ডেঙ্গির আতঙ্কে কাঁপছে শহর, বাড়ছে উদ্বেগ
হাসপাতালে রোগীদের ভিড় সামলাতেই বেসামাল পরিষেবা
রীতিমতো তেড়েফুঁড়ে উঠেছিলেন মধ্যবয়স্কা মহিলা। কিট কম পড়ায় আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফিভার ক্লিনিকের চিকিৎসক তাঁকে ‘রেফার’ করেছিলেন নিকটবর্তী পুরসভার ক্লিনিকে। কিন্তু মহিলার এক গোঁ। রক্ত পরীক্ষা করতে হবে হাসপাতালেই। শেষ পর্যন্ত টানা চার ঘণ্টা অপেক্ষার পরে র্যাপিড কিটের সাহায্যেই তাঁর পরীক্ষা হল। সন্ধ্যায় জানা গেল, ডেঙ্গি পজিটিভ। পাঁচ দিন পরে ফের আসতে বলে তাঁকে বাড়ি পাঠাতে চাইলেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু প্রৌঢ়া বাড়ি যেতে নারাজ। হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে তখন ভর্তির অপেক্ষায় আরও অন্তত ২৫ জন রোগী। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, তাঁরা রক্ত পরীক্ষা করছেন ঠিকই, কিন্তু শয্যা দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, ইতিমধ্যেই জ্বর নিয়ে ১৪৭ জন ওই হাসপাতালে ভর্তি।
মঙ্গলবার দিনভর শহর জুড়ে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে এটাই ডেঙ্গি নিয়ে আতঙ্কের ছবি। পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই, টেকনিশিয়ান নেই, শয্যার অভাব তো রয়েছেই। অথচ, জ্বরের রোগী উপচে পড়ছে ক্রমাগত। ডেঙ্গি-আক্রান্তদের হাল সরেজমিন দেখতে এ দিন সকালেই মহাকরণ যাওয়ার পথে আচমকা এসএসকেএমে হাজির হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইমার্জেন্সির চিকিৎসকদের সঙ্গে মিনিট দুয়েক কথা বলে হাসপাতাল ছাড়েন তিনি। কর্তৃপক্ষ জানান, তাঁদের হাসপাতালে ২৮ জন জ্বরের রোগী। তার মধ্যে বেশির ভাগেরই ডেঙ্গি। এসএসকেএমের দুই জুনিয়র ডাক্তারও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। অর্থোপেডিক বিভাগে ভর্তি এক রোগীর রক্ত পরীক্ষাতেও ডেঙ্গি পজিটিভ ধরা পড়েছে।
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র
ই এম বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে চিকিৎসকদের হাতেপায়ে ধরছিলেন এক কিশোরীর বাবা। মেয়ের ডেঙ্গি পজিটিভ। প্লেটলেট অনেকটাই কমে গিয়েছে। মাড়ি থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে শয্যা নেই।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৪৭ জন জ্বর নিয়ে ভর্তি। তাঁদের মধ্যে ৫৫ জনের ডেঙ্গি ধরা পড়েছে। নতুন গড়ে ওঠা ফিভার ক্লিনিকে দিনভর দফায় দফায় জ্বরের রোগীরা আসছেন। রক্তের নমুনা সংগ্রহ করতে করতে কিট কম পড়ে যাচ্ছে। একই ছবি এসএসকেএম, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ বা এনআরএসেও।
স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস জানিয়েছেন, ভর্তি সংক্রান্ত প্রোটোকল না-মানাতেই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, “বুধবার ফের ভর্তি সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করা হবে। ভর্তি করার প্রয়োজন নেই, এমন রোগীরা শয্যা আটকে রাখায় যাঁদের সত্যিই প্রয়োজন, তাঁরা পাচ্ছেন না।” প্রোটোকলটি ঠিক কী, তা অবশ্য ব্যাখ্যা করেননি ওই স্বাস্থ্যকর্তা।
উপচে পড়া রোগী এবং তাঁদের যথাযথ পরিষেবা দিতে না পারার ছবিটা একই রকম পুরসভার ক্লিনিকগুলিতেও। প্রতি দিন গড়ে ৬০ থেকে ৭০ জন রক্তের নমুনা পরীক্ষার জন্য আসছেন। অধিকাংশ ক্লিনিকেই ডাক্তার বলতে সাকুল্যে এক জন। কোথাও আবার তা-ও নেই। এক জন করে ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান। রোগীর চাপ সামলাতে গিয়ে তিনি সারা দিন দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছেন না। অভাব রয়েছে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরও। ফলে বেশির ভাগ ক্লিনিকই নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে না। ডাঁই করা থাকছে চিকিৎসাজাত বর্জ্য। অপরিচ্ছন্ন ক্লিনিকে রক্ত পরীক্ষা করাতে গিয়ে নতুন করে মশার কামড় খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ার ভয় পাচ্ছেন বহু রোগীই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.