প্রশ্ন: পর্তুগাল চলে যাচ্ছেন। আবার কবে দেশে ফিরবেন?
সুনীল: দেশের হয়ে খেলার জন্য যখনই ডাক পাব, তখনই আমি আসার জন্য প্রস্তুত। তবে দেখতে হবে সেই ম্যাচ বা টুর্নামেন্ট ফিফা-ক্যালেন্ডারের তারিখ মেনে হচ্ছে কি না। একমাত্র তা হলেই পর্তুগালের ক্লাব আমাকে ছাড়বে।
প্র: সেটা ফেডারেশনকে জানিয়েছেন?
সুনীল: নিশ্চয়ই। কোচকে বলেছি। ফেডারেশন সচিব কুশল দাসকে বলেছি। শুনলাম, অক্টোবরে দু’টো ফিফা নির্ধারিত আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলবে ভারত। সেখানে ডাকলে আমার পর্তুগালের ক্লাবকে বলব আমাকে ছেড়ে দিতে। সেক্ষেত্রে অন্তত বাহাত্তর ঘণ্টা আগে আমি ইন্ডিয়া শিবিরে পৌঁছে যাব। ফিফার নিয়মে যা আছে। কুশলস্যরকে বলেছি, আরও অনেক আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলি খেলানোর ব্যবস্থা করুন। তা হলে দেখবেন আমরা আরও উন্নতি করব।
প্র: কী ধরনের টিমের সঙ্গে খেলার কথা বলছেন?
সুনীল: আমি বলছি না, সার্ক দেশগুলোর টিম খারাপ। মলদ্বীপ ভাল। নেপাল ভাল। কিন্তু ওদের সঙ্গে আমরা অনেক খেলেছি। এটাও বলছি না, আর্জেন্তিনা, ব্রাজিলের সঙ্গেই খেলতে হবে। এমনকী জাপানও নয়। তবে ক্যামেরুন ম্যাচ সবার চোখ খুলে দিয়েছে। ওরা এমন একটা দেশ যাদের সবাই ভয় পায়। এ বার আমাদের খেলা উচিত সৌদি আরব, দক্ষিণ কোরিয়া, কাতার, লেবাননের মতো দলগুলোর সঙ্গে। তাতে ভারতের ফিফা র্যাঙ্কিং বাড়বে। ফুটবলারদের আত্মবিশ্বাসও বাড়বে। আমি জোর দিয়ে বলছি, কালই আমাদের নেহরু কাপ চ্যাম্পিয়ন টিমটাকে কোরিয়া বা সৌদির বিরুদ্ধে নামিয়ে দিন, দেখুন কী খেলবে। আমি একা নই। দেশের জন্য নবিদা, সুব্রত, মাঙ্গী (গৌরমাঙ্গী সিংহ), মেহতাব, লেনিরাও জান লড়িয়ে দেবে। |
প্র: আপনার তা হলে আই লিগে কোনও ক্লাবের হয়ে খেলার সম্ভবনা নেই।
সুনীল: বেশ কয়েকটা ক্লাবের প্রস্তাব আমার কাছে যে নেই তা বলব না। তবে স্পোর্টিং দ্য লিসবনের সঙ্গে আমার চুক্তি তিন বছরের। আপাতত সেটা ভাঙার কোনও সম্ভাবনা দেখছি না। এখনও ঠিক আছে, ওখানেই সামনের দু’বছর খেলব। তার পর যা ভাবার ভাবব।
প্র: ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে আপনিই একমাত্র প্লেয়ার, যিনি বিদেশি ক্লাবের সঙ্গে এত দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করেছেন। ‘হোমসিক’ হয়ে পড়বেন না তো?
সুনীল: আমাদের দেশের অন্য ফুটবলাররাও এ রকম দীর্ঘ দিনের চুক্তিতে বিদেশের ক্লাবে খেলে না কেন, সেটা ভাবলেই আশ্চর্য লাগে। ক্যামেরুনকে আমরা যারা হারালাম, তাদের অনেকেই কিন্তু বিদেশে আমার মতো চুক্তি করে খেলতে পারে। সেই ক্ষমতা আছে। কিন্তু সমস্যা হল, সে রকম কিছু ভাবে না। ফুটবলারকে এক জন এজেন্ট রাখতে হবে। নিজস্ব আইনজীবী থাকা চাই। তাঁরাই বিদেশি ক্লাবের সঙ্গে কথা বলবেন। এতে ফুটবলারও সমস্যায় পড়বে না। ক্লাবও না। দেখুন না, টোলগের ঝামেলাটা কত দিন চলল! তবুও দেরিতে হলেও ব্যাপারটা মিটেছে। কে ঠিক, কে ভুল, বলব না। কিন্তু ফুটবলারদের নিজেদের শিক্ষিত হতে হবে। এজেন্ট ঠিক করে, বিদেশে খেলার কথা ভাবতে হবে। ভারতেও ক্লাবগুলোর সঙ্গে ফুটবলারদের চুক্তির জন্য একটা ‘মডেল’ তৈরি করা দরকার। শুনলাম, সেটা হচ্ছে।
প্র: নেহরু কাপ জয়ের হ্যাটট্রিক হল। প্রথম দু’বার বব হাউটনের কোচিংয়ে। এ বার কোভারম্যান্সের কোচিংয়ে। দু’জনের মধ্যে পার্থক্য?
সুনীল: ওই ভাবে দেখার মানে হয় না। এটা বাজে বিতর্ক। আমাদের দেশেই এটা হয়। হাউটন এক ধরনের ছিলেন। ভারতীয় ফুটবলের উন্নতির জন্য অনেক কিছু করেছেন। ওর কোচিংয়ে আমরা অনেক ট্রফি পেয়েছি। কোভারম্যান্সের সবচেয়ে বড় গুণ, খুব পজিটিভ। ঠিক আমার মতোই। কোনও ব্যাপারেই লড়াই থেকে সরতে নারাজ। তা ছাড়া নিজস্ব একটা ভাবনা নিয়ে চলেন। সেটা নিয়ে নেহরু কাপের সময় সুব্রত, নবিদা, মাঙ্গী, আমার মতো টিমের সিনিয়র ফুটবলারদের সঙ্গে কথাও বলতেন। বারবার জানতে চাইতেন, কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না। আর একটা বড় ব্যাপার, কোভারম্যান্স সবাইকেই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলান। রিজার্ভ বেঞ্চ বলে কিছু রাখেন না। দেখুন না, কত ভাল ছেলে উঠে এল এ বারের নেহরু কাপ থেকে। সঞ্জু, লেনি, ফ্রান্সিস, নির্মল। কোচ তো বলছিলেন, ফেড কাপ থেকে আরও কিছু ফুটবলার বাছবেন।
প্র: কিন্তু ভারতের ক্লাব ফুটবলে দেশের অধিনায়ককেই দেখা যাবে না?
সুনীল: সেটা কেন বলছেন? আমি তো সারা জীবনই বাড়ির বাইরে থেকেই ফুটবল খেলেছি। আমার কাছে জেসিটি, মোহনবাগানে খেলাও যা, পতুর্গালে খেলাও তাই। সেই তো বাড়ির বাইরেই থাকতে হবে। তবে কলকাতার ক্লাব-সমর্থকদের মনোভাব বদলাতে হবে। এক জন স্ট্রাইকার প্রত্যেক ম্যাচেই গোল পায় না। ফুটবলার সব সময় পুরো একশো ভাগ সুস্থ থাকে না। খেলতে নেমে চোট লাগতেই পারে প্লেয়ারের। কেউ ইচ্ছে করে মাঠের বাইরে বসে থাকতে চায় না।
প্র: নেহরু কাপ জয় কাকে উৎসর্গ করলেন?
সুনীল: অবশ্যই আমার পরিবারকে। ওঁরা আমার জন্য যা করে ...! |