জাতীয় সড়কের বেহাল অবস্থা নিয়ে প্রকাশ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। গত বুধবারে নদিয়া জেলা সফরে এসে প্রশাসনিক বৈঠকের সময়ে ওই সড়ক দ্রুত সংস্কারের কথাও বলেছিলেন তিনি।
এলাকার বাসিন্দাদের কথায়, জাতীয় সড়কের এই বেহাল দশা দীর্ঘদিনের। দুর্ঘটনা এখানে নিত্য দিনের ঘটনা। রাস্তা সংস্কারের জন্য খোদ প্রধানমন্ত্রীর কাছেও যে জন্য দরবার করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তারপরেও পরিস্থিতির বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। জমি অধিগ্রহণ নিয়ে নানা টানাপোড়েনে জাতীয় সড়ক চার লেনের করার কাজও বিশেষ এগোয়নি। কলকাতা থেকে কৃষ্ণনগর আসার পথে বেহাল রাস্তায় কয়েকবার বিপজ্জনক ভাবে দুলে উঠেছিল মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগে রাস্তায় ‘প্যাচওয়ার্ক’ বা জোড়াতালি দিয়ে যতটা সম্ভব গর্ত ভাঙাচোরা অবস্থা সারানো হয়েছিল। তারপরেও রাস্তায় যে আসলে কতটা খারাপ, তা মুখ্যমন্ত্রীর নজর এড়ায়নি। তিনি বরং প্রশাসনকে বলেছিলেন, দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের সড়ক যোগাযোগের প্রধান রাস্তা ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক দ্রুত সংস্কার করতেই হবে। তাঁর নজরে পড়ে জাগুলিয়ার পর থেকে রানাঘাট, শান্তিপুর থেকে কৃষ্ণনগরে ঢোকার আগে রাস্তা খুবই বেহাল।
তার দু’দিনের মাথাতেই জাতীয় সড়ক সংস্কারের দাবিতে প্রায় এক ঘণ্টা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান শান্তিপুর-গোবিন্দপুর এলাকার মানুষ। গোবিন্দপুর এলাকায় এই সড়ক বেহাল দীর্ঘদিন। প্রতি বছর বর্ষার সময়ে ওই এলাকায় রাস্তা রীতিমতো বিপজ্জনক অবস্থায় চলে যায়। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু এলাকার মানুষের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী জেলা সফরের জন্য তড়িঘড়ি বালি আর ইটের গুঁড়ো দিয়ে গর্ত বোজানো হয়েছিল। সেই কারণে ওই এলাকা দিয়ে গাড়ি চলাচল করায় এখন সব সময়েই বাতাস ধুলোয় ভরে থাকছে। দোকানের ভিতরে, রাস্তার ধারের বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়ছে ধুলো। |
জেলাশাসক অভিনব চন্দ্রা বলেন, “জাতীয় সড়কের অবস্থা সত্যিই বেহাল। বিশেষ করে কৃষ্ণনগর থেকে জাগুলিয়া পর্যন্ত। আমরা প্রায় প্রতি সপ্তাহে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে সড়ক সংস্কারের কথা বলি। মুখ্যমন্ত্রী আসার আগে কিছুটা রাস্তা সংস্কার হয়েছে। কিন্তু সেটা যথেষ্ট নয়।” তিনি বলেন, “গত বছর আমরা স্থানীয় ভাবে রাস্তা সংস্কারে উদ্যোগী হয়েছিলাম। কিন্তু এই রাস্তা কেন্দ্রীয় সরকারের সম্পত্তি।”
ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটির নদিয়া-মুর্শিদাবাদ ডিভিশনের অধীনে রয়েছে কলকাতার দিক থেকে ৩১ কিলোমিটার থেকে ১৯৩ কিলোমিটার রাস্তা। তার মধ্যে ১১৫ কিলোমিটার থেকে ১৯৩ কিলোমিটার পর্যন্ত রাস্তা অর্থাৎ কৃষ্ণনগর থেকে বহরমপুর পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা অপেক্ষাকৃত ভাল। কিন্তু বারাসতের সন্তোষপুর থেকে কৃষ্ণনগর পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা বেহাল।
কিন্তু কেন বেহাল? জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, একটি ঠিকাদার সংস্থাকে নিয়ে আইনি লড়াইয়ের জন্যই কাজ আটকে পড়েছিল। জেলাশাসক বলেন, “আদালত রায় দিয়ে দিয়েছে। তাই আশা করছি, দ্রুত কাজ শুরু হয়ে যাবে।” জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, দশ কোটি টাকা খরচ করে প্রায় ২০ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কারের কাজ হবে। দুর্গাপুজোর আগেই কাজ হয়ে যাবে বলে তাঁরা মনে করছেন। তবে বর্ষার জন্য কাজ বিলম্ব হচ্ছে।
এলাকার মানুষের অবশ্য দাবি, বর্ষার সময়ে কাজ করা হবে কেন? প্রথম দফার কাজ শীতেই করে ফেলা উচিত। তারপরে বর্ষার পরে ফের আর এক দফা কাজ করা দরকার। তাতে সড়ক ঠিক থাকে। তবে প্রশাসনের দাবি, এই রাস্তাটি সরু এবং তার উপরে দিবারাত্র প্রচণ্ড গাড়ির চাপ থাকে। তাই সারানোর জন্য সুযোগ ও সময় পাওয়াই শক্ত। তাই প্রতি বছরই সংস্কারের কাজ করা হলেও তা বেশিদিন ঠিক থাকে না। তাঁদের বক্তব্য, রাস্তার দু’পাশে অনেক বাড়ি থাকায় অনেক জায়গাতেই জল বেরোনোর জায়গা পাওয়া যায় না। জল জমে থাকে রাস্তার উপরেই। তাতে রাস্তার ক্ষতি হয়।
তবে জেলাশাসকের বক্তব্য, “জাতীয় সড়কের ৮ শতাংশ মতো রাস্তায় নিকাশির সমস্যা থাকতে পারে। বাকিটা ফাঁকা জায়গা।”
ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটির নদিয়া-মুর্শিদাবাদ ডিভিশনের প্রকল্প অধিকর্তা জগন্নাথ সামন্ত বলেন, “৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সংস্কারের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বিস্তারিত কথা হয়েছে। ফলে এই বিষয়ে আর কোনও মন্তব্য করতে চাই না।” |