প্রায় তিনমাস ধরে উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ থেকে ডালখোলা পর্যন্ত জাতীয় সড়ক বেহাল বলে অভিযোগ নিত্যযাত্রীদের। প্রায় ৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সড়কের বেহাল দশার কারণে প্রতিদিনই জাতীয় সড়ক জুড়ে যানজট ও দুর্ঘটনাও লেগে রয়েছে। পাশাপাশি, বেহাল রাস্তা দিয়ে চলাচল করে বাস, ট্রেকার, ট্রাক ও ছোটগাড়িও বিকল হয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ পরিবহণ কর্মীদের। ডালখোলা রেকপয়েন্ট থেকে ট্রাকে চাপিয়ে বেহাল রাস্তা দিয়ে রায়গঞ্জে পণ্যসামগ্রী আনতে গিয়েও ব্যবসায়ীরা চরম দুর্ভোগে পড়ছেন বলে অভিযোগ। এমন কী দুর্ঘটনা ও যানজটের আশঙ্কায় বেহাল রাস্তা দিয়ে চালকরা বাস চালাতে চাইছেন না বলে বাস মালিকরা জানিয়েছেন। ইতিমধ্যেই বাসমালিকদের সংগঠন উত্তর দিনাজপুর বাস ও মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ব্যবসায়ীদের সংগঠন পশ্চিম দিনাজপুর চেম্বার্স অফ কমার্স জাতীয় সড়ক মেরামতের দাবিতে যৌথ আন্দোলনে নেমেছে। অভিযোগ, গত প্রায় একমাস ধরে বার বার সমস্যার কথা প্রশাসনকে জানানো হলেও রাস্তা মেরামতে কোনও উদ্যোগ হচ্ছে না। আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে জেলা প্রশাসন জাতীয় সড়ক মেরামতের বিষয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ না করলে আগামী বুধবার থেকে রায়গঞ্জ-ডালখোলা রুটে অনির্দিষ্টকালের জন্য বেসরকারি বাস চলাচল বন্ধ রাখার হুমকি দিয়েছে বাস মালিকদের সংগঠন। জেলা শাসককেও বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছে বাস মালিকদের সংগঠন। সে ক্ষেত্রে ডালখোলার পূর্ণিয়ামোড় থেকে শিলিগুড়ি রুটে যাতাাতকারী সব বেসরকারি বাস চালানো হবে বলে জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, আজ, সোমবার জাতীয় সড়ক মেরামতের দাবিতে জেলাশাসকের দফতরের সামনে যৌথভাবে অবস্থান বিক্ষোভে সামিল হবেন বাস মালিক ও ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্যরা। জেলাশাসক পাসাং নরবু ভুটিয়া বলেন, “জাতীয় সড়ক সত্যিই বেহাল হয়ে পড়েছে। তবে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ কয়েকটি এলাকায় রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু করেছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। খুব দ্রুত যাতে রাস্তা মেরামতের কাজ শেষ হয়ে যায় সেই বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। রায়গঞ্জ-ডালখোলা রুটে যাত্রী পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার ব্যাপারে বাস মালিকদের অনুরোধ করব।” প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, রায়গঞ্জ, মালদহ ও বালুরঘাট থেকে প্রায় ১৫০ টি বেসরকারি বাস প্রতিদিন রায়গঞ্জ-ডালখোলা জাতীয় সড়ক হয়ে শিলিগুড়ি রুটে যাতায়াত করে। পাশাপাশি, ডালখোলার রেক পয়েন্ট থেকে ট্রাকে চাপিয়ে ওই সড়ক দিয়েই ব্যবসায়ীরা রায়গঞ্জে পণ্যসামগ্রী আমদানি করেন। প্রায় তিনমাস ধরে রায়গঞ্জ থেকে ডালখোলা পর্যন্ত জাতীয় সড়ক বেহাল হয়ে পড়েছে। জাতীয় সড়কে প্রায় ১৫ মিটার অন্তর ছোট বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোনও কোনও এলাকায় পিচের চাদর উঠে গিয়ে চষা জমির চেহারা নিয়েছে। রায়গঞ্জের উদয়পুর এলাকার বাসিন্দা পেশায় প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক সুজনকুমার দত্ত বলেন, “প্রতিদিন বাসে চেপে স্কুলে যেতে হয়। রাস্তা বেহাল হয়ে পড়ায় প্রতিদিন যানজটে একপ্রস্ত দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ঝাঁকুনিতে অসুস্থ হয়ে পড়ছি। প্রায় ৩০ কিমি যাতায়াত করতে দু’ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যাচ্ছে।” ব্যবসায়ী জয়ন্ত সরকারের বক্তব্য, “রাস্তা বেহাল হয়ে পড়ার জেরে ডালখোলার রেক পয়েন্ট থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে রায়গঞ্জে পণ্যসামগ্রী আমদানি করতে তিন ঘন্টারও বেশি সময় লেগে যাচ্ছে।” পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত এক মাসে জাতীয় সড়কে প্রায় ২৫ টিরও বেশি ছোটবড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। গড়পড়তা প্রতিদিন দুটি করে ট্রাক উল্টে যাওয়ারও ঘটনা ঘটেছে। |