রাজ্যের ‘সর্বোত্তম’ তদন্তকারী অফিসারের খোঁজে নেমে রেল পুলিশের কাছে দু’টি নাম চেয়েছিল সিআইডি। কিন্তু তারা একটির বেশি নাম পাঠাতে পারেনি। কারণ, ‘প্রতিযোগিতা’য় অংশগ্রহণের জন্য সিআইডি যে-সব শর্ত পূরণের কথা বলেছে, তা মেনে একটির বেশি নাম পায়নি রেল পুলিশ। আর আসানসোল কমিশনারেট যাঁর নাম পাঠিয়েছে, এক বছর আগেও তিনি সিআইডি-তে ছিলেন এবং তদন্তকারী অফিসার হিসেবে গত কয়েক বছরে তাঁর সমস্ত ‘সাফল্য’ সেখানেই। এই অবস্থায় রাজ্যের তদন্তকারী অফিসারদের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পুলিশমহলেই।
সিআইডি-র শর্ত কী?
সিআইডি বলেছে, ‘প্রতিযোগী’ অফিসার গত ১০ বছরে কতগুলি মামলার তদন্ত করেছেন এবং তার ক’টিতে অভিযুক্তের সাজা হয়েছে, তা বিস্তারিত ভাবে জানাতে হবে বিভাগীয় প্রধানকে। দিতে হবে তাঁর কাজের ধারাবাহিকতার বিবরণও। ওই অফিসারের মৌলিক চিন্তাভাবনা কী রকম, বৈজ্ঞানিক যন্ত্র ব্যবহারেই বা কতটা সাবলীল তিনি, সেই সব খুঁটিনাটিরও উল্লেখ থাকতে হবে আবেদনপত্রে। সেই সঙ্গে প্রতিযোগী অফিসার প্রাথমিক বিচারে কত ‘নম্বর’ পাচ্ছেন এবং কেনই বা সেই নম্বর দেওয়া হচ্ছে, তার সমর্থনে যুক্তি দর্শাতে হবে বিভাগীয় প্রধানকে।
এখানেই আপত্তি তুলেছেন পুলিশকর্তাদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, ‘থানায় কর্তব্যরত অধিকাংশ অফিসারকে দু’-আড়াই বছরের মাথায় বদলি করে দেওয়া হয়। ফলে তদন্তের দায়িত্বও বদলে যায়। বহু ক্ষেত্রে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ফরেন্সিক রিপোর্ট ঠিক সময়ে পাওয়া যায় না। তাই বদলির আগে তদন্তকারী অফিসারেরা বড় তদন্তের খুব কমই শেষ করতে পারেন।’ সেই জন্যই পুলিশের একটি অংশকে শুধু তদন্তের কাজে লাগানোর সুপারিশ করেছিল পুলিশ কমিশন। তাতে তদন্তের মান বাড়ত, মনে করেন পুলিশকর্তারা।
কেন দরকার পড়ল এমন প্রতিযোগিতার?
এর আগে কৃষিরত্ন, বিডিও-রত্ন সম্মান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। এক সিআইডি-কর্তা বলেন, “রাজ্য পুলিশের সাব-ইনস্পেক্টদের (যাঁদের তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়) কাজের মান কেমন, মূলত তা জানতেই এই প্রতিযোগিতার আয়োজন। তবে ওই সংস্থার ডিজি ভিভি থাম্বির দাবি, “তদন্তকারী অফিসারদের উৎসাহ দিতেই এই উদ্যোগ।” কারণ যা-ই হোক, গত মে মাসে সরকারি নির্দেশিকা জারি করে প্রতিটি ‘জোন’ থেকে তিন জন, রেল পুলিশ থেকে দু’জন, এনফোর্সমেন্ট শাখা ও প্রতিটি কমিশনারেট থেকে এক জন করে ‘সফল’ তদন্তকারী অফিসারের নাম পাঠাতে বলে সিআইডি। রেল পুলিশের এক কর্তা বলেন, “সব শর্ত পূরণ করতে পারেন, এমন একাধিক অফিসার পাওয়া যায়নি। যাঁর নাম পাঠানো হয়েছে, তিনি হাওড়া রেল পুলিশের একটি থানার ওসি। গত ১০ বছরে ওই অফিসার একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত শেষ করেছেন এবং তাতে অভিযুক্তদের সাজা হয়েছে।”
মহাকরণ সূত্রের খবর, সর্বোৎকৃষ্ট তদন্তকারী অফিসার বাছতে আজ, বুধবার বিভিন্ন জোনের আইজি এবং কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন সিআইডি-র প্রতিনিধিরা। |