একমনে দু’জনে যখন মঞ্চের উপরে মোমবাতি জ্বালাচ্ছিল, দেখে বোঝার উপায় ছিল না, কয়েক মাস আগে এঁদের কারও কাছে গোটা জগৎটাই ছিল আধো অন্ধকারময়, কারও কাছে নিকষ কালো অন্ধকার। সেখান থেকে তাদের মতো আরও অনেককে আলোর পথে উত্তরণ নিয়ে হয়ে গেল সেবায়নের অনুষ্ঠান। রবিবার উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের ররীন্দ্রভবনে ২৭ তম জাতীয় চক্ষু দান পক্ষ উপলক্ষে তিনশো জোড়া চোখ সংগ্রহের কর্মকাণ্ডকে স্মরণীয় করে রাখতে এ দিন এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানে চক্ষু সংগ্রহের নানা অভিজ্ঞতার কথা শোনান বিশিষ্য় ব্যক্তিরা। সেই সঙ্গে যাঁরা চক্ষু দান করেছেন সেই সব সদস্যদের পরিবারবর্গের হাতে এ দিন মানপত্র, স্মারক, পুষ্পস্তবক তুলে দেওয়া হয়। |
কল্পনা ও ধীরাজ। আলোর পথযাত্রী। ছবি: নির্মল বসু।
|
বছর পনেরোর কল্পনা নাথ একমনে মঞ্চের উপরে মোমবাতি জ্বালাচ্ছিল। বসিরহাটের মৈহাটির নন্দীপাড়ার বাসিন্দা মেয়েটির বয়স যখন ১০ সেই সময় অসুস্থতার কারণে একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। দৃষ্টিশক্তির এমন অপূর্ণতায় বন্ধ হয়ে গেল পড়াশোনা। পরিবারের লোকজন চেষ্টা চালালেন, যদি কেউ চক্ষু দান করেন তাহলে সেই চোখ দিয়ে দৃষ্টি ফেরানোর ব্যবস্থা করবেন মেয়ের। কিন্তু বহু চেষ্টা করেও যখন কোনও উপায় দেখছেন না তাঁরা সেই সময় তাঁদের পাশে এসে দাঁড়ায় এই সংস্থা। ২০০৯ সালে চোখে কর্ণিয়া স্থাপন হয় কল্পনার। দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায় সে।
শুধু কল্পনাই নয়। বিহারের মধুবনী জেলার বাসিন্দা সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া ধীরাজও আলোর জগতে ফিরেছে সেবায়নের হাত ধরে। এ দিন দু’জনেই যখন মঞ্চে মোমবাতি জ্বালাচ্ছিল তখন উপস্থিত অনেকের চোখ সজল হয়ে ওঠে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকল বক্তাই মৃত্যুর পর চক্ষু দানের ব্যপারে সমাজকে আরও সচেতন করার প্রয়াসের কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বসিরহাটের পুরপ্রধান কৃষ্ণা মজুমদার, শিক্ষাবিদ সুভাষ কুণ্ডু, সাহিত্যিক পরেশ ভট্টাচার্য, অধ্যাপক দেবীপ্রসাদ নন্দ প্রমুখ। |