|
|
|
|
দুষ্কৃতীদের সঙ্গে ওঠাবসা নয়, কর্মীদের হুঁশিয়ারি সাংসদের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শ্রীরামপুর |
রীতিমতো সভা ডেকে সমাজবিরোধীদের সঙ্গে দলের কিছু নেতা-কর্মীর সংশ্রব ত্যাগ করার হুঁশিয়ারি দিলেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার শ্রীরামপুর বিধানসভা এলাকার নেতা-কর্মীদের নিয়ে ওই সভা হয়। তৃণমূল রাজ্যের ক্ষমতায় এসেছে সবে মাত্র দেড় বছর। এর মধ্যেই দলের একাংশের সঙ্গে দুষ্কৃতীদের ‘ওঠাবসা’ বন্ধ করতে হুঁশিয়ারি দেওয়ার বিষয়টিতে তৃণমূল নেতৃত্বের ‘উদ্বেগ’ স্পষ্ট। একান্তে দলের শীর্ষ নেতারাও অস্বীকার করছেন না সে কথা।
বেশ কিছুদিন ধরেই শ্রীরামপুরে দলের কিছু নেতার ‘কাজকর্ম’ নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠছে। সম্প্রতি শ্রীরামপুর কলেজে সিপি এবং টিএমসিপি-র মধ্যে গোলমাল চলাকালীন ছাত্রদের সঙ্গে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ওঠে শহরের একাধিক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে পুলিশকে জানানো হয় কংগ্রেস নেতৃত্বের তরফে। বিষয়টি জানার পরে সাংসদ সতর্ক করে দেন ওই নেতাদের। কয়েক দিন আগে খুনে অভিযুক্ত এক দুষ্কৃতীকে পুলিশ গ্রেফতার করার খবর পেয়ে থানায় চলে যান শ্রীরামপুর শহর তৃণমূলের এক পদস্থ নেতা। ওই দুষ্কৃতীকে ছেড়ে দেওয়ার আর্জি নিয়ে রাতভর থানায় কার্যত ‘ধরনা’ দেন তিনি। এ ক্ষেত্রেও পুলিশের কাছে বিষয়টি জেনে কড়া প্রতিক্রিয়া জানান কল্যাণবাবু। তিনি দলের ওই নেতাকে থানা থেকে বের করে দিতে বলেন পুলিশকে। দুষ্কৃতীকে ছাড়াতে তৃণমূল নেতার থানায় যাওয়ার বিষয়টি মুখে-মুখে ছড়িয়ে পড়ে। দলের অন্দরেও এই নিয়ে চাপান-উতোর শুরু হয়।
এর পরেই দলের ‘ভাবমূতি’ নিয়ে ‘উদ্বিগ্ন’ তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে কর্মিসভা ডাকা হয়। শনিবার সন্ধ্যায় ওই বৈঠক হয় শহরের টাউন হলে। বৈঠকে সাংসদ কল্যাণবাবু, বিধায়ক সুদীপ্ত রায়, দলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত, কার্যকরী সভাপতি দিলীপ যাদবের পাশাপাশি ছিলেন শ্রীরামপুর ও রিষড়ার পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায় ও শঙ্করপ্রসাদ সাউ। এ ছাড়াও ছিলেন চুঁচুড়ার বিধায়ক তপন মজুমদার।
তৃণমূল শিবিরের খবর, বক্তব্য রাখতে গিয়ে কল্যাণবাবু স্পষ্টই বলেন, ‘মস্তান’দের সঙ্গে যোগাযোগ যাঁরা রাখছেন, তাঁরা দলে থাকতে পারবেন না। দল থেকে তাঁদের বের করে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, “আমার কাছে অনেক অভিযোগ আসছে। থানায় গিয়ে দালালি করবেন না। পুলিশের কাজ পুলিশকে করতে দিন। মস্তানকে ছাড়াতে থানায় যাবেন না। কলেজের গোলমাল ছাত্র নেতাদের মেটতে দিন। তেমন হলে দলীয় নেতৃত্বকে জানান। তাঁরাই ঠিক করে দেবেন, গোলমাল সামাল দিতে কে যাবে।” দুষ্কৃতীদের সঙ্গে দলের একাংশের কর্মীদের সংস্রব ত্যাগ করার কথা বলেন চিকিৎসক-বিধায়ক সুদীপ্তবাবুও। গোষ্ঠী রাজনীতি নিয়েও সরব হন তিনি। অন্য দিকে, পুরসভার কাজকর্ম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন আইনজীবী-সাংসদ কল্যাণবাবু। পুরপ্রধান অমিয়বাবু ওই মন্তব্যের বিরোধীতা করেন।
প্রসঙ্গত, ক্ষমতায় আসার আগে সিপিএমের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সমাজবিরোধীদের ‘দহরম-মহরম’ নিয়ে বরাবরই সরব থেকেছেন তৃণমূলের লোকজন। জেলায়-জেলায় সিপিএমের নেতাদের ‘পুলিশকে কাজে লাগানো’ নিয়েও তৃণমূলের দীর্ঘদিনের অভিযোগ। ক্ষমতায় এসেই ওই সমস্ত বিষয়ে কড়া সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘দুষ্কৃতীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা দল বরদাস্ত করবে না’ বলে জানানো হয়। ‘পুলিশের কাজেও কোনও নেতার হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করা হবে না’ বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু রাজ্যের ‘সিংহাসনে’ বসার পর থেকেই সিপিএমের বিরুদ্ধে ওঠা এত দিনের অভিযোগ দলেরই একাংশ নেতার নামে উঠতে থাকায় তৃণমূল নেতৃত্ব যথেষ্ট ‘বিরম্বনায়’ পড়ছে।
তৃণমূল সূত্রেই খবর, শ্রীরামপুর, রিষড়া, উত্তরপাড়া থানা এলাকায় অনেক সমাজবিরোধী সরাসরি প্রোমোটারি ব্যবসায় যুক্ত হয়ে পড়ছে। প্রোমোটারির পাশাপাশি ইমারতি ব্যবসায় নেমে পড়ছে তারা। দলেরই একাংশের মদতে এই দুষ্কৃতীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। রিষড়ার কুখ্যাত দুষ্কৃতী লেবু কয়েক দিন আগে গুলিতে খুন হয়। লেবুর স্ত্রী জেলা মহিলা তৃণমূলের নেত্রী। বিভিন্ন মাপের তৃণমূল নেতাদের কাছেও অবারিত দ্বার ছিল লেবুর। কিছু দিন আগে লেবু গ্রেফতার হওয়ার সময়েও তাকে ছেড়ে দেওয়ার দাবিতে তৃণমূলের নানা মহলের ‘অনুরোধ’ এসেছিল পুলিশের কাছে।
এই অবস্থায় শুধু বৈঠক আর হুঁশিয়ারি দিয়ে পরিস্থিতি কতটা সামাল দেওয়া যাবে, সে প্রশ্ন কিন্তু থাকছেই। |
|
|
|
|
|