অনাস্থা এনেও সিপিএমের পুরপ্রধানকে হারাতে পারল না তৃণমূল। তার জেরে সোমবার বাঁকুড়ার সোনামুখীতে প্রকাশ্যে এল তৃণমূলের ‘অন্তর্দ্বন্দ্ব’। এমনকী দলীয় বিধায়কের বাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগও উঠেছে তৃণমূলের এক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি সামালাতে লাঠি হাতে মাঠে নামতে হয় পুলিশকে।
বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “অনাস্থা নিয়ে সোনামুখীতে উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগে বেশ কয়েক জনকে আটক করা হয়েছে। বাড়ি ভাঙচুর নিয়ে বিধায়ক কোনও অভিযোগ করেননি।”
পুরসভা সূত্রে খবর, গত পুরভোটে ১৫টির মধ্যে ৮টি আসন (সিপিএম ৭ এবং আরএসপি ১) পেয়ে বামফ্রন্ট পুরবোর্ড গঠন করেছিল। তৃণমূল ৬টি ও তৃণমূল সমর্থিত নির্দল ১টি আসন পায়। পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনুন্নয়নের অভিযোগ তুলে গত ১ অগস্ট অনাস্থা এনেছিলেন পুরসভায় বিরোধী দলনেতা, তৃণমূলের সুরজিৎ মুখোপাধ্যায়-সহ ৭ জন বিরোধী কাউন্সিলর। সোমবার ছিল অনাস্থা সংক্রান্ত ভোটভুটি। |
বিধায়কের বাড়িতে হামলার অভিযোগে গ্রেফতার। ছবি: শুভ্র মিত্র |
বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক অদীপ রায় জানান, ভোট চলাকালীন ১৪৪ ধারা জারি ছিল। ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ছিলেন সোনামুখীর বিডিও। দুপুর ১টা নাগাদ জানা যায়, আস্থাভোটে ৮-৭ ভোটে জিতেছে বামফ্রন্ট। তার পরই শুরু হয় স্থানীয় বিধায়ক তথা তৃণমূল কাউন্সিলর দীপালি সাহার অনুগামীদের সঙ্গে জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি সুরজিৎবাবুর অনুগামীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। হামলা হয় বিধায়কের বাড়িতে। ইট-পাটকেল ছুড়ে তাঁর বাড়ির কাচ ভাঙা হয়। দীপালিদেবী কিছু না বললেও তাঁর অনুগামী তৃণমূল নেতা ব্রজ অধিকারীর অভিযোগ, “সুরজিতের লোকজন বিধায়কের বাড়ি ভাঙচুর করার পাশাপাশি লুঠপাটও করেছে।”
জেলা তৃণমূল সূত্রের খবর, সুরজিৎ-গোষ্ঠীর আনা অনাস্থা প্রস্তাবে সায় ছিল না দীপালিদেবীর। সেই কারণেই আস্থাভোটে দলের হারের পরে বিধায়কের বাড়িতে হামলা চালানো হয় বলে মনে করছেন তৃণমূলের একাংশ।
সোনামুখীর সিপিএম পুরপ্রধান কুশল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওদের তোলা অভিযোগ যে মিথ্যা এই জয়ই প্রমাণ করল।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্রের মন্তব্য, “ওরা জোর করে আমাদের বোর্ড ভাঙতে চেয়েছিল। এখন মারামারি করছে।” তাঁর অভিযোগ, “বাম কাউন্সিলরদের ওরা নিজেদের দলে টানার চেষ্টা করেছিল। তাতে তারা ব্যর্থ।”
জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ খাঁ অবশ্য ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে’র কথা অস্বীকার করে বলেন, “অনাস্থা সংক্রান্ত ভোটাভুটিতে হার কেন হল, খোঁজ নিয়ে দেখছি।” এই পরাজয় সম্পর্কে সুরজিৎবাবু বলেন, “বিষয়টি নিয়ে দলীয়স্তরে যা বলার বলব। তবে, বিধায়কের বাড়ি ভাঙচুরের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।” |