জমি চাই, জমি দাও তিস্তা বাঁধ প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে উত্তরবঙ্গের জেলায় জেলায় ঘুরে কার্যত এই আর্জি-ই জানাচ্ছেন সেচ দফতরের অফিসারেরা। তবে সাড়া যে খুব বেশি মিলছে না, অফিসারেরাই তা জানাচ্ছেন। সেচ দফতরের এক কর্তা বলেন, “কারও ইচ্ছের বিরুদ্ধে জমি অধিগ্রহণ না করাটা সরকারের নীতি হওয়ায় অনুনয়-বিনয় ছাড়া পথ নেই। কিন্তু এক এক জন এক এক রকম দাম হাঁকছেন। কেউ আবার চাকরির দাবিও জানাচ্ছেন। ফলে জমি পাওয়াটা শক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
পাশাপাশি, মামলার জেরেও পদে পদে আটকে যাচ্ছে প্রকল্পের গতি। সেচ দফতর জানিয়েছে, প্রকল্প-এলাকায় জমি সংক্রান্ত ১১৯টি মামলা বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন। ফলে প্রকল্পের কাজ কবে শেষ হবে, তা নিয়ে সংশয়ে দফতরের আধিকারিকেরাই। ওই সেচকর্তা জানান, পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ১৯৭৮ সালে যে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল, তার প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৫-তে। এখন যা পরিস্থিতি, তাতে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হতেই ২০১৭ সাল গড়িয়ে যাবে।
মহাকরণ সূত্রের খবর, তিস্তা প্রকল্পে কাজের অগ্রগতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যোজনা কমিশনও। সম্প্রতি রাজ্যের উন্নয়ন ও পরিকল্পনা দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে কমিশন-কর্তাদের বৈঠকে এই প্রসঙ্গ উঠলে জমি পাওয়ার সমস্যাকেই রাজ্যের পক্ষ থেকে বড় কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। সেচ দফতরের হিসেবে, প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ করতে এখনও ৮১১১ একর জমি দরকার। তার মধ্যে মাত্র ৯৬০ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য চিহ্নিত করেছে সেচ দফতর। দফতরের এক কর্তা বলেন, “মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য পাঠানো ওই প্রস্তাব এখনও মহাকরণেই পড়ে রয়েছে। তবে তা ‘পাশ’ হবে ধরে নিয়ে ইতিমধ্যে ২০০ কোটি টাকার কাজের টেন্ডার ডাকা হয়েছে। আরও ৩৬০ কোটি টাকার বরাত শীঘ্রই দেওয়া হবে।”
জমি না মেলায় তিস্তা বাঁধ প্রকল্পে কেন্দ্রের দেওয়া টাকাও পুরোপুরি খরচ করতে পারছে না রাজ্য সরকার। এবং তা নিয়েও যোজনা কমিশন সতর্ক করেছে রাজ্যকে। এক সেচ-কর্তা জানান, ২০০৮ সালের বাজার-দর অনুযায়ী প্রকল্প-খরচ ছিল ২৯৮৯ কোটি টাকা। এখনও পর্যন্ত তার মধ্যে ১৩৫৭ কোটি টাকা খরচ করা গিয়েছে। তিনি বলেন, “তিস্তা বাঁধ প্রকল্পকে জাতীয় প্রকল্প হিসেবে ঘোষণার পর টাকার অভাব কখনও হয়নি। গোটা প্রকল্পের ৯০% টাকা দেবে কেন্দ্র। কিন্তু আমরাই খরচ করতে পারছি না।”
উন্নয়ন ও পরিকল্পনা দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে কমিশন বলেছে, ‘অ্যাক্সিলারেটেড ইরিগেশন অন বেনেফিট প্রোগ্রাম’ (এআইবিপি)-এর আওতায় ২০১১-এর ডিসেম্বর মাসে ৯৭ কোটি টাকা রাজ্যকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেচ দফতরের হাতে ওই টাকা পৌঁছেছে চলতি বছরের মার্চের শেষে। এআইবিপি-র শর্ত মেনে যাতে বরাদ্দের টাকা ঠিক সময়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের হাতে যায়, সে ব্যাপারে উন্নয়ন ও পরিকল্পনা দফতরকে উদ্যোগী হতে বলেছে কমিশন। রাজ্যের পাল্টা অভিযোগ, ২০১১-১২ আর্থিক বছরে যেখানে ২৪৭ কোটি টাকা পাওয়ার কথা ছিল, সেখানে ৯৭ কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছে। ওই বকেয়া টাকা তাড়াতাড়ি পাওয়ার জন্য কমিশনকে অনুরোধ করেছে রাজ্য।
সেচ দফতর জানিয়েছে, মূল প্রকল্পে তিস্তা থেকে পাঁচটি মূল খালের মাধ্যমে ৪২,০০০ হেক্টর কৃষিজমিতে জল দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সেগুলি হল তিস্তা-জলঢাকা, তিস্তা-মহানদী, মহানদী-ডাউক, ডাউক-নাগর ও নাগর-টাঙ্গন। টাঙ্গন থেকে আত্রেয়ী পর্যন্ত আর একটি খাল কাটার পরিকল্পনা রয়েচে সেচ দফতরের। তবে সেটি হবে দ্বিতীয় পর্যায়ে।
এক সেচ-কর্তা বলেন, “মূল খালগুলি থেকে ৪০-৪২টি শাখা খালের মাধ্যমে উত্তরবঙ্গের পাঁচটি জেলায় সেচের জল সরবরাহ করা হবে। শাখা খালগুলির জন্যই এখন জমি দরকার। আর সেটাই পাওয়া যাচ্ছে না।” |