পায়ের তলায় শ্বাস ফেলছে ‘ইয়েলোস্টোন’, উদ্বিগ্ন বিজ্ঞানীরা
র এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করলে চলবে না। এখনই পৌঁছতে হবে ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক। ওখানে চার্লির কাছে রয়েছে ‘রক্ষাকবচ’ ম্যাপটা। মেয়েকে নিয়ে ছুটলেন জ্যাকসন।
যখন পৌঁছলেন তত ক্ষণে ইয়েলোস্টোনের পাতালপুরীতে ঘুমিয়ে থাকা দৈত্যের ঘুম ভেঙে গিয়েছে। পায়ের তলায় মাটি থরথর করে কাঁপছে। ঘুম ভেঙেই লাভা উদ্গিরণ করতে শুরু করেছে সুপার আগ্নেয়গিরি ‘ইয়েলোস্টোন’।
সত্যি নয়, গল্প। এক হলিউডি ফিল্মের। ছবির নাম ‘২০১২’।
তবে বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, খুব শিগগিরি ছবির পর্দা থেকে বাস্তবে নেমে আসতে চলেছে এ দৃশ্য।
তার নৈসর্গিক শোভার টানে প্রতি বছর ‘ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কে’ আসেন কয়েক লক্ষ পর্যটক। পাহাড়ি পথ, সবুজ উপত্যকা আর অরণ্যের দিনরাত্রির স্বাদ পেতে ‘ইয়েলোস্টোন’ প্রকৃতিপ্রেমীদের তীর্থক্ষেত্র। অথচ তাঁরা ঘূণাক্ষরেও টের পান না পায়ের তলায় লুকিয়ে আছে সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত। প্রতি মুহূর্তে যার নিঃশ্বাস টের পাচ্ছেন আতঙ্কিত ভূ-বিজ্ঞানীরা।
ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে উষ্ণ প্রস্রবণ ওল্ড ফেথফুল।
পর্যটকদের কাছে ইয়েলোস্টোনের আর এক আকর্ষণ এর উষ্ণ প্রস্রবণ। ‘ওল্ড ফেথফুল’। এর উষ্ণ জলের ধারা বয়ে চলেছে অভয়ারণ্যের বুক চিড়ে। নীল আর সবুজের মিশেলে ধাঁধিয়ে যায় চোখ। কিন্তু এই ‘ওল্ড ফেথফুল’-এর দিকেই অবিশ্বাসী নজরে তাকাচ্ছেন ভূবিজ্ঞানীরা। এর অস্তিত্বেই অশনি সঙ্কেত দেখছেন তাঁরা।
কেন? বিজ্ঞানীরা বলছেন, ইয়েলোস্টোনের নীচেই ঘুমিয়ে আছে এক ভয়ানক দৈত্য এক সুবিশাল আগ্নেয়গিরি। যার ঘুম ভাঙলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে প্রায় গোটা আমেরিকা। বদলে যেতে পারে পৃথিবীর মানচিত্র।
প্রকৃতির এমন বীভৎস রূপ মানুষ এখনও দেখেনি, বললেন ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কের ভূতত্ত্ববিদ হ্যাঙ্ক হেসলার। উদাহরণ দিতে গিয়ে হেসলার বলেন, ১৯৮০ সালের ১৮ মে জেগে উঠেছিল আমেরিকার উত্তর-পশ্চিমে ‘সেন্ট হেলেন’ আগ্নেয়গিরি। সে বার অগ্ন্যুৎপাতে মারা যান ৫৭ জন। হাজার মিটার পুরু ছাইয়ে ঢেকে গিয়েছিল সেন্ট হেলেনের আশপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। বিজ্ঞানীদের দাবি, ২১ লক্ষ বছর আগে ইয়েলোস্টোন যখন প্রথম জেগে উঠেছিল, তার রোষ ছিল সেন্ট হেলেনের থেকে ২৫ হাজার গুণ ভয়ানক। ১৩ লক্ষ বছর ও সাড়ে ছ’লক্ষ বছর আগে আরও দু’বার ইয়েলোস্টোনের ঘুম ভাঙার খবর পাওয়া যায় বিজ্ঞানীদের কাছে। তবে সে দু’বার ভয়াবহতা তুলনায় অনেক কম ছিল।
আগ্নেয়গিরি মনে পড়লেই যে পরিচিত চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে, ইয়েলোস্টোন কিন্তু একেবারেই সে রকম নয়। কোণাকৃতি চুড়োর বদলে বিস্তীর্ণ পাহাড়ি উপত্যকা-অরণ্য, যার নীচে শুয়ে আছে সুপার আগ্নেয়গিরি। কারণটা এ রকম লক্ষ লক্ষ বছর আগে যখন অগ্ন্যুপাত হয়েছিল, বিস্ফোরণে উড়ে গিয়েছিল গোটা অঞ্চলটাই। পরে মাটির নীচে চাপা পড়ে গিয়েছিল আগ্নেয়গিরি আর তার অসংখ্য জ্বালামুখ।
গোটা ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কটাকেই পরীক্ষাগার বানিয়ে ফেলেছেন ভূপদার্থবিদ বব স্মিথ। ইউটো বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইয়েলোস্টোন ভলক্যানো অবজারভেটরি’-র প্রধান এই বিজ্ঞানীর কথায়, ইয়েলোস্টোন হল “একটা জ্যান্ত আগ্নেয়গিরি, প্রতি মুহূর্তে যার নিঃশ্বাস টের পাওয়া যায়।” তিনি অবশ্য ইয়েলোস্টোনকে সুপার আগ্নেয়গিরি বলতে নারাজ। বরং ‘হটস্পট’ কথাটা তাঁর বেশি পছন্দ। কারণ, ওই এলাকার নীচে রয়েছে অসংখ্য জীবিত আগ্নেয়গিরি। অনেকটা আইসল্যান্ড এবং হাইয়াই দ্বীপপুঞ্জের মতো। পার্থক্যটা শুধু, ওই সব জায়গায় জলের নীচে রয়েছে ছোটবড় অসংখ্য জ্বালামুখ। আর ইয়েলোস্টোনে তা রয়েছে মাটির নীচে।
গোটা অঞ্চলটার উপর নজর রাখছে স্মিথের দলবল। মাটিতে বেশ কয়েক বার মৃদু কম্পন টের পেয়েছেন তাঁরা। স্মিথের দাবি, মাটির প্রায় ৮ কিলোমিটার গভীরে রয়েছে আগ্নেয় শিলা। বয়ে চলেছে লাভার স্রোত। তারও নীচে রয়েছে ৫৭ হাজার কিলোমিটার গভীর উত্তপ্ত পাথর। ইয়েলোস্টোনের উষ্ণ জলের ধারার ‘জ্বালানি’ এই সুবিশাল স্তরগুলি।
কিন্তু এ সব তো নতুন কিছু নয়। দীর্ঘদিন ধরেই তো এ ভাবে ঘুমিয়ে রয়েছে ইয়েলোস্টোন সুপার আগ্নেয়গিরি। তার জেগে ওঠার চিন্তায় হঠাৎ কেন ঘুম ছুটল বিজ্ঞানীদের?
স্মিথ জানান, পুরনো হিসেব বলছে মোটামুটি আট লক্ষ বছর অন্তর জেগে উঠেছিল ইয়েলোস্টোন। শেষ বার অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল সাড়ে ছ’লক্ষ বছর আগে। সুতরাং তার ঘুম ভাঙার সময় আসন্ন। ২০০৪ আর ২০১০ সালে দু’বার আগ্নেয়গিরিতে মৃদু কম্পন লক্ষ করেন তিনি। মাটির স্তর কিছুটা উপরেও উঠে এসেছিল। কিন্তু কিছু দিন পরে ফের আগের অবস্থায় ফিরে আসে ইয়েলোস্টোন। তবে এখনই ভয় পেতে বারণ করছেন স্মিথ। তাঁর মতে, ছোটখাটো কিছু ভূমিকম্প আর সামান্য অগ্ন্যুৎপাত হলেও বড় কিছুর আশঙ্কা এখনই নেই। আর সে ক্ষেত্রেও আগাম সতর্ক করে দেওয়ার জন্য তাঁরা প্রস্তুত।
২০১২-তেই ‘২০১২’-র কোনও আতঙ্ক নেই, স্পষ্ট জবাব স্মিথের। বরং তাঁরা বোঝার চেষ্টা করছেন ইয়েলোস্টোনের ভবিষ্যৎ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.