খেলার খবর
হরমপুরের গাঁধী কলোনির রাকেশ বিশ্বাস ৮১ কিমি সাঁতার প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে সুদানের গুয়োর মারিয়ালের কথা ধার করে বলতেই পারতেন‘সাঁতার আবার কোনও খেলা হতে পারে নাকি!’ ট্র্যাকে নামার প্রস্তাব পেয়ে ভিনদেশি স্কুলের অচেনা প্রশিক্ষককে যেমন সুদানের ওই কিশোর বলেছিল“দৌড় আবার কোনও খেলা হতে পারে নাকি! আমার কাছে তো দৌড় মানে জীবন। যত বার দেখেছি মরে যেতে পারি, তত বার শুধু দৌড়ে গিয়েছি। প্রাণ হাতে করে। সেই কাজটাই খেলাচ্ছলে করব কী করে!”
এ দিন জঙ্গিপুরের আহিরন ঘাট থেকে গোরাবাজার ঘাট পর্যন্ত দীর্ঘ ৮১ কিলোমিটার জলপথ পাড়ি শেষে সবার প্রথমে ঘাটে উঠে রাকেশ বলেন, “টায়ার বা টিউবকে ভেলা করে ঘন্টার পর ঘন্টা ভাগীরথীর জলে কাটানোর সেই কোন ছেলেবেলার অভ্যেস। এদিন ৮১ কিলোমিটার সাঁতার দিতে কাজে লেগেছে। এর আগে দু’হাজার সালের বন্যায় বাড়ি-ঘর সব ডুবে যায়। রাতের অন্ধকারে প্রাণ হাতে করে সাঁতরে ঘরের জিনিস একটা একটা করে ডাঙায় তুলেছি। সাঁতার জানি বলেই পাড়া-প্রতিবেশীদের অনেককে জলে ডুবে যাওয়া থেকে প্রাণে বাঁচিয়েছি। এখনও বর্ষায় ফরাক্কা ব্যারেজের জল ছাড়লেই দু’কূল ছাপিয়ে পাড় ছুঁইছুঁই হয়ে ওঠে, তখনও সাঁতারের ভরসায় দিন গুনি।”
মা অনিতা বিশ্বাস অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। যা আয় হয়, তাতেই মা-ছেলে দুজনের সংসার চলে। অভাবের সংসার। তাই পড়াশোনাও জলাঞ্জলি দিতে হয়েছে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পরে বাপুজি পাঠাগার জুনিয়র স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। রাকেশ বলেন, “গত মাস ধরে প্রতি দিন সকাল-সন্ধ্যে ৬ ঘন্টা অনুশীলন করেছি। তাতেই এই সাফল্য।”
বহরমপুর সুইমিং ক্লাবের সদস্য রাকেশ বিশ্বাসের বাড়ি বহরমপুরের ভাগীরথীর পাড় লাগোয়া গাঁধী কলোনিতে। ভাগীরথীর পাশেই বাস করার জন্য খুব ছেলেবেলা থেকেই সখ্য গড়ে ওঠে জলের সঙ্গে। অন্য প্রতিযোগীরা যেখানে স্ট্রেচারে শুয়ে বা অন্যের কাঁধে ভর রেখে গ্রিনরুমে পৌঁছায়, সেখানে ‘ফিনিসিং পয়েন্টে’ পৌঁছে ঘাটের সিঁড়ি পেরিয়ে রাকেশ একাই হেঁটে উঠে আসেন।
২০১১ সালের প্রথম স্থান অধিকারী বহরমপুর সুহৃদ সংঘের চন্দন সরকারকে অবশ্য এবছর দ্বিতীয় হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। কিন্তু সন্তুষ্টির বদলে তার গলায় অবশ্য চাপা অসন্তোষ! অভিমানের সঙ্গে তিনি বলেন, “গত আট বছর ধরে ৮১ কিমি সাঁতার প্রতিযোগিতায় কোনও স্থান পেয়েছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও সরকারি চাকরি জুটল না। বাবা মাস তিনেক আগে মারা যান। ভেবেছিলাম জলেই নামব না। কিন্তু বাবার জন্যই আমার সাঁতারে আসা। বাবা ভীষণ ভাবে চেয়েছিলেন আমি সাঁতারে নাম-ডাক করি। তাই সব হতাশা ঝেড়ে ফেলে বাবার কথা মনে করেই জলে নামি।”
প্রথম ২০০৬ সালে ৮১ কিমিতে নেমেই তৃতীয়, ২০০৭-এ প্রথম, ২০০৮ সালে দ্বিতীয়, ২০০৯ সালে পঞ্চম, ২০১০-এ তৃতীয়, ২০১১ সালে প্রথম স্থান পান চন্দন। তাঁর কথায়, “প্রতি বছর পুরস্কার নিতে উঠলেই মঞ্চে বসে থাকা অতিথিরা আমার চাকরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত চাকরি জোটেনি।” মা শিবানি সরকার বহরমপুর মাতৃসদনে আয়ার কাজ করেন। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট চন্দন নিজের চেষ্টায় উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। বর্তমানে তিনি বেসরকারি কোম্পানির নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করেন। তিনি বলেন, “মাসে ২১০০ টাকা পাই। তাতে সংসার চলে না। চাকরির খুব প্রয়োজন। আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে সাঁতারেও মনোযোগ দিতে পারছি না। তার উপরে রাত জেগে নিরাপত্তারক্ষীর ডিউটি করতে গিয়ে সকালের দিকে অনুশীলনেও যেতে পারি না।”
অন্য দিকে প্রথম বারেই বাজিমাত! বহরমপুর সুহৃদ সংঘের পলাশ বারিক এবছরই ৮১ কিমি সাঁতার প্রতিযোগিতায় প্রথম বার নেমে তৃতীয় হয়েছেন। বহরমপুরের মাজদিয়া এলাকায় তাঁর বাড়ি। এর আগে ২০১১ সালে ১৯ কিমিতে অংশ নেন। কিন্তু ৮১ কিমিতে এই প্রথম বার। তাঁর কথায়, “বাড়িতে বাবা-মা ছাড়াও দুই ভাইবোন রয়েছে। বাবা সুকুমার বারিক মুদিখানার দোকানে কাজ করেন। অভাবের সংসার। তাই পড়াশোনার খরচ চালাতে না পেরে স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দিতে হয়।” বহরমপুর শ্রীগুরু পাঠাশালায় সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পরে ছেদ পড়ে যায় লেখাপড়ায়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.