গত ২৪ ঘণ্টায় দু’টি বিক্ষিপ্ত আক্রমণের ঘটনা ও সহকর্মীর গুলিতে এক পুলিশের মৃত্যুর ঘটনা বাদে, নিম্ন অসম ও বড়োভূমি মোটের উপর শান্তই ছিল। তবে উজানি অসমেও ‘বিদেশি বহিষ্কার’ নিয়ে আন্দোলনে শুরু হয়েছে, যার পুরোভাগে রয়েছে আলোচনাপন্থী আলফা। ফের অস্ত্র তুলে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছে তারা।
আজ কোকরাঝাড়ের বিজুলিবাড়ি ও ধুবুরির কাজিগঞ্জে দু’টি হামলার খবর আসে। বেলা ১১টা নাগাদ কোকরাঝাড় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের নির্মাণ কাজে যুক্ত বিসার বরগয়ারি নামে এক শ্রমিকের উপরে চড়াও হয় সামরিক পোশাক পরা চার সশস্ত্র দুষ্কৃতী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একটি গাড়িতে চার জন এসেছিল। রূপনাথ ব্রহ্ম হাসপাতালে ভর্তি থাকা ওই শ্রমিক জানান, এক জন তার মাথায় পিস্তল তাক করে প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে চলে যায়। ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ। পাশাপাশি, ধুবুরির কাজিগঞ্জে দুষ্কৃতীরা একটি গ্রামে গুলি চালালে চার জন জখম হয়েছেন।
এর মধ্যেই কোকরাঝাড়ে আইন শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা দুই পুলিশ নিজেদের মধ্যে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। এক জনের গুলিতে অন্য জনের মৃত্যু হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, গত কাল রাতে মদ্যপ অবস্থায় সুরেন্দ্রকুমার রাই ও সেফাংগুড়ি থানার হাবিলদার সুকোমল রায় ঝগড়া করছিলেন। আচমকাই নিজের সার্ভিস রিভলভার থেকে গুলি চালান সুরেন্দ্র। দু’টি গুলি লাগে সুকোমলবাবুর বুকে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। গ্রেফতার হওয়ার পরে, সুরেন্দ্রবাবু অবশ্য দাবি করেন, রিভলভার থেকে গুলি ছুটে গিয়েছে। এটি নিছক দুর্ঘটনা। বড়োভূমি ও নামনি অসমের শিবিরগুলি থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪২৩৯ জন গ্রামে ফিরলেও ফের বিভিন্ন গ্রাম থেকে শিবিরে লোক আসা শুরু হয়েছে। সরকারি সূত্রে খবর, ৩১ অগস্ট ২১৬টি শিবিরে ছিলেন মোট ২,৪০,০৯০ জন। গত কাল ২১৮টি শিবিরে ২,৪২,৩৪৩ জন শরণার্থী ছিলেন। আজ সব মিলিয়ে ২১৯টি ত্রাণ শিবিরে শরণার্থীর সংখ্যা ২,৪৬,৫৮২ ছুঁয়েছে।
নিম্ন অসমে গোষ্ঠী সংঘর্ষ চলাকালীনই উজানি অসমেও বিদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু হয়েছে। দিন কয়েক আগে যোরহাটে বিদেশি বহিষ্কার নিয়ে মিছিল বের হয়েছিল। আজ স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ পেয়ে, যোরহাটের কাকজান এলাকা থেকে তিন জন সন্দেহভাজন বাংলাদেশিকে আটক করে পুলিশ। কাকজান এলাকার তিনসুকিয়ায় আলোচনাপন্থী আলফা নেতা জিতেন দত্ত, প্রবাল নেওগ, অন্তু চাওদাংদের নেতৃত্বে অনুপ্রবেশ-বিরোধী যৌথ মঞ্চ গড়া হল। আজ মঞ্চের তরফে জিতেন দত্ত এআইইউডিএফ ও আমসু সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলেন। আজ, আলফা ছাড়াও, বিদেশি বিতাড়ন নিয়ে বৈঠকে স্থানীয় ব্যবসায়ী, প্রবীণ নাগরিক, শিক্ষাবিদ ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
যৌথ মঞ্চের তরফে, তিনসুকিয়ার জেলাশাসক মীনাক্ষি সুন্দরমকে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। জিতেন বলেন, “আমাদের কাছে খবর আছে, বড়োভূমিতে ঝামেলার পরে প্রচুর বাংলাদেশি অসমের অন্যান্য এলাকায় পালিয়ে গিয়েছে। সব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, কারখানা মালিক, নির্মান সংস্থার মালিক, ইট ভাটার মালিকদের অনুরোধ অনুপ্রবেশকারীদের কাজে রাখবেন না।” আলফার অন্য এক কম্যান্ডার প্রবাল নেওগ বলেন, “অসমিয়াদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই অস্ত্র হাতে নিয়েছিলাম আমরা। প্রয়োজনে আবার নেব।” সংগ্রামপন্থী সেনাধ্যক্ষ পরেশ বরুয়াকে এক হাত নিয়ে জিতেন বলেন, “আইএসআই-এর হাতের পুতুল হয়ে গিয়েছেন পরেশ। তাই বড়োভূমির অনুপ্রবেশ সমস্যা নিয়ে তিনি চুপ।” |