স্কুলে ঢুকলেই একহাঁটু কাদা ভরা মাঠ পেরোতে হয়। প্রায় তিন বিঘা জমিতে স্কুল। গা ঘেসে বইছে একটি ঝোরা। ফি বছর বর্ষায় ওই ঝোরার জল উপচে মাঠ ভেসে যায়। জলকাদা সহজে শুকোয় না। পাঁচিল না থাকায় বেওয়ারিশ কুকুরের দল ঢুকে পড়ে রোজই। টিচার্স কমন রুম, প্রধান শিক্ষিকার ঘরের সামনে বসে থাকে। আচমকা গায়ে কিংবা লেজে পা পড়লে কামড়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এমনই হাল ডুয়ার্সের লাটাগুড়ির একমাত্র গার্লস হাইস্কুলের। ২০০১ সালে স্কুলটি চালু হয়। সেই থেকে এমন অবস্থা চলছে বলে ছাত্রীদের অভিযোগ। ১ হাজারের বেশি ছাত্রী। স্কুলের নিজস্ব হস্টেল আছে। কিন্তু পাঁচিল না-থাকায় ছাত্রী শিক্ষিকাদের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয়। প্রধান শিক্ষিকা লিপিকা সুকুল বলেন, “সব জায়গায় লিখিত আর্জি জানিয়েছি। কাজ হয়নি। তাই একেই ভবিতব্য ধরে নিতে বাধ্য হয়েছি।” স্কুলের শিক্ষিকারা জানান, তাঁরা না-হয় পেশার টানে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু ছোট ছোট মেয়েরা এত কষ্ট সইতে পারে না। তবু লড়াই করে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে ওরা। প্রার্থনা সঙ্গীতের লাইনে তটস্থ থাকতে হয় কুকুরের জন্য। প্রধান শিক্ষিকা জানান, ইতিমধ্যে কয়েকজন ছাত্রী কুকুরের আঁচড় ও কামড়ে জখম হয়েছে। কুকুরের উপদ্রব এতটাই যে শারীরশিক্ষার ড্রিল এবং মাঠে খেলার আয়োজন বন্ধ করে দিতে হয়েছে। |
এ দিকে দৌড়ে পালানোর উপায় নেই। পিছল কাদার জন্য পা টিপে চলতে হয় ছাত্রীদের। জামা, শাড়ি নোংরা হয়। স্কুলের সহ শিক্ষিকা রোজা রায় বলেন, “বর্ষায় মাঠ পেরিয়ে স্কুলে পৌঁছতে শাড়ি কাদায় ভরে যায়। সারাদিন ওই শাড়িতে থাকতে হচ্ছে।” একই প্রশ্ন সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সেঁজুতি নন্দীর। তার কথায়, “জামা শাড়ি কিছুই ঠিক থাকে না। এ সব কি কেউ দেখার নেই!” স্কুলের পরিস্থিতি দেখে ক্ষোভের সৃষ্টি হলেও অভিভাবকরা নিরুপায়। শঙ্কর দেব, দীপক সরকার, জীবন নন্দীর মতো অভিভাবকরা বলেন, “মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে চিন্তায় থাকতে হয়। প্রত্যেকে তো গামবুট কিনে দিতে পারে না। এক দিন স্কুলে গেলে পরের দিন কোন জামা পরবে তা নিয়ে সমস্যায় পড়ে মেয়েরা।” স্কুলে পরিচালন কমিটি এ বছর এখনও গঠন হয়নি। অগস্ট মাসে হওয়া নির্বাচনে জয়ী ৬ প্রার্থীর মধ্যে একজন মীনা লোহার স্কুল সংলগ্ন এলাকায় থাকেন। তিনি বলেন, “জলকাদার সমস্যা দীর্ঘদিন থেকে দেখে আসছি। এবার পরিচালন কমিটি গঠন হলে নিশ্চয়ই বিষয়টি দেখা হবে।” স্কুল ঘিরে দিতে টাকা সমস্যা হবে না বলে জানান লাটাগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য মহুয়া গোপ। তবে তিনি ওই কাজের জন্য শর্ত রেখেছেন। তিনি বলেন, “স্কুলের পেছনে কিছু চাষের জমি আছে। দেওয়াল হলে কৃষকদের জমিতে পৌঁছতে সমস্যা হবে। স্কুল কর্তৃপক্ষ ভ্যান যাওয়ার মতো রাস্তা ছেড়ে দিলে পঞ্চায়েত সমিতি সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য বরাদ্দ পেতে সাহায্য করবে।” শর্ত মেনে নিয়েছেন প্রধান শিক্ষিকা লিপিকা সুকুল। তিনি বলেন “রাস্তার জন্য জায়গা ছেড়ে দিয়ে আমরা আলোচনায় বসতে রাজি। সীমানা প্রাচীর হওয়াটাই মূল কথা। তাই বরাদ্দ পেলে জমির মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে কাজ করতে কোনও অসুবিধা নেই।” মালবাজারের মহকুমাশাসক নারায়ণ বিশ্বাস বলেন, “স্কুল কর্তৃপক্ষ সমস্যার কথা লিখিত ভাবে জানালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |