বিধানসভায় ৬০টি আসনের জন্য লড়তে চেয়ে মেঘালয় কংগ্রেসের ১৪৯ জন টিকিট প্রত্যাশী মনোনয়নের ফর্ম তুললেন। ভোটে দাঁড়াতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী সিরা সাংমাও। পূর্ণ সাংমা এনসিপি ভেঙে দেওয়ায় রাজ্যে বিরোধী ভিতও নড়বড়ে। অনেকটাই অনুকুল পরিস্থিতিতে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে কোনও দলের সঙ্গেই প্রাক্ নির্বাচনী জোট গড়তে চাইছেন না মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা। তাঁর আশা, রাজ্যের ইতিহাসে দ্বিতীয়বার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জিততে পারবে কংগ্রেস।
১৯৭২ সালে, প্রথমবার অল পার্টি হিল লিডারস কনফারেন্সের প্রধান ক্যাপ্টেন ডব্লিউ এ সাংমা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জিতেছিলেন। এরপর, গত চার দশকে আর কোনও দল মেঘালয় নিরঙ্কুশভাবে ক্ষমতা দখল করতে পারে নি। ডব্লিউ এ সাংমা ও কংগ্রেস নেতা এস সি মারাক ছাড়া অন্য কোনও মুখ্যমন্ত্রী পুরো পাঁচবছর টিঁকতেও পারেন নি। ৪০ বছরের রাজ্য ইতিমধ্যেই ২১টি সরকার দেখেছে। ১১ জন মুখ্যমন্ত্রী ২৫ বার শপথ নিয়েছেন। রাজ্যের রাজনৈতির অস্থিরতার ঐতিহ্য এতেই পরিষ্কার হয়ে যায়।
৬০ সদস্যের বিধানসভায় কংগ্রেস বিধায়কের সংখ্যা ২৮। প্রধান বিরোধী দল এনসিপির ১৪ জন বিধায়ক ছিল। শরিক ইউডিপির হাতে রয়েছেন ১১ জন বিধায়ক। সামনে বছরের শুরুতেই বিধানসভা নির্বাচন। বর্তমান বিধায়করা-সহ ২০জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দিয়েছিল এনসিপি। এই অবস্থায়, ১২ জন বিধায়ককে এক ধাক্কায় এনপিপি দলে টেনে এনসিপিকে কার্যত ক্ষমতাহীন করে দিয়েছেন পূর্ণ। রাষ্ট্রপতি হওয়ার দৌড়ে, রাজ্যের শাসকজোটের শরিক ইউডিপিকে সঙ্গে পেয়েছিলেন পূর্ণ। পরের নির্বাচনে ইউডিপি, খানামকে সঙ্গে নিয়ে, কংগ্রেসকে হারিয়ে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা তো করবেনই, দলীয় সূত্রে খবর, হাতে থাকা বিধায়কদের গণ-পদত্যাগ করিয়ে এই বছরের শেষদিকে ভোট করাবার চেষ্টাও করতে পারেন সাংমা।
এই পরিস্থিতিতে, রাজ্য এনসিপি নেতা রবার্ট খারসিং বলেন, “পূর্ণকে মুখের মতো জবাব দিতে,আসন্ন নির্বাচনে কেন্দ্র ও মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যেও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধব আমরা। এর আগেও একাধিকবার, এনসিপি-কংগ্রেস জোট গড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু পূর্ণ সাংমার জন্য সব ভেস্তে যায়। ইতিমধ্যে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ডি ডি লাপাং-এর সঙ্গে জোট গড়া নিয়ে কথা হয়েছে। এইবার আমি নিজে মুকুল সাংমার সঙ্গে কথা বলব।” সংবিধানের ১০ নম্বর ধারা অনুযায়ী, দলত্যাগী ১২ জন সদস্যের বিধায়কপদ খারিজ করার জন্য, ইতিমধ্যেই স্পিকার চার্লস পাইরংপের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন এনসিপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক ডি পি ত্রিপাঠী।
পূর্ণ সাংমার হাতে দুই বার পরাজিত মুকুল সাংমা অবশ্য অত হিসেব-নিকেশে যেতে চাইছেন না। দলের ভিতরে কাদা ছোঁড়াছুড়ি, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব চললেও মুকুলের দাবি, “এইবার কাউকে সঙ্গে চাই না। একাই লড়ে সরকার গড়বে কংগ্রেস।” মহারাষ্ট্র বা কেন্দ্রে জোট শরিক হলেও রাজ্যে ক্ষমতাহীন এনসিপিকে জোট হিসাবে চান না, তা দিল্লিকেও জানিয়ে দিয়েছেন মুকুল। তাঁর কথায়, “জোট সরকার হলেই, শরিক ও দলের নেতাদের তুষ্ট করতে, সব পক্ষের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে, রাজনৈতিক কাঠামোই দুর্বল হয়ে পড়ে। শক্ত হাতে রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করা, রাজ্যের বিকাশে মন দেওয়া সম্ভব হয় না। মেঘালয়ের উন্নতির জন্য এখন একক সরকারই ভরসা।” তা হলে কী নির্বাচনের পরেও জোট গড়ার পথে হাঁটবে না কংগ্রেস? মুকুলের ইচ্ছা তাই। রাজ্যবাসীকে খুশি করতে, এক মাসে, চারটি নতুন জেলার উদ্বোধন করেছেন তিনি। |