কল্পতরু ময়দানের সুইমিং পুল থেকে উদ্ধার হল এক কলেজ ছাত্রের দেহ। রবিবার রাতে ঝকঝকে ওই পুলের নীচ থেকে দেহটি উদ্ধার হয়। মৃতের পরিবারের অভিযোগ, খুন করা হয়েছে ওই ছাত্রকে। পুলিশ এই ঘটনায় তিন জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, ওই যুবকের দেহে আঘাতের চিহ্ন দেখে
|
রমেন সামন্ত। |
মনে করা হচ্ছে, এটি খুনের ঘটনাও হতে পারে।
পুলিশ জানায়, মৃত ছাত্রের নাম রমেন সামন্ত (২১)। বাড়ি বর্ধমান শহরের বড়নীলপুরের আনন্দপল্লিতে। রমেন বিবেকানন্দ কলেজে ইংরেজি অনার্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি যে সুইমিং পুলে নিয়মিত সাঁতার কাটতে যেতেন সেখানেই রবিবার রাতে তাঁর দেহটি মেলে। পুলিশ গিয়ে দেহটি উদ্ধার করে। সোমবার মৃতদেহের ময়না-তদন্ত হয়। রমেনের বাবা, একটি বিমা সংস্থার কর্মী দেবকুমার সামন্ত বর্ধমান থানায় অভিযোগ করেন, ছেলেকে পরিকল্পিত ভাবে বন্ধুরা বা সুইমিং পুলের কর্মীরা খুন করে জলে ফেলেছে বলে তাঁর বিশ্বাস।
বর্ধমান থানা সূত্রে জানানো হয়, ওই সুইমিং পুলে বেশ কিছু বেনিয়ম পুলিশের নজরে এসেছে। সেখানে কে বা কারা কখন সাঁতার কাটতে নামছেন, কখনই বা তাঁরা পুল ছেড়ে যাচ্ছেন, তা লিপিবদ্ধ করে রাখার কোনও ব্যবস্থা নেই। ছাত্রের দেহ উদ্ধারের ঘটনার পরে তল্লাশি চালানোর সময় ওই সুইমিং পুলের পাশ থেকে মদের বোতলও উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সুইমিং পুলের ইনচার্জ শঙ্কর সরকার, ইন্সট্রাক্টর প্রসেনজিৎ সোম এবং ওই সুইমিং পুল যে বেসরকারি সংস্থার তত্ত্বাবধানে চলে, তার আধিকারিক কেষ্ট ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। পরে অবশ্য তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। |
রমেনের পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, অন্য দিনের মতই তিনি রবিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ওই সুইমিং পুলে সাঁতার কাটতে যান। রাত সাড়ে ৯টা পেরিয়ে গেলেও না ফেরায় তাঁর মা বন্দনা সামন্ত ছেলের মোবাইলে ফোন করেন। কিন্তু সাড়া মেলেনি। মাঝে এক বার বন্দনাদেবীকে ফোন করে কেউ বলে, ‘আমি রমেন বলছি’। কিন্তু তার পরেই ফোন কেটে যায়। রাত ১০টা ১০ নাগাদ কেউ রমেনের ফোন থেকেই বন্দনাদেবীকে ফোন করে বলেন, আপনার ছেলে অসুস্থ। আপনি তাড়াতাড়ি আসুন। এর পরে দেবকুমারবাবু ও বন্দনাদেবী গিয়ে দেখেন সুইমিং পুলের নীচে পড়ে রয়েছে ছেলের দেহ।
দেবকুমারবাবুদের দাবি, জল থেকে তোলার পরে দেখা যায় রমেনের শরীরে প্রচুর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। কী করে এই ঘটনা ঘটল, তা জানতে গিয়ে তিনি দেখেন, সুইমিং পুল কর্তৃপক্ষের কেউ সেখানে নেই। ছেলের সঙ্গে থাকা দু’টি মোবাইল ফোনেরও হদিস পাননি তাঁরা। পরে অবশ্য পুলিশ সুইমিং পুলের ইনচার্জের কাছ থেকে ওই দু’টি মোবাইল উদ্ধার করে। দেবকুমারবাবুর প্রশ্ন, “যে ছেলে প্রতি দিন ওই সুইমিং পুলে গিয়ে সাঁতার কাটে, সে কী করে সেখানেই জলে ডুবে মারা যাবে?”
পুলের তত্ত্বাবধায়ক সংস্থার আধিকারিক কেষ্টবাবু অবশ্য এই ঘটনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “এখন সমস্ত কিছু দেখেন ওখানকার ইনচার্জ। আমার পক্ষে কিছু বলা সম্ভব নয়।” এই ঘটনায় শোকের ছায়া আনন্দপল্লি এলাকায়। প্রতিবেশী শৈবাল রায় বলেন, “ছেলেটিকে ছোট থেকে চিনি। ওকে ভাল ছেলে হিসেবেই জানি। লেখাপড়া, সাঁতার নিয়েই থাকত। একটি ভাল ছেলে এ ভাবে চলে যাওয়ায় খুব খারাপ লাগছে।”
|