শ্রীলঙ্কার পুণ্যার্থীদের বাসে হামলা তামিলনাড়ুতে |
দক্ষিণ ভারতে এসে হামলার শিকার হতে হল শ্রীলঙ্কার পুণ্যার্থীদের। তামিলপন্থী প্রতিবাদীরা আজ দু’বার চড়াও হন ওই পুণ্যার্থীদের উপরে।
তামিলনাড়ুর ভেলানকান্নিতে প্রার্থনা সেরে নাগাপট্টিনম ফেরার পথে ১৭৮ জন পুণ্যার্থীর তিনটি বাস আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেন তামিলপন্থীরা। পুণ্যার্থীদের মধ্যে ৭৫ জন মহিলা এবং ৩৬ জন শিশুও রয়েছে। এই ঘটনায় কেউ আহত হয়নি বলে পুলিশ দাবি করলেও আবার তিরুচিরাপল্লি বিমানবন্দর যাওয়ার পথে ফের পুণ্যার্থীদের বাস লক্ষ্য করে পাথর, লাঠি ছোড়ে বিক্ষোভকারীর দল। সাতটির মধ্যে তিনটি বাসের জানলার কাচ ভেঙে দেয়। এক পুণ্যার্থী বলেন, “ছোটবেলা থেকে আমরা তামিল বলে আসছি। গত ১৫ বছর ধরে তামিলনাড়ুর এই সব জায়গায় আসছি। খুবই খারাপ লাগছে।”
একই দিনে পর পর দু’বার এ ভাবে হামলার জেরে স্বাভাবিক ভাবেই উদ্বিগ্ন শ্রীলঙ্কা সরকার। পুণ্যার্থীদের ফেরাতে সে দেশের সরকার বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা করছে। চেন্নাইয়ে শ্রীলঙ্কার ডেপুটি হাই কমিশন আর কে এ এ রাজাকরুণা বলেছেন, “আমাদের পুণ্যার্থীদের হেনস্থা করা হচ্ছে।
পাথর ছুড়ে মারা হচ্ছে। তাই পুণ্যার্থীদের ফেরানোর ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দিয়েছে আমাদের সরকার।” পুলিশ অবশ্য হামলা চালানোর ঘটনায় ‘নাম তামিঝাড় ইয়াক্কম’ নামে একটি গোষ্ঠীর তামিলপন্থী ন’জন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে।
শ্রীলঙ্কার পুণ্যার্থীদের হেনস্থার জেরে সে দেশের সরকার নাগরিকদের দক্ষিণ ভারত সফরে যেতে নিষেধ করছে। শ্রীলঙ্কার বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, “তামিলনাড়ুতে পর্যটন, তীর্থ করতে, বা খেলতে আসা শ্রীলঙ্কার মানুষকে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। কিন্তু এ ধরনের সফরে দু’দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বাড়ে। সেটা থাকছে না, এ জন্য শ্রীলঙ্কা সরকার দুঃখিত।” দিল্লিতেও ভারতের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, ‘‘শ্রীলঙ্কার নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য ভারত সব রকম চেষ্টা করছে। তামিলনাড়ু সরকারের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।”
গত কাল সন্ধ্যায় পুন্ডি মাধায় শ্রীলঙ্কার পুণ্যার্থীরা প্রার্থনায় যান। সেখানেও ‘নাম তামিঝাড় ইয়াক্কম’-এর সদস্যরা তাঁদের ফিরে যাওয়ার দাবিতে অবস্থান বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভকারীদের মুখে স্লোগান: ‘সিংহলিরা দূর হটো।’ এর আগে রবিবার তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা নিজেও শ্রীলঙ্কার একটি কলেজের ফুটবল দলকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই দলটি চেন্নাইয়ের শুল্ক বিভাগের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচ খেলতে এসেছিল। কিন্তু কেন তাঁদের ভারতে ঢুকতে দেওয়া হল, তা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনাও করেন জয়ললিতা। পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার একটি স্কুলের আট জন ছাত্র এবং তাদের প্রশিক্ষক এসেছিলেন একটি টুর্নামেন্টে যোগ দিতে। তাদেরও ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় তামিলনাড়ুর সরকারের তরফে।
এমনকী ভারতের মাটিতে শ্রীলঙ্কার সেনাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিরুদ্ধেও শাসকদল এডিএমকে-র সঙ্গে একজোট হয়ে বিরোধিতা করছে ডিএমকে-সহ তামিলনাড়ুর অন্য রাজনৈতিক দলগুলো। তাদের অভিযোগ, এলটিটিই-র বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে শেষ দফার লড়াইয়ের সময় দ্বীপরাষ্ট্রের সেনা এক সময় তামিলদের উপরে যুদ্ধাপরাধ চালিয়েছে। তাই সেই সেনাকে ভারতের মাটিতে মেনে নিতে আপত্তি রয়েছে তামিলনাড়ুর। |