পঞ্চায়েত ভোট
কৃষক সভার ‘করুণ চিত্রে’ কপালে ভাঁজ আলিমুদ্দিনের
দস্য সংখ্যা কমেছে ৫০ লক্ষ!
‘মিথ্যা মামলায়’ গ্রেফতারের ভয়ে ছ’মাস ধরে সাধারণ সম্পাদক ফেরার!
রাজ্য সভাপতির সঙ্গে ‘মনান্তরে’র জেরে সহ-সভাপতি বৈঠকে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন!
পঞ্চায়েত ভোটের আগে সিপিএমের ‘প্রাদেশিক কৃষক সভা’র চিত্র এটাই।
বামেদের ৩৪ বছর গ্রাম-বাংলায় কৃষক সভাই ছিল শেষ কথা। সিঙ্গুরে টাটার কারখানার জন্য জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রেও কৃষক সভার প্রতিনিধিদের সঙ্গে তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেনকে আলোচনায় বসতে হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। ‘তৃণমূলের সন্ত্রাসে’ বহু জায়গাতে সংগঠন করাই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ তুলছেন খোদ বিনয় কোঙারের মতো নেতাও।
২০০৮ সালে কৃষক সভার সদস্য সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৫৯ লক্ষ। তা কমে ১ কোটিতে এসে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে কতজন ‘সক্রিয়’ সদস্য, আর কতজন শুধুই ‘কুপন কাটা’ সদস্য তা নিয়ে সংগঠনেই প্রশ্ন উঠেছে। ১৪-১৬ সেপ্টেম্বর সিপিএমের রাজ্য কমিটির বর্ধিত বৈঠক। পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে ওই বৈঠকে রিপোর্ট দেবেন কার্যকরী সম্পাদক নৃপেন চৌধুরী।
এই পরিস্থিতিতে কৃষক সভা কি আগের মত ‘সক্রিয়’ ভূমিকা নিতে পারবে? কৃষক সভার রাজ্য সভাপতি মদন ঘোষের জবাব, “রাজ্যে ক্ষমতা পরিবর্তনের পরে সব বাম গণ-সংগঠনেরই সদস্য সংখ্যা কমছে। কৃষক সভারও কমেছে। গ্রামে তৃণমূলের নিরন্তর সন্ত্রাস চলছে। এর পরিস্থিতির মোকাবিলা করে পঞ্চায়েত ভোটের আগে সংগঠনকে সক্রিয় করতে আলোচনা হবে।”
অতীতে পঞ্চায়েত ভোটের এক বছর আগে থেকে কৃষক সভার নেতারা মাঠে নেমে পড়তেন। অনিল বিশ্বাস রাজ্য সম্পাদক থাকাকালীন পঞ্চায়েতে শিক্ষকদের প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। ফলে কৃষক সভার গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পায়। ২০০৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটে কৃষক সভাকেই দল সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছিল। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তরুণ রায় ‘মিথ্যা মামলায়’ গ্রেফতার এড়াতে আজও গা-ঢ়াকা দিয়ে আছেন। তাঁর জায়গায় কাজ চালাচ্ছেন নৃপেনবাবু। সংগঠনের সহ-সভাপতি তথা রাজ্যের প্রাক্তন ভূমিমন্ত্রী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লার সঙ্গে সভাপতি মদনবাবুর ‘বনিবনা’ নেই। সব মিলিয়ে সংগঠনের হাল করুণ।
সংগঠনের বেহাল অবস্থার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রেজ্জাক স্পষ্ট বলেন, “কৃষকদের স্বার্থে আন্দোলনের অভাবেই সক্রিয় সদস্য কমছে। অতীতের মত পঞ্চায়েত নির্বাচনে কৃষক সভার আর গুরুত্বও নেই।” তাঁর মতে, রাজ্যের ক্ষমতা পরিবর্তনে সংগঠন ধাক্কা খেয়েছে। তাঁর কথায়, “কৃষক সভার অস্তিত্ব টিকে ছিল পঞ্চায়েতের ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে অধিকাংশ বাম পঞ্চায়েত কার্যত অচল হয়ে পড়ে। ফলস্বরূপ বহু জায়গাতেই কৃষক সভাও সাইন-বোর্ডে পরিণত হয়।” তার উপর, সংগঠনের সহ-সভাপতি হওয়া সত্ত্বেও যে ভাবে তাঁকে ‘উপেক্ষা’ করা হয়েছে, তার প্রতিবাদে কৃষক সভার বৈঠকগুলি টানা বয়কট করছেন রেজ্জাক। তাঁর কথায়, “ওখানে আর যাব না।”
সংগঠনের বর্তমান নেতাদের অধিকাংশই ‘কৃষক পরিবারের থেকে আসেননি’ বলে রেজ্জাক-শিবিরের অভিযোগ। ফলে বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী কৃষক সভাকে তাঁরা সক্রিয় করে তুলতে পারছেন না। সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য এক কৃষক নেতার কথায়, “মদন ঘোষ বা সূর্যকান্ত মিশ্রদের এখন গ্রামে গিয়ে সংগঠনকে চাঙ্গা করা সম্ভব নয়!” পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে একদা ‘লালদুর্গ’ বর্ধমানেও বহু এলাকায় প্রকাশ্যে কৃষক সভা কাজ করতে পারছে না। বিনয়বাবু অবশ্য বলেন, “পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে যে ভাবে তৃণমূল সন্ত্রাস করছে, তাতে রায়না, মন্তেশ্বরের মত জায়গায়ও কৃষক সভার সমস্যা হচ্ছে।” তিনি জানিয়েছেন, হুগলি, পশ্চিম ও পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনার বহু জায়গাতেও একই অবস্থা। এই সব জায়গায় কৃষকদের সংগঠিত করে প্রার্থী দেওয়া নিয়েও ঘোরতর সন্দেহ রয়েছে বিনয়বাবুর।
সম্প্রতি শরিক আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক ও সিপিআইয়ের কৃষক সংগঠনের নেতাদের নিয়ে একাধিক বার বৈঠক করেছেন মদনবাবুরা। চেষ্টা করেছেন একসঙ্গে চলার। কারণ, গত পঞ্চায়েত ভোটে পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর দিনাজপুর, বা মালদহ জেলা পরিষদে হারের অন্যতম কারণ ছিল শরিকি-লড়াইও। এ বার সেই পরিস্থিতি থেকে মদনবাবুরা বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাঁদের ঘরেই এখন কোঁদল তুঙ্গে। তরুণবাবুর অনুপস্থিতিতে ও দলীয় ‘অর্ন্তদ্বন্দ্বে’ পশ্চিম মেদিনীপুরের মত জেলাতেও কৃষক সভার কাজকর্ম কাযর্ত শিকেয় উঠেছে। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া জেলার কৃষক নেতাদের একাংশ বর্তমান নেতৃত্বকে মেনে নিতে পারছেন না। প্রাক্তন সাংসদ অনিল বসুকে দল থেকে বহিষ্কারের পরে হুগলিতেও কৃষক সভা সমস্যায় পড়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.