ঘরে ঘরে তৈরি হোক ‘চিত্রাঙ্গদা’! চাইছে তৃণমূল মহিলা কংগ্রেস।
মণিপুরের রাজকন্যাকে শিকার, যুদ্ধবিদ্যা, রাজ্যশাসনের কৌশল-শিক্ষায় পারদর্শী করে তুলেছিলেন তাঁর বাবা। আর সংগঠনের মহিলাদের ‘স্বনির্ভর, আত্মরক্ষা, আত্মমর্যাদায় সচেতন ও মানুষের সেবায় নিয়োজিত’ করার কাজে হাত দিতে চাইছেন মহিলা তৃণমূল নেতৃত্ব।
ব্লক স্তরে কর্মশালা করে সংগঠনের মহিলাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি নারী-উন্নয়নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী কী প্রকল্প করেছেন, তার প্রচার করা হচ্ছে। এই লক্ষ্যে কুড়ি পাতার একটি পুস্তিকা তৈরি করে সংগঠনের কর্মীদের মধ্যে বিলি করছেন তৃণমূলের মহিলারা। রবীন্দ্রনাথের ‘চিত্রাঙ্গদা’র লাইন উদ্ধৃত করে পুস্তিকাটির নাম রাখা হয়েছে ‘নহি সামান্যা নারী’। সংগঠনের রাজ্য সভানেত্রী তথা রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “ঠিকই তো! আমরা নহি দেবী, নহি সামান্যা নারী। রবীন্দ্রনাথের চিত্রাঙ্গদার মতোই আমরা মেয়েদের কাছে বার্তা দিতে চাইছি, ‘যদি পার্শ্বে রাখ মোরে সঙ্কটে সম্পদে, সম্মতি দাও যদি কঠিন ব্রতে সহায় হতে, পাবে তবে তুমি চিনিতে মোরে।’ অর্থাৎ সমাজে মহিলাদের গুরুত্ব কতটা, তা বোঝাচ্ছি।” সংগঠনের মহিলাদের সামনে ‘রোল মডেল’ তৃণমূল নেত্রী তো আছেনই, তার সঙ্গে চন্দ্রিমারা হাতে তুলে দিচ্ছেন ‘নহি সামান্যা নারী’।
প্রকাশ্যে স্বীকার না-করলেও সম্প্রতি রাজ্যে মহিলা নির্যাতনের নানা ঘটনায় বিব্রত প্রধান শাসক দলের অনেকেই। তৃণমূলের মহিলা সংগঠনে এই মুহূর্তে লাখ তিরিশ কর্মী আছেন বলে দাবি চন্দ্রিমাদের। এত মহিলা যে সংগঠনে আছেন, যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজে মহিলা, সে রাজ্যেই নারী নির্যাতনের অভিযোগ কেন উঠছে? চন্দ্রিমা বলেন, “নারী নির্যাতন একটা সামাজিক ব্যাধি। সেই ব্যাধি দূর করার কাজে, এমনকী বিষয়টি নিয়ে অপপ্রচার বন্ধেও মহিলাদেরই অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার বার বলেন, ‘চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোম’। তাই তৃণমূল স্তর থেকে মহিলাদের সমাজ গড়ার কাজে তৈরি করতে নেমেছি।”
পুস্তিকাটিতে মহিলা-কল্যাণে, বিশেষত, ‘অসহায় ও নির্যাতিতা’ মহিলাদের পাশে সরকার কী ভাবে দাঁড়াতে চায়, তা বোঝানো হয়েছে। মহিলা পরিচালিত থানা তৈরি থেকে শুরু করে স্বামী পরিত্যক্তা এবং বিধবা, সংখ্যালঘু মহিলাদের পুনর্বাসনের জন্য সরকার কী কী কর্মসূচি নিয়েছে, তা সবিস্তার জানানো হয়েছে পুস্তিকাটিতে। সংগঠনের কার্যনির্বাহী সভানেত্রী, বিধায়ক স্মিতা বক্সী, মালা সাহাদেরও বক্তব্য, মহিলাদের স্বনির্ভর করে তোলা এবং সরকারের সব রকম সহায়তার আশ্বাসের কথা বোঝাতেই ‘নহি সামান্যা নারী’র আত্মপ্রকাশ।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই পুস্তিকাটি ‘হাতিয়ার’ করে মহিলাদের ‘চিত্রাঙ্গদা’ তৈরির কাজ শুরু করেছেন চন্দ্রিমারা। নিজেদের বাড়ি বা পরিবার তো বটেই, এলাকায় যে কোনও সামাজিক ব্যাধি দূর করতে মহিলাদেরই ‘মুখ্য ভূমিকা’ নেওয়ার বার্তা দেওয়া হচ্ছে রীতিমতো ব্লক স্তর থেকেই। মহিলাদের জন্য রাজ্য সরকারের ‘কল্যাণ প্রকল্পে’র প্রচারে ও সামাজিক ব্যাধি দূর করতে ‘চিত্রাঙ্গদা’দের নামানোর জন্য প্রশিক্ষনও শুরু হচ্ছে। এমনকী, মহিলা তৃণমূলের সংগাঠনিক স্তরেও রদবদল করা হয়েছে। বিভিন্ন মহিলা জনপ্রতিনিধিকে সংগঠনের নেতৃত্বে নিয়ে আসা হয়েছে। সংগঠনের দক্ষিণ কলকাতা জেলার সদ্য সভানেত্রী হওয়া কাউন্সিলর জুঁই বিশ্বাসও বলেন, “সব মহিলারাই আত্মরক্ষার বিষয়ে সচেতন। আবার মানুষের সেবা করাও মহিলাদের সহজাত প্রবণতা। কিন্তু মহিলাদের স্বনির্ভর ও আত্মমর্যাদার বোধ থাকা জরুরি।”
সেই সঙ্গে মহিলাদের ক্যারাটে বা জুডোও শিক্ষার উপরেও গুরুত্ব দিয়েছেন সংগঠনের মহিলাদের একাংশ। তাঁদের অভিমত, পঞ্চায়েত ভোটের আগে মহিলা সংগঠনের এক ‘উজ্জ্বল ভাবমূর্তি’ গড়ে তোলাই নেতৃত্বের লক্ষ্য। কারণ, এ বার পঞ্চায়েত ভোটে মহিলাদের জন্য ৫০% আসন সংরক্ষিত করা হয়েছে। সেই বিপুল সংখ্যক আসনে ‘যোগ্য’ প্রার্থী দেওয়া বেশ ‘কঠিন’ বলে মনে করেন নেত্রীরা। তাই ‘চিত্রাঙ্গদা’ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে জোর কদমে।
পঞ্চায়েত ভোট-যুদ্ধে তৃণমূলের ‘চিত্রাঙ্গদা’রা কী করেন, এখন সেটাই দেখার! |