মশক-রাজ দমনের সম্ভাবনা নিয়ে এল নিম্নচাপ
কঝকে নীল আকাশে গনগনে রোদের তেজ ঢেকে দিল কালো মেঘের ঢল। নিম্নচাপের দৌলতে ভরা ভাদ্রের গুমোট তো কাটলই, মঙ্গলবার দিনভর দফায় দফায় বৃষ্টিতে কিছুটা স্বস্তিরও ইঙ্গিত পেল ডেঙ্গিতে জেরবার মহানগর।
ডেঙ্গির প্রতিষেধক নেই। নিরাময়েরও নির্দিষ্ট ওষুধ নেই। নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বলতে মশা নিধন। অথচ মশার বংশ নিশ্চিহ্ন করা অসম্ভব। একমাত্র ভরসা ছিল বেশ কয়েক পশলা বৃষ্টি, যা ধ্বংস করে দিতে পারে স্থির জলে জমা মশার ডিম। কিন্তু গত বেশ ক’দিন যাবৎ কলকাতা ও শহরতলির কপালে তা-ও জুটছিল না।
বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ সেই প্রাকৃতিক দাওয়াইকেই এনে হাজির করেছে। পতঙ্গবিদদের আশা, ঝমঝমিয়ে নামা ওই কয়েক পশলার বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছে ডেঙ্গিবাহী এডিস ইজিপ্টাই ও ম্যালেরিয়াবাহী অ্যানাফেলিস স্টিফেনসাই মশার বেশ কিছু আঁতুড়ঘর। জমে থাকা পরিষ্কার জলে ডিম ফুটে যে লার্ভা বেরিয়েছিল, সেগুলোর পঞ্চত্বপ্রাপ্তি ঘটেছে।
পতঙ্গ-বিশেষজ্ঞেরা অবশ্য চান, বৃষ্টি চলুক আরও ক’দিন। ডাবের খোলা, খোলা কৌটোয়, পরিত্যক্ত টায়ারে যেখানে এডিস ইজিপ্টাই ডিম পেড়েছে, সব জলে উপচে পড়ুক। ভেসে যাক ডেঙ্গি-বাহকের পরবর্তী প্রজন্ম। কলকাতা পুরসভার পতঙ্গ-বিশেষজ্ঞ দেবাশিস বিশ্বাসের কথায়, “এই বৃষ্টিটা ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার মশার আঁতুড়কে খানিকটা নষ্ট করে দেবে। ইতিমধ্যে বহু ডাবের খোলা, কৌটোয় জমে থাকা জল উপচে লার্ভা ভেসে গিয়েছে। দেখতে হবে, ওগুলো যেন আর পড়ে না থাকে।”
অঝোর বর্ষণে ডেঙ্গি-মুক্তির আশা দেখছে শহর। মঙ্গলবার রণজিৎ নন্দীর তোলা ছবি।
আবহাওয়া দফতরের আশা, বৃষ্টিটা অন্তত আজ, বুধবার পর্যন্ত থাকবে। আলিপুর আবহাওয়া অফিসের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “সোমবার বঙ্গোপসাগরে ওড়িশা উপকূলের কাছে তৈরি নিম্নচাপের দরুণ আবহাওয়ায় পরিবর্তন ঘটেছে। তবে ওটা খুব তাড়াতাড়ি স্থলভূমিতে ঢুকে পড়েছে। তা মধ্য ভারতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা।”
তাই আজ, বুধবারেও কলকাতা ও আশপাশে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছেন আবহবিদেরা। বস্তুত বর্ষার আসল সময়ে, অর্থাৎ জুন-জুলাই-অগস্টে মহানগরে বৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে বিস্তর কম। অগস্টের শুরুটা ভাল হলেও মাস শেষ হয়েছে ২৩% ঘাটতি বৃষ্টির বোঝা নিয়ে। উপরন্তু মাঝে-মধ্যে যেটুকু বৃষ্টি নেমেছে, তা-ও ছিল সামঞ্জস্যহীন।
এবং মহানগরে ‘ডেঙ্গি-রাজ’ কায়েমের জন্য অনাবৃষ্টিকে অনেকাংশে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের বক্তব্য: মুষলধারে বর্ষণ না-হওয়ায় জল জমে থাকার সুযোগ পেয়েছে, বেড়েছে মশার বংশবৃদ্ধির মওকাও। এর সুরাহা হতে পারত নিম্নচাপ, যা এ বার বর্ষার প্রথম তিন মাসে ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে কার্যত গরহাজির। তা ছাড়া বৃষ্টি না-হলেও জুন-জুলাই-অগস্টে গড়ে কুড়ি দিন করে আকাশ ছিল মেঘে ঢাকা। তাতে রোগ-জীবাণু ও তাদের বাহকদেরই পোয়াবারো হয়েছে। কী ভাবে?
আয় বৃষ্টি...
হঠাৎ বৃষ্টিতে মাতোয়ারা স্কুলফেরত খুদে। ছবি: সুমন বল্লভ।
বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা: এমন পরিবেশই মশার প্রজননের পক্ষে অনুকূল। আর বাহক মশার যত বাড়বাড়ন্ত হবে, ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার জীবাণুরাও তত বেশি পাবে বংশবৃদ্ধির সুযোগ। “যদিও ভাগ্য ভাল, ডেঙ্গি ভাইরাসের দাপট বাড়লেও ম্যালেরিয়া সংক্রমণ এ বার তেমন ছড়ায়নি।” মন্তব্য এক পরজীবী-বিশেষজ্ঞের।
এ মরসুমে অগস্টে এক দিনে কলকাতায় সর্বোচ্চ বৃষ্টির পরিমাণ ৩৭.৬ মিলিমিটার। সেখানে মঙ্গলবার বারো ঘণ্টায় কলকাতায় ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আবহবিদেরা বলছেন, নিম্নচাপটি শক্তি অক্ষুণ্ণ রেখে ওড়িশার উপরে আরও ক’দিন থেকে গেলে দক্ষিণবঙ্গের বৃষ্টি-ভাগ্য দীর্ঘায়িত হবে।
নচেৎ কাল, বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টি কমবে। বসে থাকতে হবে পরবর্তী নিম্নচাপের মুখ চেয়ে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.