প্রশাসনিক সংস্কারের মাধ্যমে আর্থিক কাজকর্মে স্বচ্ছতা আনতে চাইছে জলপাইগুড়ি পুর কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি চেয়ারম্যান পরিষদের বৈঠকে পুরসভার আভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক কাঠামোয় তিনটি বড় ধরনের সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নজরদারির সুবিধের জন্য আর্থিক বিভাগকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করা হয়েছে। বার্ধক্য ভাতা বিলি করা, কর্মীদের বেতন থেকে শুরু করে ঠিকাদারদের পাওনা-সহ পুরসভার সব খাতের টাকা এত দিন কেন্দ্রীয়ভাবে বিলি করা হত। এতে আর্থিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা, চেনা ব্যাক্তিদের সুবিধে পাইয়ে দেওয়ার মত নানা অভিযোগ পুর কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। ৩১ অগস্ট চেয়ারম্যান পরিষদের বৈঠকে কেন্দ্রীয় ভাবে সব খাতের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন নির্দেশ অনুযায়ী ঠিকাদারদের পাওয়া মেটানো, কর্মীদের বেতন এবং বার্ধক্যভাতা ও মিডডে মিল এই তিনটে বড় খাতের পৃথক হিসেব রাখা হবে। দ্বিতীয়ত, শহরের বাজার এবং দোকান থেকে প্রতি মাসে কর এবং বিভিন্ন ফি বাবদ যে বিপুল আয় হয় তাতে নজরদারি চালানোর জন্য একটি নতুন বাজার বিভাগ চালুর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ। তৃতীয়ত, একই পদে দীর্ঘদিন কাজ করে যাওয়া পুর কর্মীদের অন্য দফতরে বদলি করা হবে বলে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চেয়ারম্যান পরিষদের সভায় নেওয়া এই তিন সিদ্ধান্ত গত সোমবার পুরসভার মাসিক বৈঠকে পাশ করিয়ে নেওয়া হয়েছে। যদিও পুরসভা সূত্রে সরকারি ভাবে জানানো হয়েছে, পুরসভার কাজে গতি আনতেই এই তিনটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই এই সিদ্ধান্তগুলি নেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছিল। পুরসভার কাজের গতি বা অনান্য বিষয়ে কিছু অভিযোগও আসছিল। সব দিক খতিয়ে দেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে জলপাইগুড়ি পুরসভার কাজের গতি যেমন বাড়বে তেমনিই নাগরিকদেরও বিভিন্ন পরিষেবা পেতে সুবিধে হবে।” বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প বা ঠিকাদারদের পাওনা মেটানো সহ অনান্য কাজে প্রতি মাসে প্রায় এক কোটি টাকারও বেশি বন্টন করে পুর কর্তৃপক্ষ। এতদিন কেন্দ্রীয় ভাবে এই টাকা বিলি করার ব্যবস্থা থাকাত। এতে বিভিন্ন সময়ে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। মুষ্টিমেয় কিছু ঠিকাদারেরা ছাড়া বাকিদের পাওনার জন্য মাসের পর মাস পুরসভার আর্থিক বিভাগে ঘুরতে হয় বলে দীর্ঘদিন ধরেই একাংশ ঠিকাদাররা অভিযোগ করে আসছিলেন। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ভাবে হিসেব রাখার কারণে এক খাতের টাকা অন্য খাতে ব্যবহার করা-সহ বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগও ওঠে। শহরের বিভিন্ন বাজার এবং বাড়ি থেকে প্রতি মাসে কর সংগ্রহ করা হলেও সেই নির্দিষ্ট খাতের হিসেব সঠিক ভাবে রাখা হয়নি বলেও সম্প্রতি পুর কর্তৃপক্ষ জানতে পারে। এবার বাজারের জন্য পৃথক বিভাগ তৈরি করা, কর সংগ্রহ ব্যবস্থা ঢেলে সাজা এবং একই পদে থাকা দীর্ঘদিনের কর্মীদের বদলির সিদ্ধান্তে পুরসভায় কর্মসংস্কৃতি বৃদ্ধি পাবে বলে আশা কর্তৃপক্ষের। |