বাংলার চিরলড়াকু ক্রিকেটার উৎপল চট্টোপাধ্যায়ের কাছে খুব পীড়াদায়ক এই যে, রাজ্যের সিনিয়র দল সম্প্রতি সর্বভারতীয় টুর্নামেন্টগুলোতে খুব ভাল খেললেও বাংলার অনূর্ধ্ব উনিশ টিম এক বছর আগেই প্লেট-এ নেমে গিয়েছিল। “তার মানে আমাদের এখানে সাপ্লাই লাইনে কোথাও বড় ফাঁক রয়েছে,” বললেন তিনি। আর মূলত সেই ‘ফাঁক’ ভরাট করার স্বপ্ন নিয়েই রবিবার দেশবন্ধু পার্কে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘটল উৎপলের ক্রিকেট অ্যাকাডেমির।
উত্তর কলকাতার ঐতিহ্যশালী বিশাল পার্কে পুরোদমে ফুটবল অ্যাকাডেমি চলছে। কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হচ্ছে অত্যাধুনিক সুইমিং কমপ্লেক্স। কিন্তু সিএবি কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে অনুষ্ঠানে যেটা বললেন, সেটাই আদত ব্যাপার। “দক্ষিণ কলকাতায় কিছু ক্রিকেট অ্যাকাডেমি থাকলেও ময়দান থেকে ডানলপ পর্যন্ত তেমন কোনও অ্যাকাডেমি নেই। ডেভিড সেই অভাব এত দিনে মেটাল।”
‘ডেভিড’ বাংলা ক্রিকেটের সর্বকালের সফলতম স্পিনারের (রঞ্জিতে রেকর্ড ৫০৪ উইকেট) জনপ্রিয় ডাকনামের পিছনে তাঁর ক্রিকেটজীবনের গোড়ার দিকে বিখ্যাত অ্যালান ডেভিডসনের স্টাইলে পেস বোলিং করা। চোটের কারণে বাঁ-হাতি স্পিনার হওয়া এবং তাতেই ঘরোয়া ক্রিকেটে কিংবদন্তি। পাশাপাশি খেলাটার প্রতি তাঁর নিষ্ঠা, দায়বদ্ধতা এবং অতি সাদামাঠা জীবনযাপনও বাংলা ক্রিকেটে চিরস্মরণীয়। |
এখনও স্পনসরহীন ‘উৎপল চ্যাটার্জি ক্রিকেট অ্যাকাডেমি’র ছিমছাম কিন্তু আন্তরিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও এ দিন দীপ দাশগুপ্ত থেকে লক্ষ্মীরতন শুক্ল, পি কে বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে রণদেব বসু, বাবলু কোলে থেকে প্রিয়াঙ্কা রায় (ভারতের মেয়ে ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডারকে আলাদা করে সংবর্ধনা দেওয়া হল), মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার সবার বক্তব্যেও সেটা উঠে এল। “উৎপলের অ্যাকাডেমি থেকে যেন তাঁর মতোই দুর্দান্ত ক্রিকেটারের পাশাপাশি তাঁর মতোই ভাল মানুষও তৈরি হয়।”
এ মরসুমে বাংলার অনূর্ধ্ব ষোলো দলের কোচের দায়িত্বে আছেন অতীতে রঞ্জিতে বাংলার কোচ থাকা উৎপল। এও বোধহয় শুধু তাঁর পক্ষেই সম্ভব। বলছিলেন, “কোনও কাজই আমার কাছে ছোট নয়, যদি তার মধ্যে চ্যালেঞ্জ থাকে। লক্ষ্মীরা সরে গেলে, মনোজরা নিয়মিত ইন্ডিয়ার হয়ে খেললে রঞ্জি দলে যে শূন্যতা তৈরি হবে, সেটা ভরাট করার মতো সাপ্লাই লাইন বাংলা ক্রিকেটে নেই। নইলে এক বছর আগে অনূর্ধ্ব উনিশে প্লেট-এ নেমে যেতাম না। আমার অ্যাকাডেমি থেকে যদি দুটো ক্রিকেটারও বাংলাকে দিতে পারি তা হলেও যথেষ্ট।” অন্য অ্যাকাডেমিগুলোর সঙ্গে তফাতও থাকছে উৎপলের অ্যাকাডেমির। “এখানে টেকনিক শেখানোর সমানই গুরুত্ব দেওয়া হবে ক্রিকেটারের মানসিকতা তৈরির ব্যাপারে। দু’জন সমান স্কিলের প্লেয়ারের মধ্যেও কিন্তু বড় ম্যাচে তফাত হয়ে যায় মানসিকতায়। যার ওটায় বেশি জোর থাকে সে মেরে বেরিয়ে যায়,” বললেন উৎপল। তা হলে নিয়মিত মনোবিদ থাকছে আপনার অ্যাকাডেমিতে? “আমিই তো আছি। মানসিকতা তৈরির ব্যাপারটা নিজেই দেখব।” এর চেয়ে সত্যি কথা আর কী হতে পারে বাংলা ক্রিকেটের জন্য! |