মালদহের চাঁচলে রাজার আমলে তৈরি রাজবাড়ি লাগোয়া ঠাকুরবাড়িকে হেরিটেজ ঘোষণার দাবি তুলে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, এখন রাজা নেই। বিক্রি হয়েছে রাজবাড়ি। কিন্তু শুধু পুজোপাঠ নয় দেড়শো বছরের পুরনো মন্দিরকে ঘিরে মানুষের আবেগ সেই রাজার আমল থেকে একই রকম রয়েছে। কাগজেকলমে ওই ঠাকুরবাড়ির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে রাজ্য সরকারের অফিসিয়াল ট্রাস্টির অধীন চাঁচল রাজ ট্রাস্ট এস্টেট। কিন্তু আর্থিক সমস্যার জন্য সংস্কারের কাজ করা সম্ভব না হওয়ায় তা জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। অর্থিক সমস্যার কথা জানিয়ে মন্দির সংস্কারের জন্য পরিচালন সমিতি আগেই দ্বারস্থ হয় প্রশাসনের। এ বার ঠাকুরবাড়িকে হেরিটেজ ঘোষণার দাবিতে সরব হলেন বাসিন্দারা। রাজ্য সরকার দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে তাঁরা আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন। |
নারী ও সমাজকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “চাঁচলের বাসিন্দারা চিঠি দিয়ে তাঁদের দাবির কথা জানিয়েছে। ঠাকুরবাড়িকে ঘিরে তাঁদের গভীর আবেগ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, কোনও মন্দির বা মসজিদকে চাইলে অধিগ্রহণ করা যায় না। তার হেরিটেজ ভ্যালু কতটা সেটা প্রথমে দেখতে হবে। ওই কাজ হেরিটেজ কমিশনের পক্ষে করা সম্ভব।
চাঁচল রাজ ট্রাস্ট এস্টেট পরিচালন সমিতি ও বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গিয়েছে, সুদৃশ্য ঠাকুরবাড়ির নকশা তৈরি করে ইউরোপীয় মার্টিন বার্ন কোম্পানি। রাজার মন্দির বলে কথা। মন্দির তৈরির জন্য সেগুন কাঠ নিয়ে আসা হয় মায়ানমার থেকে। বেলজিয়াম থেকে আসে উন্নতমানের কাঁচ। মন্দিরের প্রয়োজনীয় ইস্পাত আনা হয় ল্যাঙ্কাশায়ার থেকে। ফরাসি স্থাপত্য এবং ভারতীয় ভাস্কর্যের মিশেলে রাজবাড়ি লাগোয়া দেড় বিঘা জমিতে ৯ লক্ষ টাকা খরচ করে ওই ঠাকুরবাড়ি তৈরি করেন রাজা শরচ্চন্দ্র রায় চৌধুরী। মন্দিরের ছাদে দুটি উঁচু চুড়ার চারপাশে রয়েছে আরও চারটি করে চুড়া। মন্দিরের সৌন্দর্যে শুধুমাত্র স্থানীয় বাসিন্দারা নয়। মুগ্ধ হয়েছেন দেশ বিদেশের বহু পর্য়টক। কিন্তু সংস্কারের অভাবে বর্তমানে ওই ঠাকুরবাড়ি এতটাই জীর্ণ হয়ে পড়েছে যে ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় ছাদে ওঠা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দেওয়াল ও স্তম্ভে থাকা মূল্যবান ধাতুও খসে পড়ছে।
চাঁচল রাজ এস্টেট পরিচালন সমিতির সম্পাদক সিদ্ধেশ্বরী ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক আসরারুল হক বলেন, “কলকাতায় রাজ্য সরকারের অফিসিয়াল ট্রাস্টিকে সমস্যার কথা কয়েকবার জানিয়ে লাভ হয়নি। সংস্কারের অভাবে ঠাকুরবাড়ির সৌন্দর্য অনেকটাই ম্লান হয়েছে। অধিগ্রহন করা হলে প্রতিষ্ঠানটি রক্ষা করা সম্ভব হবে।” সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী, ফরিদ আলির মতো স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঠাকুরবাড়ির প্রতি প্রশাসনের নজর নেই। তাই হেরিটেজ ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে। কারণ সেটা না হলে ঐতিহ্য রক্ষা করা সম্ভব হবে না। দাবি আদায়ের জন্য প্রয়োজনে তাঁরা পথে নামবেন। সমস্যার কথা অস্বীকার করেননি উত্তর মালদহের সাংসদ মৌসম বেনজির নুর। তিনি বলেন, “চাঁচল রাজবাড়ি ও ঠাকুরবাড়িকে ঘিরে স্থানীয় মানুষের গভীর আবেগ রয়েছে। প্রস্তাবিত আদালতের জন্য কেনার পরে রাজবাড়ির হাল ফিরেছে। ঠাকুরবাড়ির হাল ফেরাতে সরকারের সঙ্গে কথা বলব।” |