|
|
|
|
|
কেএমডিএ-পঞ্চায়েত সমিতি দ্বন্দ্বে
পাঁচলায়
জলপ্রকল্প বন্ধ হওয়ার মুখে
নুরুল আবসার • পাঁচলা |
|
কথা ছিল বাড়ি বাড়ি জলের সংযোগ দেওয়া হবে। কিন্তু তা আর হয়নি। উল্টে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যেতে বসেছে হাওড়ার পাঁচলার জলপ্রকল্প। এটি চালু হয় বছর দুই আগে। রাস্তার ধারে স্ট্যান্ড-পোস্ট মারফত গ্রামবাসীদের জল দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পাইপলাইন, পাম্প এবং স্ট্যান্ড পোস্টগুলির দেখভাল হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
এটি তৈরি করেছে কেএমডিএ। তাদের বক্তব্য, জলপ্রকল্পটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিতে হবে পাঁচলা পঞ্চায়েত সমিতিকে। অন্য দিকে পঞ্চায়েত সমিতির পাল্টা বক্তব্য, বাড়ি বাড়ি জল সংযোগের ব্যবস্থা যতদিন না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত এর দায়িত্ব তারা নেবে না। বাসিন্দাদের আশঙ্কা, এই টানাপোড়েন চলতে থাকলে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জলপ্রকল্পটি শেষ পর্যন্ত বন্ধই হয়ে যাবে।
পাঁচলা ও চড়া পাঁচলা এই দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতে এলাকায় জল সরবরাহ করার জন্যই প্রকল্পটি তৈরি করে কেএমডিএ। ২০১১ সালের গোড়ায় এটি চালু করা হয়। দু’টি পাম্পের সাহায্যে জল সরবরাহ করা হচ্ছে। পাম্প অপারেটরের বেতন অবশ্য দেয় কেএমডিএ। কিন্তু চালু হওয়ার পর থেকে পাইপলাইন বা স্ট্যান্ড পোস্ট-এর রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ।
যে জমির উপরে প্রকল্পটি তৈরি হয়েছে সেখানেই কেএমডিএ সাতের দশকের একটি জলপ্রকল্প তৈরি করেছিল। তাতেও বাড়ি বাড়ি জলের সংযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল বলে কেএমডিএ সূত্রের খবর। কিন্তু পরীক্ষামূলকভাবে প্রকল্পটি চালু করার সঙ্গে সঙ্গে পাইপলাইনগুলি ফেটে যাওয়ায় প্রকল্পটি পরিত্যক্ত হয়। ২০০০ সালের গোড়া থেকে ফের এখানে একটি নতুন জলপ্রকল্প তৈরির জন্য পাঁচলা পঞ্চায়েত সমিতির তৎকালীন কর্তারা কেএমডিএ-এর কাছে তব্দির করেন। দাবি মেনে নতুন প্রকল্পটি চালু করে কেএমডিএ। খরচ হয় প্রায় দেড় কোটি টাকা।
এই প্রকল্পেও বাড়ি বাড়ি জলের সংযোগ দেওয়ার কথা থাকলেও স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেন, রাস্তার ধারে স্ট্যান্ড-পোস্ট বসাতে হবে। তা থেকে যে জল পাওয়া যাবে সেই জল তাঁরা ব্যবহার করবেন। কেএমডিএ-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল প্রকল্পটি যেহেতু বাড়ি বাড়ি জলের সংযোগ দেওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে তাই এতে স্ট্যান্ড-পোস্ট তৈরির কোনও সংস্থান রাখা হয়নি।
শেষ পর্যন্ত তৎকালীন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের হস্তক্ষেপে গ্রামবাসীদের দাবি মেনে স্ট্যান্ড-পোস্ট তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় কেএমডিএ। রাস্তার ধারে মোট ৭০টি স্ট্যান্ড পোস্ট তৈরি হয়েছে। সেইসব স্ট্যান্ড পোস্ট থেকেই আপাতত দু’টি পাম্প-এর সাহায্যে জল সরবরাহ হচ্ছে।
কেএমডিএ সূত্রের খবর, অন্তত ১০টি জায়গায় পাইপলাইনগুলিতে ফুটো হয়ে গিয়েছে। সেখান থেকে জল বেরিয়ে যাওয়ায় স্ট্যান্ড পোস্ট পর্যন্ত অনেক জায়গাতেই জল যাচ্ছে না। অনেক স্ট্যান্ড-পোস্ট ভেঙে গিয়েছে। প্রায় পনের দিন ধরে একটি পাম্প বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। তা মেরামত করা হচ্ছে না।
কেএমডিএ-এর এক কর্তার দাবি, পঞ্চায়েত সমিতিকে বার বার জানানো হয়েছে প্রকল্পটির দায়িত্ব নেওয়ার জন্য। তারা এটির দায়িত্ব না-নেওয়ার ফলেই প্রকল্পটির সুষ্ঠভাবে রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না। পঞ্চায়েত সমিতিকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। পঞ্চায়েত সমিতি অবশ্য প্রকল্পটির দায়িত্ব নিতে রাজি হলেও কিছু শর্ত দিয়েছে। সমিতির বক্তব্য: প্রকল্পটি চালাতে বহু টাকা খরচ হবে। বাড়ি বাড়ি জলের সংযোগের ব্যবস্থা হলে জলকর বসিয়ে সেই খরচ তোলা যেত। কিন্তু তা না-হওয়ায় এটি চালাতে যে টাকার দরকার তার সংস্থান আপাতত তাদের কাছে নেই।
পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুশীল অধিকারী বলেন, “বিষয়টি নিয়ে জেলা পরিষদ এবং কেএমডিএ-এর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ঠিক হয়েছে বাড়ি বাড়ি জলের সংযোগ দেওয়ার জন্য কত টাকার দরকার তার বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করে তা পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর এবং পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরে পাঠানো হবে। টাকার সংস্থান হলে বাড়ি বাড়ি জলের সংযোগ দিয়ে তবেই সমিতির পক্ষ থেকে প্রকল্পটির দায়িত্ব নেওয়া হবে। আমরা আপাতত বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করছি।” |
|
|
|
|
|