বাদল অধিবেশন যত শেষের পথে, সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণের তীব্রতা তত বাড়াচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্ব। কয়লা কেলেঙ্কারি প্রশ্নে সংসদ চলতে না দেওয়ার পর এ বার পৃথক তেলেঙ্গানার দাবি নিয়েও পথে নামল দল।
কয়লাখনি বণ্টন-বিতর্কে প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফার দাবি থেকে আপাতত সরে এসে সংসদ চালাতে বণ্টিত কয়লার ব্লক বাতিল করা ও নিরপেক্ষ বিচারবিভাগীয় তদন্তের শর্ত চাপিয়েছে প্রধান বিরোধী দল। কিন্তু কংগ্রেস এই দাবি মানবে না বুঝে সরকারের বিরুদ্ধে সুর আরও চড়াচ্ছে বিজেপি। আর তাতে তাদের নতুন অস্ত্র তেলেঙ্গানা। আজ অন্ধ্রপ্রদেশের বিজেপি নেতা-সমর্থকদের একটি দল প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির সামনে ধর্নায় বসার
পরিকল্পনা নেওয়ায় তাদের গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশ। ‘শান্তিপূর্ণ অভিযানে বলপ্রয়োগ করা হয়েছে’, এই অভিযোগ তুলে আগামিকাল তেলেঙ্গানার দাবিতে যন্তরমন্তরে বিক্ষোভ দেখাবেন লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজের মতো শীর্ষ বিজেপি নেতারা।
চলতি বাদল অধিবেশন কার্যত ভেস্তে যাওয়ার জন্য আজ ফের বিজেপিকে বিঁধেছে কংগ্রেস। জবাবে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলি বলেন, “সরকার বণ্টন বাতিল করতে রাজি নয়। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে, বণ্টনে সরকারের স্বার্থ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যদি কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়ে চুপ থাকাই পছন্দ করেন, তা হলে দেশবাসীকে ধরে নিতে হবে, তাঁর কাছে কোনও জবাব নেই।” রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, বিজেপির দাবি মেনে বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়ায় কংগ্রেসের বিশেষ সমস্যা নেই। কিন্তু বণ্টন বাতিলের যে দাবি বিজেপি তুলেছে, তা মানা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কেন না, সে ক্ষেত্রে কয়লা মন্ত্রকের তৎকালীন দায়িত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে।
বিজেপি নেতৃত্ব জানিয়েছে, বণ্টন বাতিল না হলে সংসদ চলতে দেওয়ার প্রশ্ন নেই। কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী চিকিৎসার জন্য বিদেশে। কাজেই কংগ্রেসের কৌশল নতুন করে বদলের সম্ভাবনা নেই। ফলে বাদল অধিবেশনের শেষ চার দিনও সংসদ সুষ্ঠু ভাবে চলবে না বলেই মনে করছে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। সরকারি সূত্রে খবর, এই পরিস্থিতিতেই কিছু প্রয়োজনীয় বিল পাশ করিয়ে নেবে সরকার।
বিজেপি বুঝতে পারছে, সরকারের পক্ষে বণ্টন বাতিলের দাবি মানা সম্ভব নয়। কিন্তু সংসদ শেষ হওয়ার পরেও যাতে কয়লা নিয়ে সরকারকে বিব্রত করা যায়, সে ব্যাপারে পরিকল্পনা নিচ্ছে দল। বিজেপি চাইছে, শীতকালীন অধিবেশন পর্যন্ত বিষয়টিকে জিইয়ে রাখতে। যাতে তখনও সনিয়া-মনমোহনকে অস্বস্তিতে ফেলা সম্ভব হয়। আজ বৈঠকে বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ জানান, আগামী দিনে কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়ে দেশ জুড়ে আন্দোলনে নামবে দল। কয়লা কেলেঙ্কারি থেকে যে কংগ্রেস ‘মোটা মাল’ কামিয়েছে, সেই বিষয়টি এখন আম-আদমির সামনে তুলে ধরার পরিকল্পনা নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
এর পাশাপাশি সংসদে পেশ হওয়া কয়লা কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত সিএজি রিপোর্টটি পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) কাছে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে বিজেপি। দলের এক নেতার কথায়, “পিএসি-তে রিপোর্টটি নিয়ে আলোচনা যত এগোবে, তত বণ্টন সংক্রান্ত অনিয়মের নতুন তথ্য সামনে আসবে।” দল মনে করছে, শীতকালীন অধিবেশন পর্যন্ত কয়লা-বিতর্ক জিইয়ে রাখতে গেলে ওই তথ্যপ্রমাণ তাদের বড় হাতিয়ার হবে। |