বিধি ভেঙে দুই কন্ডাক্টরের ‘পদোন্নতি’র অভিযোগ ঘিরে বিতর্ক বাড়ছেই উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের অন্দরে। পরিস্থিতি এতটাই জটিল আকার নিয়েছে যে বিতর্ক এড়াতে এ বার থেকে নিগমের বোর্ড মিটিংগুলির ভিডিও রেকর্ডিং করার কথা ভাবছেন ম্যানেজিং ডিরেক্টর। ওই ঘটনায় এমডি’র সঙ্গে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা এনবিএসটিসি’র চেয়ারম্যান গৌতম দেব এবং পরিচালন বোর্ডের সদস্য আব্দুল জলিল আহমেদের চাপানউতোর প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। গোটা বিষয়টি পর্য্যালোচনার জন্য ৪ সেপ্টেম্বর ম্যানেজিং ডিরেক্টরের সঙ্গে বৈঠক করবেন নিগমের চেয়ারম্যান। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা এনবিএসটিসি’র চেয়ারম্যান বলেন, “সংস্থার পরিচালন বোর্ডের বৈঠকে শিলিগুড়ির একজন মাত্র কন্ডাক্টরকে ক্লার্কের দায়িত্ব দেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছিল বলেই মনে হচ্ছে। তারপরেও তালিকায় আরও একজনের নাম কী করে যুক্ত হয়েছে বুঝতে পারছি না। বিষয়টি নিয়ে শীঘ্রই ম্যানেজিং ডিরেক্টরের সঙ্গে বৈঠক করব। নথি দেখেই যা বলার বলব।” তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তথা এনবিএসটিসি’র পরিচালন বোর্ডের সদস্য আব্দুল জলিল আহমেদ আরও একধাপ এগিয়ে বলেছেন, “আমি ওই বৈঠকে ছিলাম। সেখানে শুধুমাত্র শিলিগুড়ির একজন কন্ডাক্টরকে ক্লার্কের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। পরের বোর্ড মিটিংয়ে কী করে দেবাশিস হাজরার নাম যুক্ত হল এমডি’র কাছে জানতে চাইব।” নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সি মুরুগন পাল্টা জানিয়েছেন, বোর্ড মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত মেনেই দু জনকে দায়িত্ব দেওয়ার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে দু’ এক জন কেন অন্য রকম বলছেন জানি না। এমন হলে এ বার থেকে বোর্ড মিটিংয়ের ভিডিও রেকর্ডিং করে রাখার কথা ভাবতে হবে। বৈঠকে উপস্থিত সদস্যরা দুই জনকে ক্লার্কের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানেন।” এমডি’র ভিডিও রেকর্ডিং ভাবনা প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া প্রয়োজনে তাঁরাই ভিডিও রেকর্ডিং করাবেন। আব্দুল জলিল আহমেদও জানান, ভিডিও রেকর্ডিং করা হলে সত্যিই ভাল হয়। তিনি বলেন, “আগের বৈঠকেও তা করা হলে এমডি-সহ অন্য কোনও বোর্ড সদস্য এমন বেআইনি কাজ করার সাহস পেতেন না।” এনবিএসটিসি সূত্রেই জানা গিয়েছে, ৩১ অগস্ট নিগমের শিলিগুড়ির ও কোচবিহারের দুই কন্ডাক্টরকে ‘লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক’ করার ব্যাপারে ম্যানেজিং ডাইরেক্টর নির্দেশ জারি করেন। বিষয়টি জানাজানি হতেই কর্মী মহলে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। কোচবিহারের ওই কন্ডাক্টর নিগমের পরিচালন বোর্ডের সদস্য তথা তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতা মিহির গোস্বামীর ঘনিষ্ঠ বলে দলেরই এনবিএসটিসি কর্মী সংগঠন অভিযোগ তুলেছে। এমনকি মিহিরবাবুর সৌজন্যেই বেআইনি ভাবে ওই কন্ডাক্টরকে ক্লার্ক করা হচ্ছে বলে প্রকাশ্য বিবৃতিও দিয়েছেন তাঁরা। মিহিরবাবু অবশ্য শনিবারই ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন। গোটা ঘটনা নিগমের চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীকে জানিয়ে দেন আব্দুল জলিল আহমেদ। সোমবার লিখিতভাবেও রিপোর্ট পাঠানোর কথা জানিয়েছেন তিনি। এ দিন তাঁকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তৃণমূল কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা সভাপতি তথা এনবিএসটিসি’র প্রাক্তন চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “বিষয়টি বর্তমান চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীকে জানিয়েছি। যা বলার তিনিই বলবেন।” |