হুগলির ধনেখালি থেকে ডেনমার্কের বিয়ার কারখানার তৃতীয় ইউনিট আপাতত বিহারে সরছে না। তৃণমূলের স্থানীয় ‘সিন্ডিকেটের জুলুমে’ অতিষ্ঠ হয়েই ওই ইউনিটটি বিহারে সরাতে চান বলে রাজ্য সরকারকে জানিয়েছিলেন কারখানা কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কারখানা কর্তৃপক্ষের সমস্যা মিটিয়ে দিয়েছি। নতুন ইউনিটটির জন্য ওঁরা ১০০ কোটি টাকা লগ্নি করবেন এ রাজ্যে।” আর হুগলি জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘তৃণমূলের নাম জড়িয়ে কেউ যদি কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অভব্যতা করেন, দল সে ক্ষেত্রে কড়া ব্যবস্থা নেবে।” দল সূত্রের খবর, এই ‘বার্তা’ পৌঁছে গিয়েছে এ ব্যাপারে অন্যতম অভিযুক্ত ধনেখালির তৃণমূল নেতা সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও। যদিও সোমবারের মতো এ দিনও সুব্রতবাবু দাবি করেছেন, কারখানা থেকে এলাকায় হওয়া দূষণের সমস্যা ‘ঢাকতে’ কর্তৃপক্ষ ‘জুলুমে’র ‘ভিত্তিহীন’ অভিযোগ করেছেন।
২০০৯ সালে ধনেখালির বেলমুড়িতে একটি বহুজাতিক সংস্থার ওই কারখানায় বিয়ার উৎপাদন শুরু হয়। কারখানার দু’টি ইউনিটে এখন মাসে আড়াই লক্ষ ক্রেট বিয়ার তৈরি হয়। কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি সেখানে তৃতীয় একটি ইউনিট (ক্যানড বিয়ার) চালু করার সিদ্ধান্ত নেন। বিষয়টি জানাজানি হতেই ঝামেলার সূত্রপাত। কারখানা কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, দ্বিতীয় ইউনিট তৈরি হওয়ার পর থেকেই গোলমাল শুরু করে তৃণমূলের একাংশ। ‘সিন্ডিকেট’ খাড়া করে তারা নানা রকম ‘চাপ’ দিতে থাকে। তোলা হয় দূষণের ‘মিথ্যা’ অভিযোগ।
পক্ষান্তরে ওই এলাকার তৃণমূল নেতা সুব্রতবাবু বলেন, “কোনও সিন্ডিকেট বা কারখানার অচলাবস্থার সঙ্গে দলের কেউই জড়িত নন। গ্রামবাসী ওই কারখানার দূষণ নিয়ে প্রশ্ন তোলাতেই কারখানা কর্তৃপক্ষ নানা বাহানা করছেন। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অফিসে যাওয়ায় ওঁরা গ্রামবাসীদের হেনস্থা পর্যন্ত করেন।” যদিও কারখানা সূত্রের খবর, সুব্রতবাবু এ ব্যাপারে ফোনে হুমকি দিয়েছেন বলে কারখানার মালিক সংস্থার রিজিওনাল এইচআর ম্যানেজার অভিজিৎ বসু ধনেখালি থানায় অভিযোগ করেছেন। সুব্রতবাবু ওই অভিযোগও মানেননি।
মঙ্গলবার আনন্দবাজারে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হতেই প্রশাসন এবং তৃণমূল নেতৃত্ব নড়েচড়ে বসে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে ‘দ্রুত ঝামেলা মেটাতে’ নির্দেশ যায় জেলা নেতৃত্বের কাছে। ধনেখালির তৃণমূল বিধায়ক অসীমা পাত্র সমস্যা সমাধানে মধ্যস্থতা করেন। জেলা পুলিশও কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে। কারখানার এক পদস্থ কর্তা বলেন, “এই পরিস্থিতিতে আমরা আপাতত অন্য রাজ্যে ইউনিট সরানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখেছি।” |