২০১৪ সালের পুরসভার ভোট আসতে এখনও বছর দুই দেরি, তার আগেই পুরবোর্ডের ‘ব্যর্থতার দায়’ কে নেবে তা নিয়ে তরজা শুরু হল মন্ত্রী-মেয়রের মধ্যে। রবিবার শিলিগুড়ি গার্লস হাইস্কুলে তৃণমূলের পুর কর্মচারি সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “পুরবোর্ডের সময়সীমা ইতিমধ্যে তিন বছর পার হয়ে গিয়েছে। ভোটের ছয় মাস আগে কাজ করলে মানুষ ঠিক ভাবে নেন না। সেক্ষেত্রে হাতে আছে আর মাত্র দেড় বছর সময়। এই সময়ের মধ্যে সঠিক কাজ না হলে তার দায়ভার পুরোপুরি মেয়রকে নিতে হবে। দল জিতলে যেমন ক্যাপ্টেনের কৃতিত্ব। সেরকম হারলে দায়ভার তাকেই নিতেই হয়।” শিলিগুড়ি পুরসভার কংগ্রেসের মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত অবশ্য গৌতমবাবুর যুক্তি মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “কাজ আমরা যথাসাধ্য করছি। ওই অভিযোগ ঠিক নয়। আর বোর্ড ব্যর্থ হলে সে দায়ভার সকলের, আমার একার নয়। পুরসভার অধিকাংশ দফতর তো তৃণমূলের হাতে রয়েছে। সেটা মন্ত্রী জানেন।” |
এ দিনের সভায় মন্ত্রী অভিযোগ করেন, পুরসভা রাজস্ব বাড়ানোর কোনও উদ্যোগ নেননি। কোটি কোটি টাকা কর বকেয়া থাকলেও তা আদায়ে কোনও পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি পুর কর্তৃপক্ষ। ফলে পুরসভার আয় বাড়েনি। এ ছাড়াও দীর্ঘদিন পুরসভার শূন্য পদে কোনও নিয়োগ হচ্ছে না কেন তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, “রাজ্য সরকার যেখানে শূন্য পদে কর্মীদের নিয়োগ করার কথা জানিয়েছে, তাহলে সমস্যা কোথায়? আসলে এটা হচ্ছে অপদার্থতার জন্য। বিভন্ন বিষয় নিয়ে মেয়ররের সঙ্গে বৈঠক করেছি। দুর্ভাগ্যের বিষয় মিটিঙের কোনও সিদ্ধান্তই পালন করা হয়নি।” তাঁর আরও অভিযোগ, পুরসভার ডাম্পিং গ্রাউন্ডের স্থায়ী সমস্যার জন্য সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টে কাজ করার কথা। অথচ কাজ হচ্ছে না। তিনি বলেন, “সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টে নিয়ে ডাম্পিং গ্রাউন্ডের স্থায়ী সমস্যা সমাধানের জন্য মেয়র জার্মানি যান। দ্রুত কাজ করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু বছর ঘুরে গেলেও কোনও কাজ হচ্ছে না।” তিনি অভিযোগ করেন, পুরসভার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে একটি আধুনিক মানের হাসপাতাল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে একটি সংস্থা। তা নিয়েও ঢিলেমি চলছে। শহরের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং বিভিন্ন জায়গায় পথবাতি রাতে না জ্বলা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মন্ত্রী। তিনি সাফাই কর্মীদের পরামর্শ দেন, “আপনারা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে লক্ষ্য রাখুন।” এদিন মন্ত্রী পুরসভার বিরোধী দলনেতার সুযোগ-সুবিধে নিয়েও সরব হন। তিনি বলেন, “মেয়র এবং ডেপুটি মেয়র যে সুবিধে পান, তা বিরোধী দলনেতার পাওয়া উচিত। তাঁর গঠনমূলক প্রস্তাবও পুরসভার গ্রহণ করা উচিত। এতে লজ্জার কিছু নেই। বামফ্রন্টের সময়ে যা হয়েছে তা বজায় রাখা উচিত নয়।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর অভিযোগ ঠিক নয় বলে দাবি করেছেন মেয়র। তিনি বলেন, “সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ অনেকটা এগিয়েছে। শূন্য পদে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। হাসপাতাল তৈরি এগিয়েছে। আর রাজস্ব আদায়ে আমরা অনেকটা ভাল জায়গায় পৌঁছে গিয়েছি।” বিরোধী দলনেতাকে সমস্ত সুবিধে দেওয়া হয় বলে দাবি করেছেন মেয়র। পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের নুরুল ইসলাম বলেন, “উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর বক্তব্যের জন্য তাঁকে ধন্যবাদ। তবে পুরসভার অর্থ কোনওভাবে অপচয় হোক এটা আমরা চাই না।” |