ডেঙ্গির আতঙ্কে কাঁপছে শহর, বাড়ছে উদ্বেগ
ব্লাড ব্যাঙ্কে হাহাকার, মিলছে না প্লেটলেট
তিন ইউনিট প্লেটলেটের জন্য দিনভর সারা শহর ঘুরে বেড়িয়েছেন অভীক সেনাপতির আত্মীয়েরা। বাঁশদ্রোণীর বছর ছত্রিশের অভীক ডেঙ্গি-আক্রান্ত। দক্ষিণ কলকাতার এক নার্সিংহোমে ভর্তি। প্লেটলেট কমে দাঁড়ায় ৩৮ হাজারের মতো।
অভীকের আত্মীয়েরা প্রথমে ন্যাশনাল মেডিক্যালে গিয়ে শোনেন, সেখানে প্লেটলেট তৈরির পরিকাঠামোই নেই। এর পরে যান এসএসকেএম-এ। কিন্তু অভিযোগ, এসএসকেএমের ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তাঁদের জানিয়ে দিয়েছেন, মজুত প্লেটলেট এতই কম যে, নিজেদের হাসপাতালের সব ডেঙ্গি রোগীকেই দেওয়া যাচ্ছে না। তৃতীয় গন্তব্য আরজিকর। অভিযোগ, আরজিকর-ও জানায়, উৎপাদন কম, তাই নিজেদের রোগী ছাড়া বাইরের কাউকে প্লেটলেট দেওয়া হচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত এন্টালির একটি বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তদাতা নিয়ে গিয়ে সারা রাত লাইন দিয়ে সেই রক্তদাতার রক্ত থেকেই প্লেটলেট তৈরি করে দেওয়া হয় অভীককে। এক ইউনিট প্লেটলেট তৈরিতে সময় লেগে যায় প্রায় পাঁচ ঘণ্টা।
এস এস কে এমে ছেলেকে রক্ত পরীক্ষা করাতে এনেছেন মা। —নিজস্ব চিত্র
কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনায় ডেঙ্গির প্রকোপ তুঙ্গে ওঠার পরে এ বার শহর জুড়ে সরকারি-বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে প্লেটলেটের জন্য হাহাকার। কলকাতা ও আশপাশে মাত্র কয়েকটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত পৃথকীকরণ ইউনিট আছে, যেখানে প্লেটলেট তৈরি হয়। সেখানেও উৎপাদনের হার চাহিদার অর্ধেক। ফলে গত এক সপ্তাহে সর্বত্র প্লেটলেটের চাহিদা চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম খাচ্ছে তারাও।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ব্লাড ব্যাঙ্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, গত রবিবার রাত থেকে সোমবার সকালের মধ্যে তাঁরা ৫৮ ইউনিট প্লেটলেট দিয়েছেন। এর পরে ৪০ ইউনিট পড়ে ছিল। সোমবারেও ৭২ ইউনিট প্লেটলেটের আবেদন জমা পড়ে। মঙ্গলবার আরও ২৫টি আবেদন। প্রতি দিন এত প্লেটলেট তৈরি তাঁদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব বলে জানান কৃষ্ণেন্দুবাবু।
ন্যাশনাল মেডিক্যালে গত তিন বছর ধরে রক্ত পৃথকীকরণ ইউনিট খোলার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু এখনও খোলেনি। এখানে ভর্তি যে সব ডেঙ্গি রোগীর প্লেটলেট লাগছে, তাঁদের জন্য অন্য হাসপাতাল থেকে প্লেটলেট আনতে বলা হচ্ছে। এসএসকেএম এবং আরজিকর জানিয়েছে, নিজেদেরই যা চাহিদা, তাতে বাইরের কাউকে প্লেটলেট দেওয়া যাচ্ছে না। এসএসকেএম ব্লাড ব্যাঙ্কের প্রধান শ্যামলাবাই সহায় বলেন, “আমাদের লোকাভাব বলে শনি-রবিবার ছাড়া রক্তদান শিবির করি না। আর রক্ত সংগ্রহের ছ’ঘণ্টার মধ্যে প্লেটলেট তৈরি করতে হয়। তাই শনি-রবি ছাড়া আমাদের প্লেটলেট হয় না। দেব কী করে?” মানিকতলা কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কেও যেখানে প্রতি দিন ৪০-৫০ ইউনিট প্লেটলেট তৈরি হয়, সেখানে রোজ ১৫০-১৭০ জন প্লেটলেট নিতে আসছেন। অর্ধেককেই ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।
এন্টালিতে ২৪ ঘণ্টা পরিষেবা দেওয়া এক বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষও জানিয়েছেন, তাঁদের সঞ্চয়ে আর প্লেটলেট নেই। কিন্তু রোজ ৫০-৬০ ইউনিট প্লেটলেটের চাহিদা আছে। তাই প্রত্যেককে রক্তদাতা আনতে বলা হচ্ছে। রক্তদাতার রক্ত নিয়ে তা থেকে প্লেটলেট বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে পাঁচ-ছ’ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। তা-ও সারা রাত রক্তদাতা সঙ্গে নিয়ে লাইন দিচ্ছেন অনেকেই।
স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস বলেন, “প্লেটলেট কাউন্ট ৩০ হাজারের নীচে না নামলে ও হেমারেজিক ডেঙ্গি না-হলে বাইরে থেকে প্লেটলেট দেওয়ার অর্থই নেই। কিন্তু বহু চিকিৎসক রোগীর প্লেটলেট সামান্য কমলেই অবৈজ্ঞানিক ভাবে প্লেটলেট দিচ্ছেন। এতে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি হচ্ছে। আমরা শীঘ্রই এ নিয়ে নির্দেশিকা জারি করব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.