কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনায় ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে জেরবার স্বাস্থ্য দফতর। এর মধ্যে সমস্যা আরও জটিল করল উত্তরবঙ্গে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার এবং শিলিগুড়ির বিভিন্ন এলাকা থেকে জ্বর, মাথা ব্যথা নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা ৩৪ জন রোগীর রক্ত ও সেরিব্রো স্পাইনাল ফ্লুইড (সিএসএফ) পরীক্ষা করে নিশ্চিত ভাবে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু মিলেছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী দাস বলেন, “জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে মৃত্যুও হয়েছে দু’জনের।” রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস জানান, এই পরিস্থিতিতে উত্তরবঙ্গের রুটিন টীকাকরণের মধ্যে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের টিকা অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গত দু’বছর থেকে উত্তরবঙ্গে এই রোগের প্রকোপ বেশি করে চোখে পড়ছে। দক্ষিণবঙ্গের হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান, বীরভূম ও পশ্চিম মেদিনীপুর জাপানি এনসেফ্যালাইটিস প্রবণ বলে চিহ্নিত। এই জেলাগুলিতে রুটিন টীকাকরণের মধ্যেই এই রোগের টীকাও রয়েছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিতবাবু বলেন, “দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে। টিকাও চলেও এসেছে। সামনের মাস থেকেই টিকাকরণের কাজ শুরু হবে।” স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় সরকারও। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে এই রোগীদের পৃথক আইটিইউ করতে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। তা গড়তে কেন্দ্র আর্থিক সাহায্যও দেবে।
|
জুলাই এবং অগস্ট মাসে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে
চিকিৎসা করাতে আসা জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত |
|
• জলপাইগুড়ির-২৫ জন
• কোচবিহারের-৬ জন
• শিলিগুড়ির-৩ জন
• মৃত্যু হয়েছে ২ জনের |
|
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এই রোগে মৃত দু’জন হলেন জ্যোৎস্না মণ্ডল (৪৫) এবং কুলেজা রায় (৭৫)। জ্যোৎস্নাদেবী হলদিবাড়ির বাসিন্দা, কুলেজাদেবী ডুয়ার্সের চালসার বড়দিঘি এলাকার। আক্রান্তদের মধ্যে ৫ জন অল্প বয়সী। চিকিৎসাধীনদের মধ্যে ডুয়ার্সের বীরপাড়া, ফালাকাটা, চালসা, ময়নাগুড়ি, বানারহাট, জল্পেশ, নাগরাকাটা, কুমারগ্রাম, আলিপুরদুয়ারের মতো এলাকার বাসিন্দারাও রয়েছেন। জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ, মোহিতনগর ছাড়াও সদর ব্লক থেকে রোগীরা এসেছেন। কোচবিহারের পুঁটিমারি, শীতলকুচি, মেখলিগঞ্জের রোগীরা রয়েছেন। এই রোগে আক্রান্ত শিলিগুড়ির শহরের মাটিগাড়া, বাগডোগরার কয়েকজন বাসিন্দা এই হাসপাতালে চিকিৎসা
করান। যে ৩৪ জনের সিএসএফ ও রক্ত পরীক্ষায় জীবাণু মিলেছে তার মধ্যে ২৫ জনই জলপাইগুড়ির বাসিন্দা।
বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কয়েকজন জাপানি এনসেফালাইটিসে আক্রান্ত রয়েছেন বলে কিছুদিন আগে জানতে পেরেছিলাম। বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে কথা বলব। যে সমস্ত এলাকা থেকে রোগীরা এসেছেন সেখানকার জেলাশাসক এবং স্বাস্থ্য দফতরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হাসপাতাল থেকেই বলা হয়ে থাকে। তবে কোনও বিশেষ এলাকায় এক সঙ্গে কয়েকজন আক্রান্ত হয়ে পড়লে তা উদ্বেগের। তেমন কোথাও রয়েছে কি না। খোঁজ করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
চিকিৎসকদের একাংশ জানান, মূলত শুয়োরের শরীরে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস রোগের ভাইরাস থাকে। বন্য পাখিদের থেকেও ছড়াতে পারে। বিশেষ ধরনের মশা বাহিত হয়েও রোগের জীবাণু মানুষের দেহে আসে। তাই যে সমস্ত এলাকায় রোগ সংক্রমণ দেখা দিয়েছে সেখানে শুয়োর পালন বন্ধ করা, মশা মারতে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। অসিতবাবু জানান, উত্তরবঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের দু’টি দল গিয়েছে। তারা এলাকায় ঘুরে রোগের বিষয়ে প্রচার করবে। এলাকার শুয়োরের খামারগুলিকে বিশেষভাবে সতর্ক করা হবে। |