রাষ্ট্রপতি পদে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থনের প্রশ্ন নিয়ে বিতর্কের রেশ ধরেই সিপিএমের ছাত্র সংগঠনের থেকে দূরত্ব বজায় রাখার রাস্তায় হাঁটছে সিপিআইয়ের ছাত্র সংগঠন এআইএসএফ। দিল্লির দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন ছাত্র সংসদের নির্বাচনে এসএফআই-এর সঙ্গে কোনও রকম আসন সমঝোতায় না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। সূত্রের খবর, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের অনুমোদন সাপেক্ষেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে এআইএসএফ।
প্রণবকে সমর্থনের প্রশ্নে দ্বন্দ্ব প্রথম দেখা দিয়েছিল সিপিএমের মধ্যেই। এবং দলের ছাত্র সংগঠনই সেই প্রশ্ন তুলেছিল। দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সিপিএম ছাত্র নেতারা। বিদ্রোহ সামলাতে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা সংগঠন ভেঙে দেওয়া হয়। কিছু দিন আগে জেএনইউ-তে এক জনসভায় এ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন সিপিএমের পলিটব্যুরো নেতা সীতারাম ইয়েচুরি। তাঁকে বলা হয়, সাতের দশকে সিপিআই জরুরি অবস্থাকে সমর্থন করলেও দলের ছাত্ররা জেএনইউ-তে তার বিরোধিতা করেছিল। তখন কিন্তু সিপিআই তার ছাত্র সংগঠনের জেএনইউ-শাখা ভেঙে দেয়নি। তা হলে আজ সিপিএম কেন এমন করল?
নিজের রাজনৈতিক আঁতুড়ঘরে এমন প্রশ্নের মুখে পড়ে ইয়েচুরি জবাব দেন, সিপিআইয়ের মতোই তাদের ছাত্র সংগঠন এআইএসএফ-ও জরুরি অবস্থাকে সমর্থন করেছিল এবং সে সময় ছাত্র নেতা কমল মিত্র চেনয় জরুরি অবস্থার সমর্থনে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচার চালিয়েছিলেন। ইয়েচুরির এই মন্তব্যের পরেই বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে সিপিএম নেতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রচারে নেমেছে এআইএসএফ। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর জেএনইউ-র ছাত্র সংসদের নির্বাচন। ওই একই দিনে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদেও ভোট। এআইএসএফ-এর দিল্লি রাজ্য সভাপতি দুর্গেশ ত্রিপাঠি বলেন, “দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা এসএফআইয়ের সঙ্গে কোনও সমঝোতায় যাচ্ছি না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জেএনইউ-র বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও পরিস্থিতি সে দিকেই এগোচ্ছে।”
জরুরি অবস্থার সময় ইয়েচুরি নিজেও জেএনইউ-র ছাত্র এবং এসএফআই নেতা ছিলেন। তাঁরই সমসাময়িক এআইএসএফ-নেতা কমল মিত্র চেনয় এখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই অধ্যাপক। ইয়েচুরি নিজের অবস্থানে অনড়। আবার কমলবাবুর দাবি, ইয়েচুরি ভুল বলছেন। জেএনইউ-এর স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের এই অধ্যাপকের কথায়, “সে সময় এসএফআই নেতা প্রবীর পুরকায়স্থকে পুলিশ গ্রেফতার করার প্রতিবাদে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলাম। এর জন্য আমাকে তিন মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়। আমার অর্ধেক স্কলারশিপ বাতিল হয়ে যায়। সিপিএমের সব নেতাই সে কথা জানেন।” কমলবাবুর যুক্তিকে ভিত্তি করেই জেএনইউ ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিপিএমের বিরুদ্ধে প্রচারে নেমেছে এআইএসএফ। দলীয় সূত্রের বক্তব্য, দিল্লির দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচনে বরাবরই জাতীয় রাজনীতির প্রভাব পড়ে। গোটা দেশের রাজনৈতিক বিষয় নিয়েই সেখানে বিতর্ক হয়। সিপিএমের ‘ভুলের মাসুল’ যাতে তাঁদের গুণতে না হয়, সেই কারণেই এআইএসএফ দূরত্ব রাখছে এসএফআইয়ের থেকে। |