ফুলকপির ডালনা। টম্যাটোর চাটনি। সঙ্গে গরম বেগুনি। শারদ উৎসবের কয়েকটা দিন বাঙালির মেনুতে অন্য কিছু যাই থাকুক। রসনার তৃপ্তির জন্য পাতে ওই তিন পদ চাই-ই। ভাবছেন সুস্বাদু ফুলকপি কোথায় পাবেন! ভোজন রসিকদের জন্য সুখবর। পুজোয় শিলিগুড়ির বাজারে জৈব সারে তৈরি ফুলকপি ও টম্যাটো পৌঁছে দিতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমে পড়েছেন কৃষি দফতরের কর্তা ও কর্মীরা। তাঁদের দাবি, আবহাওয়া খুব একটা খারাপ না-থাকলে মহালয়ার আগে ওই সব্জি সহজে পাওয়া যাবে।
খড়িবাড়ি ও ফাঁসিদেওয়া ব্লকের ভারপ্রাপ্ত কৃষি আধিকারিক মেহফুজ আহমেদ বলেন, “ইতিমধ্যে দুটি ব্লকের কয়েকটি গ্রামে ফুলকপি ও টম্যাটোর চাষ শুরু হয়েছে। আশা করছি পুজোর আগেই আমরা সেগুলি বাজারে পাঠাতে পারব।” শুধুমাত্র শারদ উৎসবের কয়েকটা দিন নয়। যেন গোটা শরতকাল জুড়ে বাজারে ফুলকপির যোগান ঠিক থাকে সে জন্য সময় বেঁধে কয়েকটি স্তরে চাষ করার কৌশল চাষিদের শিখিয়ে দিতে কর্মশালা করছেন কৃষি দফতরের কর্তারা। গত শুক্রবার খড়িবাড়ির ভেলকুরজোত গ্রামে অন্তত ৫০ জন চাষিকে প্রতিকূল আবহাওয়ায় শীতের সব্জি চাষ করার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন গ্রামে ওই প্রশিক্ষণ চলছে। যতটা সম্ভব রাসায়নিক কমিয়ে জৈব সারে চাষ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কেন? কৃষি কর্তারা জানান, উৎপাদন কম হলেও সব্জির পুরনো স্বাদ কিছুটা ফিরিয়ে আনতে ওই উদ্যোগ। এ ছাড়াও জৈব সারে তৈরি সব্জিতে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না। বাজারে চাহিদাও ভাল। বিভিন্ন কর্মশালায় ওই বিষয়ে আলোচনার পরে অন্তত আড়াইশোজন চাষি এগিয়ে এসেছেন। ইতিমধ্যে তাঁরা চাষের কাজ শুরু করেছেন।
এখানেই শেষ নয়। কীটনাশক ব্যবহারের উপরেও শুরু হয়েছে নজরদারি। খড়িবাড়ি ও ফাঁসিদেওয়া ব্লকের ভারপ্রাপ্ত কৃষি আধিকারিক বলেন, “পুজোর সব্জি চাষে যেন ক্ষতিকর কীটনাশকের ব্যবহার না-হয় সে দিকে কড়া নজর রাখা হয়েছে। কর্মশালায় যোগ দিয়ে চাষিরাও বুঝতে পারছেন সবজির পুরনো স্বাদ ফিরিয়ে আনতে কী করা জরুরি। আশা করছি এ বার পুজোয় আমরা ভাল কিছু উপহার দিতে পারব।” তিনি জানান, শিলিগুড়ির পুজোর বাজারে ফুলকপি ও টম্যাটোর যোগান ঠিক রাখবে মূলত খড়িবাড়ি ও ফাঁসিদেওয়া ব্লকের চাষিরা। কৃষি দফতরের কর্মীরা কয়েক মাস আগে থেকে ওই দুটি ব্লকে সমীক্ষা করে চাষিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে এক সঙ্গে নয়। কয়েকটি পর্যায়ে ফাঁসিদেওয়ার টামবাড়ি, গুয়াবাড়ি, জ্যোতিনগর এবং খড়িবাড়ির ভেলকুরজোত, গাজিজোত, গৌরসিংহজোত, খুনিয়াপোখরি এলাকার ১২ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলকপি ও টম্যাটোর চাষ হবে। ইতিমধ্যে অন্তত ১ হাজার বিঘায় চাষের কাজ শেষ হয়েছে। ওই সব্জি মহালয়ার পর থেকে বাজারে পৌছে যাবে। এর পরে কোন খেতের ফুলকপি উঠবে সেটাও ঠিক হয়েছে। কিছু খেতের জন্য বীজতলা তৈরির কাজ চলছে। সেগুলি পুজোর পরে বাজারে যাবে। কেন শুধুমাত্র ফুলকপি ও টম্যাটো বেছে নেওয়া হয়েছে? কৃষিকর্তারা জানান, শারদোৎসবের দিনগুলিতে ওই দুটি সব্জির ভাল চাহিদা ভাল থাকে। দাম নিয়েও সমস্যা হয় না। ওই কারণে অন্য কোনও সব্জি নয়, পুজোর বাজারের দিকে তাকিয়ে ফুলকপি ও টম্যাটো চাষের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। |