ভালুক-বাঁদর আইন-বিরুদ্ধ, কুকুরেই বুক বেঁধেছেন হান্টার
লিন গেঞ্জিটার হাতা দু’টো সামনের পায়ে গলিয়ে পরানো। গলায় কবেকার ম্লান এক শিকলির মালা। মাথায় মার্বেল পেপারের খয়াটে টুপি।
লে ভেলকি লে...জ্বলন্ত রিংয়ের মধ্যে দিয়ে নির্ভুল লাফ, সামনের দু-পা তুলে টলমল হাঁটা, চোখ মটকালেই মরচে পড়া ডিব্বার উপরে সটান বসে পড়ে লম্বা জিভ ঝুলিয়ে হাঁফাতে থাকে সে। ‘‘বাঃ বেটা বাঃ’’...মনিবের প্রশ্রয়ে বাঁকানো লেজ নেড়ে আনুগত্য প্রকাশ করে পাঁশুটে রঙের নিতান্তই নেড়ি, হিরো। ইতস্তত করে ডান পা’টা এগিয়ে দেয়, করমর্দনের জন্য। “জিতে রহ বেটা”, তাঁর শিরা ওঠা আঙুল গলকম্বলে ঈষৎ আদর ছড়িয়ে দেয়।
এনামেলের তোবড়ানো বাটিতে টুং টাং পয়সা পড়ে আট আনা, এক টাকা। নকশালবাড়ির বাজার মোড়ে মাদারির অনর্গল ঢোল ঝিমিয়ে আসে ধীরে। রোজগার গুনে তোলার ফাঁকে মেচি নদীর উত্তুঙ্গ হাওয়ায় চুল ঠিক করে নকশালবাড়ির ‘ইয়াসিন’ হান্টার বলেন, “আপাতত হিরোই আমার ভরসা। একে কেউ আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে পারবে না বাবু, মা কসম...!”
প্রথমে ভাল্লুক, তারপর ডজনখানেক বাঁদরের পরে আটপৌরে এই দিশি কুকুর হিরোই এখন রাকু, বকু, হান্টারদের রুজির নয়া ‘তরিকা’।
খেলা দেখানোর ফাঁকে হিরোর সঙ্গে হান্টার। কিশোর সাহার তোলা ছবি।
ভালুক থেকে সারমেয়, রুজির এই পরিক্রমা অগোছাল ভাবে সাজিয়ে দেন হান্টার, “প্রথমে ভালুকের খেলা দেখাতাম। তা বনবাবুরা (পড়ুন বন বিভাগের কর্মী) আইন দেখিয়ে তাকে ছিনিয়ে নিল। বন থেকে ফাঁদ পেতে বাঁদর ধরলাম আমরা। তা, সেও এক দিন কেড়ে নিল বনবাবুরা।” আর ভুল করেননি হান্টার। নেপাল সীমান্তে খেলা দেখানোর ফাঁকে নজর পড়েছিল ছোট্ট সারমেয়-শাবকটার দিকে। “তখনই বেশ তন্দুরস্ত্ ছিল”, বলেন হান্টার। ‘হিরে’ চিনতে ভুল করেননি মাদারি। হিরোকে বুকে তুলে নিয়েছিলেন। শুধু দড়ির খেলা, রিংয়ের মধ্যে দিয়ে খুদেদের ঝাঁপ দেখে ‘পাবলিক’ আর তেমন খুশি হয় না। হান্টার জানান, একটু পশুর কেরামতি না থাকলে এনামেলের বাটি ‘ফাঁকা’ই পড়ে থাকে। তাই রাস্তার কুকুরদের ‘ট্রেনিং’ দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন তাঁরা।
মাস কয়েক আগেও তাঁদের ঠিকানা ছিল অসমের ধুবুরি। গোলমাল দেখে হু হু রাস্তায় দলবল নিয়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে শিলিগুড়ি। সেখান থেকে বাগডোগরা হয়ে নেপাল সীমান্তে তাঁবু ফেলেছেন হান্টার। বয়সে ঈষৎ প্রবীণ রাখু যাযাবর জানান, বাপ-ঠাকুর্দার পেশায় ভালুক নাচ দেখিয়েই দিন গুজরান শুরু হয়েছিল তাঁদের। কিন্তু বনের আইন বড় ‘কড়া’। এক দিন শহরে খেলা দেখানোর ফাঁকে তাই বনবাবুরা এসে নিয়ে গেল ভালুক। এল বাঁদর।
হান্টারের কথায়, “এক দিন খেলা দেখাচ্ছি। ‘দুই পাবলিক’ আমাদের আটকে ফোন করে বনবাবুদের ডাকল। বাঁদরও ছিনিয়ে নিল।” কিন্তু যাযাবরের বাঁদর, জঙ্গলে পোষাবে কেন? হান্টার বলেন, “বেশ কয়েকটা ফিরেও এসেছিল। কিন্তু আর ভরসা হল না। এই সময়েই মেচির ধারে কুড়িয়ে পাই হিরোকে। ব্যাস! ওর পিছনে লেগে পড়ি। সেই এখন আমাদের মাদারি কা খেল-এর হিরো।”
পথের কুকুর নিয়ে খেলে দেখানো-ও কি আইনবিরুদ্ধ? উত্তরবঙ্গ জুড়ে অসুস্থ পথ-কুকুরদের সেবা যত্ন করে বেড়ায় যে সংস্থাটি, তার কর্তা শ্যামা চৌধুরী বলেন, “রাস্তার কুকুর বলে হেলাফেলার জিনিস নয়। বছর কয়েক আগে কলকাতায় রাস্তার তিন-চারটি কুকুর একটি পরিত্যক্ত শিশুকে রাতভর আগলে রেখেছিল। ওদের ঠিকঠাক ট্রেনিং দিলে দারুণ দক্ষ হয়। তা ছাড়া, রাস্তায় অনিশ্চিত জীবনের চেয়ে যাযাবরদের সঙ্গে থাকলে ভালই তো।”
দড়ি, বাঁশ, ভাঙা সাইলে আর চুলে তেল না-পড়া ছোট্ট মেয়েটার সঙ্গে মেচি নদীর দিকে তাঁর হালের ঠিকানায় হাঁটতে থাকেন যাযাবর। অনর্গল লেজ নেড়ে তাঁর সঙ্গ নেয় হিরো। ভালুক, বাঁদর গেছে, ‘মা কসম’ তাঁর হিরোকে কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না!

বন্যেরা বনে
গত বছর মালয়েশিয়ায় পাচার করার সময় ধরা পড়ে ১৯২টি কচ্ছপ। শুশ্রূষার জন্য রাখা ছিল চিড়িয়াখানায়। সোমবার বন দফতরের কর্তারা জঙ্গলে ছেড়ে দিলেন তাদের।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.