|
|
|
|
কেশপুরে তৃণমূলের ‘দ্বন্দ্ব’ |
শাসক দলে ‘বিক্ষুব্ধ’, তাই ফের ঘরছাড়া |
সুমন ঘোষ • মেদিনীপুর |
১৯৯৮ থেকে ২০১২।
১৪ বছরে বদলেছে অনেক কিছু। বদলে গিয়েছে রাজ্যপাট। ‘লাল-দুর্গে’ এখন ‘ঘাস-ফুল’ ফুটেছে। তবু, ‘ঘরছাড়া’ তকমা ঘোচেনি কেশপুরের শতাধিক মানুষের।
এক সময় ‘বিরোধী’ তৃণমূল করার ‘অপরাধে’ ঘর ছেড়েছিলেন। আর এখন ঘরছাড়া ‘বিক্ষুব্ধ’ তৃণমূল হওয়ায়এমনই অভিযোগ করছেন মেদিনীপুর শহরের ধর্মার কাছে নির্মীয়মাণ লজে ত্রাণ শিবির করে থাকা শতাধিক তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। এঁদের নেতা নেপাল ঘোষ, গোলাম মোর্তাজা, আব্দুল মান্নানদের দাবি, ঘরছাড়ার সংখ্যাটা ৪৯১। সোমবার অবশ্য শিবিরে পাওয়া গেল প্রায় একশো জনকে, সকলেই পুরুষ। অধিকাংশই রাতে শিবিরে থাকেন না। শহরের নানা জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাত কাটাচ্ছেন।
তৃণমূলের ‘রাজত্বে’ও ঘরছাড়া?
নেপালবাবুদের দাবি, “আমরা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্লোগান ‘বদলা নয়, বদল চাই’-কে বাস্তবে রূপ দিতে চেয়েছিলাম। সেই কারণে কেশপুরে দলীয় নেতা চিত্ত গরাই, আশিস প্রামাণিক, এমনকী দলের বর্তমান ব্লক সভাপতি মহিউদ্দিনের কাজের প্রতিবাদ করেছি। তাই ১৯৯৮ সালের মতো আজও ঘরছাড়া। তখন সিপিএমের সন্ত্রাসে ঘর ছাড়তে হয়েছিল, এখন দলীয় রোষেই ঘরছাড়া!”
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি দীনেন রায় অবশ্য বলেন, “আমাদের কেউ ঘরছাড়াদের তালিকা দেয়নি। দিলে দলীয় ভাবে তাঁদের ফেরানোর ব্যবস্থা করা হবে।” আর কেশপুরের নতুন ব্লক সভাপতি শেখ মহিউদ্দিনের অভিযোগ, “কিছু লোকের গণ্ডগোল পাকানোর প্রবণতা ছিল। |
|
মেদিনীপুর শহরে নির্মীয়মাণ লজেই এখন ঠাঁই নিয়েছেন তৃণমূলের ‘বিক্ষুব্ধ’ কর্মী-সমর্থকরা। —নিজস্ব চিত্র |
তারাই এখন আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করতে মেদিনীপুরে গিয়ে নাটক করছে!” কেশপুরের সিপিএম বিধায়ক রামেশ্বর দলুই বলেন, “ওদের দ্বন্দ্ব কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, মানুষ দেখছেন। আমরা চাই কেশপুরে শান্তি বজায় থাকুক। প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভাবে ব্যবস্থা নিতে বলব।”
এক কালে সিপিএম-তৃণমূল ‘দ্বৈরথে’ নিত্যদিন অস্থির হত পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর। পরে কেশপুরে সিপিএমের নিরঙ্কুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। গত বিধানসভা নির্বাচনের পরে এখন তৃণমূলের গোষ্ঠী-কোন্দলে এলাকায় উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। ‘পরিবর্তনে’র পরে প্রথমে চিত্ত গরাই, পরে আশিস প্রামাণিক এবং অতি সম্প্রতি শেখ মহিউদ্দিনকে ব্লক সভাপতি করে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সামাল দিতে চেয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। স্থানীয় বাসিন্দাদেরক অবশ্য বক্তব্য, এই ভাবে সুরাহা তো হয়ইনি, উল্টে গজিয়ে উঠেছে নতুন নতুন গোষ্ঠী। যার জেরে ছড়াচ্ছে অশান্তি। ‘বিক্ষুব্ধ’ তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী সিপিএমের কায়দাতেই এলাকায় ‘সন্ত্রাস’ সৃষ্টি করছে। সিপিএম নেতা-কর্মীদের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে। তার জেরেই নতুন করে কেশপুর ছাড়তে হয়েছে নেপাল-গোষ্ঠীর লোকজনকে। ‘প্রতিবাদী মঞ্চ’ গড়ে নেপালবাবুরা মেদিনীপুরে দলীয় কার্যালয়ে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন। পুরনো তৃণমূল কর্মী নেপাল ঘোষকেই দলের ব্লক সভাপতি করার দাবি তুলেছেন এই ‘ঘরছাড়ারা’।
ধর্মার শিবিরে ঠাঁই নেওয়া দামোদরচক, ইছাইপুর, আমড়াকুচি, মালাঞ্জা, দোগাছিয়া-সহ কেশপুরের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা পালিয়ে এসেছেন মেদিনীপুরে। ইছাইপুরের শামসুল হক বলেন, “সিপিএমের আমলে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হত। বাধ্য হয়েই সকলকে নিয়ে ঘর ছাড়তে হত। এখন সেই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি নেই। তবে বাড়ির লোকজনকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। যেহেতু প্রথম থেকেই কিছু নেতার অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি. তাই আমাদের উপরে ক্ষোভ বেশি। ভয়েই বাড়ি ছেড়েছি।”
সমস্যা সমাধানে আজ, মঙ্গলবার দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের সঙ্গে করতে যাচ্ছেন এই ‘বিক্ষুব্ধ’রা। গোলাম মোর্তাজা বলেন, “মুকুলবাবু আগেও সুরাহার আশ্বাস দিয়েছিলেন। আবার ডেকেছেন। দেখি উনি কী পরামর্শ দেন। তার পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করব।”
|
|
|
|
|
|