আপনাদের মনে যে প্রশ্নগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে তার উত্তরের খোঁজে এই লেখাটা খুঁটিয়ে পড়তে বসবেন তো? আগেভাগেই বলে দিচ্ছি, সচিন তেন্ডুলকর লোকটার আত্মসম্মানবোধ প্রচণ্ড প্রখর। ও কখনওই নিজেকে এমন জায়গায় নামাবে না, যেখানে ওকে নিয়ে লোকে ঠাট্টা করতে পারে। সচিন যদি বিশ্বাস করে ওর মধ্যে এখনও খেলা বেঁচে আছে, তা হলে সেটাই সত্যি। নিজের তৈরি অবিশ্বাস্য মাপকাঠি দিয়ে সারা জীবন যে নিজেকে মেপেছে, সেই লোকটা কি নিজেকে ক্যারিকেচারের পর্যায়ে নামাবে?
পরের ইনিংসে যদি সচিন দুর্দান্ত একটা সেঞ্চুরি করে, তখন কী হবে? যারা ওর লাইন-লেংথ বিচার করার ক্ষমতা, তথাকথিত খারাপ ফুটওয়ার্ক, বুড়িয়ে যাওয়া রিফ্লেক্স আর দৃষ্টিশক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, তখন তারা কোথায় দাঁড়াবে? সচিনের মতো জিনিয়াস নিয়ে যখন আলোচনা হয়, তখন আমাদের মতো রক্ত-মাংসের সাধারণ মানুষের চুপ করে থাকাটাই উচিত। মনে রাখবেন এর আগে যত বার আমরা সচিনের সমালোচনা করার ভুল করেছি, তত বারই ও ঘুরে দাঁড়িয়ে জবাব দিয়েছে। বারবার আমাদের একই ভুল করে যাওয়াটা তাই চূড়ান্ত বোকামি ছাড়া আর কী?
সচিনের আউটগুলোর প্রসঙ্গে আসি। হ্যাঁ, ও কিছুটা স্লো ছিল। হ্যাঁ, ওর আরও এগিয়ে এসে খেলা উচিত ছিল। কিন্তু তাই বলে কি আমরা সবাই বলছি যে, ওর ফ্রন্টফুট আর দেড় ইঞ্চি এগিয়ে আসেনি বলেই সচিন তেন্ডুলকর শেষ হয়ে গিয়েছে? ভাবা যায়! ভুলে যাবেন না, এই লোকটা এর চেয়ে অনেক কঠিন সমস্যা কাটিয়ে উঠেছে। টেনিস এলবো, ভাঙা আঙুল, পায়ের চোট, পিঠের যন্ত্রণাঅতীতে সব কিছুকেই সচিনের মানসিক শক্তির কাছে হার মানতে হয়েছে। নিজের সম্পর্কে, নিজের ব্যাটিং সম্পর্কে সচিনের চেয়ে বেশি আর কে জানবে? সবাই ভুল বিষয় নিয়ে আলোচনা করে যাচ্ছি। |
এই মুহূর্তে ভারতের দরকার ফিট এবং মানসিক ভাবে চাঙ্গা সচিনকে। যদি না আপনি ভেবে থাকেন দ্রাবিড়-লক্ষ্মণের একসঙ্গে অবসর নেওয়ায় ভারতীয় দলে খুব বড় শূন্যতা তৈরি হয়নি। কিংবা যদি আমাদের ওপেনারদের ফর্ম আপনাকে ভাবিয়ে না তোলে। অথবা যদি বিরাট কোহলি বাদে বাকি মিডল অর্ডারের ক্ষমতা নিয়ে আপনি প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী না থাকেন। বা আপনার বদ্ধমূল ধারণা থাকে যে, আমাদের অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেটাররা এখনই সিনিয়র দলের জন্য তৈরি।
যাক গে, বেঙ্গালুরু টেস্ট নিয়ে কিছু বলি। কয়েকবার হোঁচট খেয়ে জিতল ভারত। দুটো ইনিংসেই ভারতীয় ব্যাটিংকে টানল কোহলি। আর সেটা করল পাঁচ নম্বরে নেমে বেশ চাপের মুখে। আমার সবচেয়ে ভাল লাগল আক্রমণ আর রক্ষণে ওর ভারসাম্য দেখে। ইনিংসের শুরুতে যে ভাবে চাপ নিয়েও ঠান্ডা মাথায় ব্যাট করে গেল, সেটাও কম প্রশংসনীয় নয়। সত্যি, কোহলি এখন বিশ্বমানের ক্রিকেটার। ব্যাটিংয়ে কোহলি যা করেছে, বোলিংয়ে ঠিক সেটাই করেছে অশ্বিন। কিউয়িরা দ্বিতীয় টেস্টে অনেক উন্নতি করলেও সেটাকে ‘ঘুরে দাঁড়ানো’ বলা যায় না। দিশেহারা ভারতীয় দলের সামনেও ওরা দাঁড়াতে পারল না। এ সবের মধ্যে ভারতীয় অধিনায়কের অবদানের কথা ভুললে অবশ্য চলবে না। ওয়ান ডে ক্রিকেটে যে রকম কর্তৃত্ব নিয়ে ব্যাট করে, টেস্টেও ধোনিকে সেই মেজাজে দেখে ভাল লাগল। |