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, “ক্যারিশমার বিচারে বাড়িতে আমার স্ত্রী-ই সবার উপরে।” আর আজ কনভেনশনে সেই মিশেলকে দেখা গেল প্রেসিডেন্টের প্রশংসায় সরব হতে। টিভিতে যে বক্তৃতা দুই মেয়েকে পাশে নিয়ে একাগ্রচিত্তে শুনলেন প্রেসিডেন্ট স্বয়ং।
বারাক ওবামাকে সাধারণ মার্কিন নাগরিকের সঙ্গে তুলনার পরে মিশেলের মন্তব্য, “অনেকেই আমায় জিজ্ঞেস করেন, হোয়াইট হাউসে ঢোকার পরে ওর কি কোনও পরিবর্তন হয়েছে? নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি ওর চরিত্র, মতাদর্শ অথবা হৃদয়ে ও এখনও সেই মানুষটাই, বহু বছর আগে যার প্রেমে পড়েছিলাম আমি।” |
বুধবার ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে
বক্তৃতার পর মিশেল ওবামা। ছবি: এএফপি। |
বক্তৃতার মধ্যেই মিশেল ফিরে গেলেন স্মৃতিচারণে। মোটা মাইনের চাকরির সুযোগ ফিরিয়ে দিয়ে যে বারাক ওবামা চারপাশের মানুষের সংগ্রামের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে ছিলেন। তাঁর চেনা এলাকার ইস্পাত কারখানা তখন বন্ধ। তাই সেখানকার সব সম্প্রদায়ের মানুষকে একজোট করে কাজে ফেরানোর কঠিন লড়াইয়ে নামলেন তিনি। যিনি বিশ্বাস করতেন, বেশি টাকা রোজগার করাটাই সাফল্যের পরিচায়ক নয়। মানুষের জীবনে কতটা পরিবর্তন ঘটাতে পারলাম, সাফল্য নির্ভর করে তার উপরে। উজ্জ্বল গোলাপি রঙের পোশাকে ফার্স্ট লেডির বাচনভঙ্গি মুগ্ধ করল শ্রোতাদের। তুমুল হাততালি দিয়ে সে কথাই জানান দিলেন শ্রোতারা।
প্রেসিডেন্ট-পত্নী জানালেন, মালিয়া আর সাশার জন্মের পরে ওবামা আর পাঁচ জন বাবার মতোই কী ভাবে প্রতি মিনিটে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার চেষ্টা করতেন ওদের শ্বাস ঠিকমতো পড়ছে কি না! সেই মানুষটি এখনও চেষ্টা করেন রোজ রাতে মেয়েদের সঙ্গে ডিনার করতে। ধৈর্য ধরে ওদের প্রশ্নের উত্তর দেন। আলোচনা করেন খবর নিয়ে অথবা মিডল স্কুলের বন্ধুত্ব নিয়েও।
এই মানুষটিকেই আবার একেবারে অন্য রূপে দেখেছেন মিশেল। “রাত জেগে ডেস্কে ঝুঁকে পড়ে বিভিন্ন মানুষের চিঠি পড়তে দেখেছি ওকে। কোনও বাবা হয়তো লিখেছেন, তাঁর মেয়ে ক্যানসারে ভুগছে। বিমা কোম্পানি টাকা দিচ্ছে না।” প্রেসিডেন্টের চোখে তাঁর জন্য উদ্বেগ দেখেছেন মিশেল। বারাক ওবামাকে বলতে শুনেছেন, “মানুষগুলো কী ভাবে বেঁচে আছে তুমি ভাবতে পারবে না। এটা ঠিক নয়। ওদের জন্য কিছু করতে হবে।” মিশেলের কথায়, “আমাদের সংগ্রাম, আশা আর স্বপ্নের সঙ্গে অন্য মানুষের লড়াইয়ের গল্পগুলোও জুড়ে গেল এ ভাবেই। এখন বুঝি সেই বোধটাই চালিত করে বারাক ওবামাকে।” |
দুই মেয়েকে নিয়ে স্ত্রীর বক্তৃতা শুনছেন বারাক ওবামা। ছবি: পিটিআই। |
তাঁর বক্তৃতায় উঠে এল, ‘আমরা’ আর ‘ওরা’-র রাজনীতিতে ওবামা বিশ্বাস করেন না। “আপনি হয়তো ডেমোক্র্যাট বা রিপাবলিকান বা কোনওটাই নন ওর তাতে কিছু এসে যায় না। ও জানে আমরা দেশকে ভালবাসি। ভাল কিছু করার সুযোগ পেলে ও যে কারও কথা শুনতে রাজি।” তাঁর স্বামীকে পুনর্নির্বাচিত করার অনুরোধ জানিয়ে মিশেল শ্রোতাদের বললেন, যে মানুষটি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন, তাঁর উপরে বিশ্বাস রাখুন।
মিশেলের দাবি, যত দিন পেরিয়েছে, এই কারণগুলোর জন্যই স্বামীকে আরও বেশি ভালবেসেছেন তিনি। কারণ বারাক ওবামা যেখান থেকে শুরু করেছিলেন, এখনও সেই জায়গাটাকে ভুলে যাননি। গর্বভরে মিশেল বলেন, “তাই আমি জানি, ওকে বিশ্বাস করা যায়। ও যা করব বলে মনে করে, সেটা যত কঠিনই হোক, ও করবে।” |