মুখ্যমন্ত্রী বা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা ডেঙ্গি নির্ণয়ের ওই পদ্ধতিকে আমলই দিতে চান না। কিন্তু কী কলকাতা শহর, কী জেলার সরকারি হাসপাতাল, সর্বত্রই ব্যবহার করা হচ্ছে এনএস-ওয়ান অ্যান্টিজেন নির্ণয়ের র্যাপিড কিট। শুধু ব্যবহার করা নয়, এনএস-ওয়ান পজিটিভ হলেই তাঁকে ডেঙ্গি রোগী হিসেবে চিহ্নিত করে চিকিৎসাও শুরু করে দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
এ দিকে, র্যাপিড কিট ব্যবহার করে এনএস-ওয়ান পজিটিভ পেলে সংশ্লিষ্ট রোগীকে ডেঙ্গি আক্রান্ত বলা যাবে না বলে বার বার করে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও মহাকরণে বলেছেন, “র্যাপিড টেস্টে এনএস-ওয়ান পজিটিভ হওয়া মানেই কিন্তু ডেঙ্গি নয়। অন্য কোনও ভাইরাসও হতে পারে। জ্বরের পাঁচ দিন পরে অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করেই ডেঙ্গি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।” তাঁর মতে, এনএস-ওয়ান পরীক্ষার ফল পজিটিভ হওয়ার পাঁচ দিন বাদে এই অ্যান্টিবডি পরীক্ষা না-হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভুল চিকিৎসা হতে পারে।র্যাপিড পদ্ধতির এনএস-ওয়ান কিট নিয়ে মমতার সতর্কবাণী, “তাড়াহুড়ো করতে গেলে ভুল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”
অবশ্য চিকিৎসকদের একটা বড় অংশের মতে, জ্বর হওয়ার পরে অ্যান্টিবডি পরীক্ষার জন্য পাঁচ দিন অপেক্ষা করতে গেলে রোগ জটিল হয়ে পড়তে পারে। সেই উদ্বেগ থেকেই বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিক র্যাপিড পদ্ধতিতে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে। যাতে জ্বরের দু’দিনের মধ্যে রক্তে অ্যান্টিজেন ধরা পড়ে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজ-এর অধিকর্তা, ভাইরোলজিস্ট শেখর চক্রবর্তী বলেন, “র্যাপিড টেস্ট পদ্ধতিতে এনএস-ওয়ান পজিটিভ হলে এবং পাশাপাশি ডেঙ্গির উপসর্গ থাকলে কোনও ভাবেই তাকে অবজ্ঞা করা উচিত নয়। অবশ্যই ডেঙ্গির চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া উচিত। তবে ওই রোগী সত্যিই সত্যিই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে অবশ্যই অ্যান্টিবডি পরীক্ষা জরুরি।” র্যাপিডকিটের এনএস-ওয়ান পদ্ধতিকে গুরুত্ব দিয়েছেন চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়ও। তাঁর বক্তব্য, “এনএস-ওয়ান র্যাপিড এবং এনএস-ওয়ান ম্যাক এলাইজা দু’টি পদ্ধতিই স্বীকৃত। দ্বিতীয়টি খরচসাপেক্ষ। তাই অনেক সময়ই র্যাপিড পদ্ধতিতে রক্ত পরীক্ষা করা হয়। এতে কোনও সমস্যা নেই। বরং ডেঙ্গি পজিটিভ হলে যথাযথ নজরদারিটা শুরু করা যাবে। পাঁচ দিন পরে প্রয়োজনে অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া যেতে পারে।”
বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত এক চিকিৎসক বলেন, “কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে এনএস-ওয়ান পজিটিভ রোগী মারা যাচ্ছেন। তাঁদের অ্যান্টিবডি পরীক্ষাই করা যাচ্ছে না। সেই সব রোগী কী রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন তা মানুষের জানা উচিত। না হলে বিভ্রান্তি বাড়বে। আমরা যাঁরা এনএস-ওয়ান পজিটিভকে গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসাক করছি, তাঁদের হাতে রোগী কিন্তু মারা যাচ্ছেন না।”
ডেঙ্গি নির্ণয়ে যাতে দেরি না হয়, তার জন্য রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরও অবশেষে এলাইজা কিটের মাধমে এনএস-ওয়ান পরীক্ষার ব্যবস্থা করছে। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, “ডেঙ্গি নির্ণয়ে ‘অ্যান্টিজেন এলাইজা’ পরীক্ষার নতুন কিট দু’দিনের মধ্যে রাজ্যে আসছে।” বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল র্যাপিড পদ্ধতিতে যে এনএস-ওয়ান পরীক্ষা করছে তার সঙ্গে রাজ্য সরকারের কিটের পার্থক্যটা কী?
স্বাস্থ্য দফতর বলছে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দফতর র্যাপিড কিট অনুমোদন করে না। তা হলে ওই কিটের ঢালাও ব্যবহার হচ্ছে কী ভাবে? স্বাস্থ্য দফতরের যুক্তি, ড্রাগ কন্ট্রোল ওই কিটের ব্যবহার অনুমোদন করেছে। ফলে সেই যন্ত্রের ব্যবহার বন্ধ করার কোনও এক্তিয়ার তাদের (স্বাস্থ্য দফতরের) নেই। কিন্তু ঘটনা হল, শুধু বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক নয়, স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকা উপেক্ষা করে সরকারি হাসপাতালেও ব্যবহার করা হচ্ছে র্যাপিড কিট। এ দিন কলকাতার আর জি কর এবং ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল আর হুগলির শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতাল এবং আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল ডেঙ্গি নির্ণয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে র্যাপিড কিট। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস বলেন, “স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ অনেক জায়গায় মানা হচ্ছে না। এটা কাম্য নয়।” |