সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ডেথ সার্টিফিকেটে লিখছেন ডেঙ্গি শকে হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। আর রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলছেন, ম্যাক এলাইজা পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরাই পড়েনি। তাই সরকারি ভাবে এটি ডেঙ্গিতে মৃত্যু নয়। মন্ত্রীর ব্যাখ্যায় চিকিৎসকেরা থ। কারণ, ম্যাক এলাইজা পরীক্ষা পজিটিভ হওয়াতেই তারা ডেঙ্গির চিকিৎসা শুরু করেন। ডেথ সার্টিফিকেটে তাই ডেঙ্গি শকের কথাই লেখা।
শনিবার রাতে চিত্তরঞ্জন সেবাসদনে মৃত্যু হয় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত একবালপুর থানা এলাকার বাসিন্দা ন’বছরের রাহুল জন গোমসের। ডেথ সার্টিফিকেটে চিকিৎসকেরা লেখেন, ‘কার্ডিয়াক রেসপিরেটরি ফেলিওর ইন কেস অফ ডেঙ্গি শক’। তবে স্বাস্থ্য দফতরের ওয়েবসাইটে এই মৃত্যুর কথা লিপিবদ্ধ হয়নি। কিন্তু কেন? রাজ্য কি তবে ডেঙ্গিতে মৃত্যুর সংখ্যা কম করে দেখাচ্ছে? স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “ম্যাক এলাইজা পরীক্ষায় নিশ্চয়ই ডেঙ্গি ধরা পড়েনি, তাই ওয়েবসাইটে নেই। এই পরীক্ষায় ধরা না পড়লে সেটি ডেঙ্গি নয়।”
মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষও বলেন, “শহরে নতুন করে ডেঙ্গি আক্রান্তের মৃত্যুর খবর আসেনি। জ্বর হয়ে অন্য কারণে মারা গেলে, ডেঙ্গিতে মৃত্যু বলে রটানো হচ্ছে। পুরসভার ডাক্তারেরা রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে যদি বলেন ডেঙ্গিতেই মৃত্যু, তবেই পুর-রেকর্ডে ঠাঁই পাবে।” অতীনবাবু জানান, শহরের ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার তিনি একটি রিপোর্ট প্রকাশ করবেন। |
শয্যা খালি নেই, সরাসরি বিজ্ঞপ্তি জারি। রবিবার, বাইপাসের
এক বেসরকারি হাসপাতালে। ছবি: দেবাশিস রায় |
মৃত্যু ডেঙ্গিতে কি না এই বিতর্কের মধ্যে বাড়ছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। তার প্রমাণ সরকারি, বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে স্থানাভাব। কোথাও পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া রোগীকে বাড়ি পাঠিয়ে সেখানে রাখা হচ্ছে ডেঙ্গি আক্রান্তকে। জ্বরের জন্য তৈরি বিশেষ ওয়ার্ডই নয়, ঠাঁই নেই আইসিইউতেও। বাইপাস সংলগ্ন একটি হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, গত দু’তিন দিনে ডেঙ্গি শকের রোগী বেড়েছে। আইসিইউ-তে জায়গা নেই। অনেক বেসরকারি হাসপাতালের বাইরেও বোর্ডে শয্যা নেই বলে বিজ্ঞপ্তি টাঙানো।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ম্যাক এলাইজা পরীক্ষায় কলকাতায় এক দিনে আরও তিন জনের দেহে ডেঙ্গির ভাইরাস মিলেছে। রাজ্যেও বেড়েছে আরও পাঁচ রোগী। এনএস-১ পজিটিভ ধরা পড়েছে আরও ১১ জনের। স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যানে, ২ সেপ্টেম্বর বিকেল পর্যন্ত এনএস-১ পজিটিভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭২৮, যা ১ সেপ্টেম্বর ছিল ১৭১৭। ম্যাক-এলাইজা পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত ডেঙ্গির সংখ্যা ৬৪৩, ১ সেপ্টেম্বর তা ছিল ৬৩৮। সল্টলেকেও বাড়ছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। সল্টলেক ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হোমিওপ্যাথিতে ২৬ জন ছাত্রছাত্রী ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ফাইনাল পরীক্ষা। বাকিদের মধ্যে ডেঙ্গি ছড়াতে পারে, তাই সকলকেই হস্টেল ছাড়তে বলেছেন কর্তৃপক্ষ। সল্টলেকের অন্য বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতেও ডেঙ্গি ছড়ানোর খবর এসেছে।
হাসপাতালগুলিতে পরপর ডেঙ্গি আক্রান্তেরা ভর্তি হচ্ছেন। ফলে মশার কামড়ে অন্য রোগীদের দেহেও ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, জ্বর হওয়ার পরে প্রথম তিন দিন রোগীকে আলাদা করে মশারির ভিতরে রাখা দরকার। কারণ তাঁকে কামড়ে সেই মশা অন্য কাউকে কামড়ালে তাঁরও ডেঙ্গি হতে পারে। সরকারি হাসপাতালে একই ওয়ার্ডে পাশাপাশি শয্যায় বিভিন্ন রোগী ভর্তি হওয়ায় অন্যদের মধ্যেও ডেঙ্গি ছড়ানোর প্রবণতা বাড়ছে। |