প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের চিন সফরের পরে দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধ মহড়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু ভিসা নিয়ে মতপার্থক্যের জেরে তা এক সময় বন্ধ হয়ে রয়েছে। আট বছর পরে চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভারত সফরে আসছেন। সব ঠিকঠাক ভাবে এগোলে ফের দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধ মহড়া শুরু হতে পারে আগামী বছর থেকে।
আগামিকাল চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল লিয়াং গুয়াংলির সঙ্গে এ কে অ্যান্টনির বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে আস্থা ও সামরিক বোঝাপড়া বাড়ানো নিয়ে কথা হবে। যৌথ যুদ্ধ মহড়া নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে সেখানেই।
শেষ বার চিনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী (জেনারেল কাও গাংতুয়ান) ভারতে এসেছিলেন ২০০৪ সালে। এর পর প্রণববাবু সে দেশে যান ২০০৬-এ। পরের বছরেই চিনের কুনমিংয়ে দু’দেশের যুদ্ধ মহড়া হয়। তার পরের বছর হয় কর্নাটকের বেলগাঁওয়ে। ভিসা বিতর্কের জেরে এই মহড়া স্থগিত হয়ে যায়। নর্দান আর্মি কম্যান্ডার লেফটেনান্ট জেনারেল বি এস জসওয়ালকে ভিসা দিতে অস্বীকার করে বেজিং। তাদের যুক্তি ছিল, জম্মু-কাশ্মীর ‘বিতর্কিত ভূখণ্ড’ এবং তার সামরিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউকে ভিসা দেওয়া সম্ভব নয়। এর পরেই দু’দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত আলোচনা বন্ধ হয়ে যায়। |
চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ভারত সফরের প্রতিবাদে তিব্বতিদের মিছিল। নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই |
বেজিং এখনও অরুণাচলের সেনা জওয়ানদের ভিসা না দেওয়ার বিষয়ে অনড়। মাঝেমধ্যেই ভারতীয় ভূখণ্ডে চিনা সেনার ঢুকে পড়ারও অভিযোগ ওঠে মাঝেমধ্যেই। গত ২২ অগস্টও চিনা সেনারা লেহ্-র কৌল গ্রামে ঢুকে উন্নয়নের কাজ বন্ধ রাখার হুমকি দিয়েছে বলে বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ। প্রধান বিরোধী দল এ নিয়ে চিনের সঙ্গে কথা বলার দাবি রেখেছে। ভারতের প্রতিরক্ষা কর্তাদের অন্যতম উদ্বেগের কারণ হল, পাকিস্তান থেকে মালদ্বীপ পর্যন্ত ভারতকে ঘিরে চিন সামরিক পরিকাঠামো গড়ে তুলছে। এ সব সত্ত্বেও মাঝারি স্তরে কিছু দ্বিপাক্ষিক আলোচনাও শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে। বেজিংয়ের তরফে তাদের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সফরের আগে আশা প্রকাশ করা হয়েছে, এই সফরে অনেক ভুল বোঝাবুঝিই কাটিয়ে ওঠা যাবে। সেই কারণে চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর প্রতিনিধি দলে সে দেশের সামরিক বাহিনীর সমস্ত শাখারই শীর্ষকর্তারা থাকছেন।
নভেম্বর মাসেই চিনে কমিউনিস্ট পার্টি ও সরকারে পালাবদল ঘটতে চলেছে। ৭১ বছরের জেনারেল লিয়াং-ও সরকার থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন। বেজিংয়ের তরফ থেকেই তাঁর ভারত সফরের অনুরোধ জানানো হয়। তাই চিনও দু’দেশের মধ্যে ক্ষত মেরামত করতে চাইছে বলে মনে করছে দিল্লি। কারণ সম্প্রতি ভারতের একটি সামরিক প্রতিনিধি দলকে তিব্বতে যাওয়ার অনুমতি দেয় বেজিং। চিনে ভারতের রাষ্ট্রদূতও সম্প্রতি সেখানে ঘুরে এসেছেন। এই পরিস্থিতিতে চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সফরকে গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছে নয়াদিল্লি। |