মমতার পথেই ঝাড়খণ্ড, রাজনীতির হাতিয়ার হয়ে উঠছে ‘নাগরির জমি’ |
ঝাড়খণ্ডের আগামী নির্বাচনী রাজনীতি নাগরির জমি-বিতর্ককে ঘিরেই ঘুরপাক খেতে চলেছে। নাগরিকে হাতিয়ার করার রাজনৈতিক প্রয়াসের ফলে টানাপোড়েন অব্যাহত। গত কাল মূলত এই বিতর্ককে সামনে রেখে ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চার (জেভিএম) সচিবালয় ঘেরাও আন্দোলনে যে ভাবে গোলমাল পাকিয়ে উঠেছে, তাতে সিঁদুরে মেঘ দেখছে ক্ষমতাসীন সরকারের জোট শরিকরা। নাগরিকে হাতিয়ার করতে মরিয়া জেএমএম, বিরোধী কংগ্রেসও। কিন্তু বাবুলাল মরান্ডির নেতৃত্বে জেভিএম যে ভাবে এই বিষয়টিকে কব্জা করেছে, তা নিয়ে লাগাতার আন্দোলন সংগঠিত করছে, তার ধারে কাছেও তারা যেতে পারেনি। অন্য দিকে, মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকার সুবাদে বিজেপি-ও বিষয়টি নিয়ে সে ভাবে এগোতে পারছে না। সেই কারণে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর।
প্রতিবেশী পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস যে ভাবে সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের জমি বিতর্ককে হাতিয়ার করে ৩৪ বছরের ক্ষমতাসীন সরকারকে সরিয়ে দিয়েছে, সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত ঝাড়খণ্ডের রাজনৈতিক নেতারা। কার্যত মমতার পথেই নাগরিকে একটি রাজনৈতিক বিষয় হিসেবে তুলে ধরার ইচ্ছে সকলেরই রয়েছে। কিন্তু বিরোধী কংগ্রসের সেই ক্ষমতা নেই। দলেরই এক নেতার কথায়, “এই ধরণের বিষয় নিয়ে আন্দোলন সংগঠিত করতে গেলে আমাদের দলীয় হাইকমান্ডের অনুমোদন প্রয়োজন। কিন্তু কেন্দ্রে এবং বিভিন্ন রাজ্যে ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের পক্ষে এমন আগুন নিয়ে খেলা বিপজ্জনক। পরে তা বুমেরাং হয়ে আসতে পারে। সেই কারণে আমাদের সতর্ক হয়ে পা ফেলা উচিত।” |
|
|
|
অর্জুন মুন্ডা |
বাবুলাল মরান্ডি |
শিবু সোরেন |
|
অন্য দিকে, শিবু সোরেনের নেতৃত্বাধীন ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) নাগরি নিয়ে প্রথম থেকেই কৃষকদের পক্ষে দাঁড়ালেও, সরকারের শরিক হয়ে এই ধরনের সরকার-বিরোধী আন্দোলনকে খুব বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। জেএমএমের এক শীর্ষ স্থানীয় নেতার কথায়, “পিছু টান নিয়ে এই ধরনের আন্দোলন সফল করা সম্ভব নয়। সরকারেও থাকব আবার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনও করব, এটা সাধারণ মানুষের কাছে খুব বিশ্বাসযোগ্য হবে না।” সেই কারণে জেএমএমের একটি অংশ চাইছে, আগামী নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য রেখে, সরকার থেকে বেরিয়ে এসে নাগরি-আন্দোলন সংগঠিত করে তা সারা রাজ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হোক। আন্দোলনের রাশ থাক জেএমএমের হাতে। তবেই রাজনৈতিক ভাবে জেএমএম লাভবান হবে। বিষয়টি নিয়ে দোলাচলে রয়েছে জেএমএম নেতৃত্ব।
কিন্তু জেভিএমের কোনও দায় নেই। জাতীয় রাজনীতির কথা তাদের ভাবতে হচ্ছে না। দ্বিতীয় কথা, ক্ষমতা হারানোর ভয়ও তাদের নেই। আর সব থেকে বড় কথা দলের নেতৃত্বে রয়েছেন বাবুলাল মরান্ডির মতো দক্ষ, কুশলী ও দূরদর্শী রাজনীতিক। রাজ্যে বিজেপি-র আজকের সংগঠনের রূপকার এই মরান্ডি। ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠনের পর তৎকালীন বিজেপি নেতা বাবুলাল মরান্ডিই প্রথম মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি ছাড়ার পর গত কয়েক বছরে তিনি সফল ভাবেই দলীয় সংগঠন তৈরি করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন হয়ে জামশেদপুর লোকসভা আসন থেকে ইস্তফা দেন রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা। কিন্তু উপনির্বাচনে আসনটি ধরে রাখতে ব্যর্থ হয় বিজেপি। তৃতীয়, চতুর্থ স্থানে গিয়ে দাঁড়ায় জেএমএম, কংগ্রেস। জেভিএম প্রার্থীকে জিতিয়ে আনেন মরান্ডি। এ হেন মরান্ডির নেতৃত্বেই গতকাল নাগরি নিয়ে সচিবালয় অভিযানে নামে জেভিএম। জোট সরকারের প্রধান শরিক বিজেপি তাই আতঙ্কিত।
গত কালের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা ইতিমধ্যেই বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। গন্ডগোলে এক ব্যক্তির মৃত্যু নিয়ে জেভিএমের কাঁধে দায় চাপাচ্ছে বিজেপি। পাল্টা হিসেবে মুন্ডা সরকারের কড়া সমালোচনা করেছে জেভিএম নেতৃত্ব। তাঁদের বক্তব্য, মানুষ মারার জন্যই তো সমাবেশের কাছে লাঠি, বন্দুক, টিয়ার গ্যাস আর জলকামান-সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করেছিল মুন্ডা সরকার। মারার জন্য বন্দুকধারী পুলিশও মোতায়েন ছিল। তাঁদের প্রশ্ন, কিন্তু একটিও অ্যাম্বুল্যান্স ধারে কাছে ছিল না কেন?
তবে আজ জানা গিয়েছে: লাঠি, টিয়ার গ্যাস কিংবা জলকামানে নয়, ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চার (জেভিএম) কালকের বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশের গাড়ির ধাক্কাতেই ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। মৃতের নাম বলো ওঁরাও (৪৬)। তিনি রাজ্য পূর্ত বিভাগের কর্মী ছিলেন। রাঁচির ডিবডিহ এলাকায় তিনি থাকতেন। জানা গিয়েছে, জেভিএমের সমাবেশে যোগ দিতে তিনি আসেননি। দিনের কাজ সেরে ফেরার সময় ওই ভিড়ে তিনি আটকে পড়েন। ভিড় কাটিয়ে এগোতে গিয়েই তিনি পুলিশের একটি গাড়ির ধাক্কায় গুরুতরভাবে জখম হন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে তাঁর মৃত্যু হয়। রাঁচির পুলিশ সুপার (শহর) বিপুল শুক্ল জানিয়েছেন, কাল গভীর রাতে ওই মৃত ব্যক্তির দেহ শনাক্ত করা হয়। শুক্ল স্বীকার করেন, পুলিশের গাড়ির ধাক্কাতেই ওই ব্যক্তি জখম হন। পুলিশই তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার অল্প সময় বাদেই তিনি মারা যান।
আজ দলীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে জেভিএম নেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বাবুলাল মরান্ডি মৃত ওই সরকারি কর্মীর বাড়িতে যান। শোকার্ত পরিবারকে সমবেদনা জানান। আর্থিক সহায়তা-সহ প্রয়োজনে ওই পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতিও তিনি দিয়েছেন। পাশাপাশি, পুলিশের গাড়ির ধাক্কায় মৃত ওই সরকারি কর্মীর পরিবারের একজনের চাকরির দাবিও জানিয়েছেন জেভিএম নেতৃত্ব। একই দাবি জানিয়েছেন জোট সরকারের অন্যতম প্রধান শরিক, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চাও। |