রাস্তাতেই প্রসব বধূর
সিজার করতে হবে ভেবে ফেরাল স্বাস্থ্যকেন্দ্র
‘সিজার’ করতে হতে পারে, এই অনুমানে এক দরিদ্র পরিবারের বধূকে ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে ‘রেফার’ করেছিলেন কুলপি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক। সেই হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই স্বাভাবিক ভাবে কন্যাসন্তানের জন্ম দিলেন বধূটি। হাসপাতালে যাওয়ার উপায় না থাকায় পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিল পরিবার। প্রসব হয় পুলিশের জোগাড় করা ভ্যানেই।
রবিবার সকালের এই ঘটনায় ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসক নীহাররঞ্জন মণ্ডলের ‘দায়বদ্ধতা’ নিয়ে প্রসূতির পরিবার যেমন প্রশ্ন তুলেছে, তেমনই প্রশ্ন উঠেছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিকাঠামো নিয়েও। চিকিৎসক নীহারবাবুর বক্তব্য, “স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ‘সিজার’ করার কোনও ব্যবস্থা নেই। তা ছাড়া, ওই মহিলার আগের সন্তান ‘সিজার’ করে হয়েছিল। তাই ধরে নিয়েছিলাম, এ ক্ষেত্রেও ‘সিজার’ করতে হবে। তাই ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই।” যদিও স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ তরুণকুমার ঘোষ বলেন, “প্রথম সন্তান ‘সিজার’ করে হলে দ্বিতীয় সন্তানও যে সে ভাবেই হবে, এমন কোনও কথা নেই। একমাত্র স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞদের পক্ষেই এটা বলা সম্ভব।” নীহারবাবু স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ নন। তিনি ‘জেনারেল ফিজিশিয়ান’।
কুলপি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মেয়ের সঙ্গে অসীমা। ছবি: দিলীপ নস্কর
প্রসব যন্ত্রণা শুরু হওয়ায় কুলপির বেলপুকুর গ্রামের অসীমা দলুই নামে ওই প্রসূতি এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ মা দেববালা দাসের সঙ্গে বাসে করে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেন। অসীমার স্বামী অশোক দলুই দিনমজুর। পরিবারটি বিপিএল তালিকাভুক্ত। সেই সময়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একমাত্র কর্তব্যরত চিকিৎসক হিসেবে ছিলেন নীহারবাবু।
সামান্য টাকা নিয়ে বেরিয়েছিলেন অসীমারা। নীহারবাবু ‘রেফার’ করায় কী ভাবে ১৫ কিলোমিটার দূরের ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে যাবেন, বুঝতে না পেরে তাঁরা ঢুকে পড়েন পাশেই কুলপি থানায়। পুলিশের কাছে মৌখিক অভিযোগে জানান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ভর্তি নেয়নি। হাসপাতালে যাওয়ার টাকা নেই। তা শুনে অসীমাকে ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে পাঠানোর তোড়জোড় করে পুলিশই। ওসি অর্ধেন্দু দে সরকার অসীমাকে ৫০০ টাকা দেন। ভ্যানেরও ব্যবস্থা করা হয়। জেলার পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠি বলেন, “ভ্যানে উঠেই মেয়ের জন্ম দেন অসীমা। এর পরে পুলিশের উদ্যোগে কুলপি স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই ভর্তি করানো হয় ওই বধূ ও তাঁর সন্তানকে।”
হাসপাতালে শুয়ে অসীমা বলেন, “প্রথম বার ডাক্তারবাবুকে ভর্তি করে নেওয়ার জন্য অনেক অনুরোধ করি। উনি কোনও কথাই শুনলেন না।” তাঁর পরিবারের অভিযোগ, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তরফে অ্যাম্বুল্যান্সেরও ব্যবস্থা করা হয়নি। নীহারবাবুর দাবি, “সেই সময়ে অ্যাম্বুল্যান্সটি অন্যত্র গিয়েছিল। তাই ব্যবস্থা করা যায়নি।”
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূলের তরুণ রায় ওই চিকিৎসকের ‘ভূমিকা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, “ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কাছেই একটি নার্সিংহোম রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের একটি প্রকল্পে সেখানে বিপিএল তালিকাভুক্ত প্রসূতিদের নিখরচায় চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে না পাঠিয়ে কেন ওই চিকিৎসক ডায়মন্ড হারবারে প্রসূতিকে পাঠালেন, বুঝতে পারছি না।” তাঁর আশ্বাস, “ওই চিকিৎসকের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হবে। এ বিষয়ে বিশদ রিপোর্ট চাইব।”
‘সিজার’-এর জন্য ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিকাঠামো নিয়ে নীহারবাবু যে সমস্যার কথা তুলেছেন, তা মেনে নিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শিখা অধিকারী। তিনি বলেন, “জেলার কোনও ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই ‘সিজার’ করার পরিকাঠামো নেই। তবে, তা দ্রুত গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। ওই বধূর বিষয়টি আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত ছিল সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.