প্রাথমিক
প্রশিক্ষণে জট, অন্ধকারে ৫০ হাজার শিক্ষক
স্কুলে প্রশিক্ষণহীন শিক্ষক রাখা যাবে না। যাঁদের প্রশিক্ষণ নেই, তাঁদের ওই প্রশিক্ষণ নিতে হবে ২০১৫-র ৩১ মার্চের মধ্যে। শিক্ষক প্রশিক্ষণের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন বা এনসিটিই এটা কথা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু মাত্র আড়াই বছরের মধ্যে প্রশিক্ষণহীন হাজার পঞ্চাশেক কর্মরত প্রাথমিক শিক্ষককে কী ভাবে প্রশিক্ষণ (যার পোশাকি নাম ডিএলএড) দেওয়া যাবে, এখনও তা চূড়ান্ত করতে পারেনি রাজ্য সরকার। ফলে বিপুল সংখ্যক শিক্ষকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর আশ্বাস, “চিন্তার কোনও কারণ নেই। সময়মতো প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শেষ হয়ে যাবে। প্রশিক্ষণ হবে দূরশিক্ষার মাধ্যমে।”
প্রাথমিকে কর্মরত কত শিক্ষকের প্রশিক্ষণ দরকার, সেই বিষয়ে সবিস্তার তথ্য স্কুলশিক্ষা দফতর বা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের হাতে নেই। পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য জানান, কর্মরত শিক্ষকদের জেলা-ভিত্তিক তথ্য ২৪ অগস্ট তাঁদের কাছে পৌঁছেছে। এখন তা একত্র করার কাজ চলছে। তবে স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, প্রশিক্ষণ নেই, এমন প্রাথমিক শিক্ষকের সংখ্যা ৫০ হাজারের কাছাকাছি।
সরকারি, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত ৬১টি প্রাথমিক শিক্ষক শিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (পিটিটিআই), ডিস্ট্রিক্ট ইনস্টিটিউট অফ এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং (ডায়েট)-এ ওই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ হবে বলে প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছিল। কিন্তু ওই সব জায়গায় এত শিক্ষকের প্রশিক্ষণ সম্ভব নয় বুঝে বিএড কলেজ এবং কিছু উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলকেও এই কাজে ব্যবহার করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যে-সব শিক্ষক-শিক্ষিকা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেননি, তাঁদের ডিএলএড প্রশিক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে মুক্ত বিদ্যালয় মারফত পড়াশোনা করে ৫০ শতাংশ নম্বর নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করতে হবে। যাঁরা ৫০ শতাংশের কম নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন, তাঁদেরও মুক্ত বিদ্যালয় থেকে ফের উচ্চ মাধ্যমিক দিতে হবে এবং পেতে হবে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর। তবেই ওই শিক্ষক-শিক্ষিকারা ডিএলএডের ফল পাবেন।
স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, “পিটিটিআই, ডায়েট এবং ১৫০টি বিএড কলেজ ছাড়াও ৫০টি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলকে প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহার করা হবে বলে আপাতত ঠিক হয়েছে।” তবে সব বিএড কলেজে প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে অসুবিধাও আছে বলে মন্তব্য করেন ওই সরকারি কর্তা। কারণ, মাধ্যমিক স্তরে যে-সব শিক্ষকের প্রশিক্ষণ নেই, তাঁদের বিএড পড়ার ব্যবস্থা করতে হবে একই সঙ্গে।
যাঁরা প্রশিক্ষণ দেবেন, সমস্যা আছে তাঁদের নিয়েও। কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দূরশিক্ষার মাধ্যমে প্রশিক্ষণের জন্য প্রশিক্ষকদের আলাদা করে ‘ওরিয়েন্টেশন’ দরকার বলে জানিয়েছে এনসিটিই। সেই কাজটাও এখনও শুরু হয়নি। দূরশিক্ষায় প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত হলেও হাতেকলমে শেখানোর জন্য কিছু ক্লাস করতেই হবে কর্মরত শিক্ষকদের। যে-সব প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে, সেখানে এত শিক্ষকের পড়াশোনার পরিকাঠামো রয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
কেবল শিক্ষক বা পরিকাঠামোর অভাবই নয়, আরও সমস্যা আছে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের পাঠ্যক্রম গত মে মাসে এনসিটিই-তে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এখনও অনুমোদন মেলেনি। উল্টে তারা জানতে চেয়েছে, যে-সব প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ হবে, সেখানকার পরিকাঠামো কেমন? এনসিটিই-র কাছে এখনও সেই তথ্য পাঠায়নি রাজ্য সরকার।
এত সমস্যা মিটিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে প্রশিক্ষণ পর্ব শেষ হবে কী ভাবে?
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যবাবু বলেন, “পরিকাঠামো বা প্রশিক্ষক পাওয়ার জন্য কী করণীয়, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে তা দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওঁরা ইতিমধ্যে কয়েকটি বৈঠক করেছেন। আমিও পর্ষদের সঙ্গে বৈঠকে বসব। পুজোর আগেই সব বন্দোবস্ত করে ফেলা হবে।”
যদিও এত দ্রুত কী করে সব কাজ হবে, তা নিয়ে ধন্দে রয়েছেন শিক্ষা দফতরের কর্তাদের একাংশই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.